আদনান আল রাজীব: নির্দিষ্ট ছকে নিজেকে বেঁধে রাখতে যার প্রবল আপত্তি
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

মধ্যবিত্তের জীবন বাস্তবতা যেমন আদনানের নাটকে উঠে এসেছে, তেমনই তিনি কাজ করতে চান রোমান্টিক থ্রিলার নিয়েও। কমেডিতে তার আপত্তি নেই, ইমোশনাল ফ্যামিলি ড্রামার জায়গাটাও তিনি পরখ করে দেখতে চান। সেজন্যেই হয়তো নিজের প্রথম ওয়েব ফিল্মের টপিক হিসেবে আদনান বেছে নিয়েছেন স্যাটায়ার কমেডির মতো কঠিন একটা জনরাকে...
নাটক বানিয়েছেন অল্প কয়েকটা। গত দশকের সেরা টিভি নাটকের লিস্ট করতে বসলে তার নির্মিত '@১৮ অলটাইম দৌড়ের ওপর', 'মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট', আর 'বিকেল বেলার পাখি' নাটকগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় কোনোভাবেই। আদনান আল রাজীব কেন শুধু বিজ্ঞাপনই বানান, কেন তিনি নাটকে নিয়মিত নন, কেন তিনি সিনেমা পরিচালনায় নাম লেখান না, এসব প্রশ্ন অনেক পুরনো।
আদনানের কাছেও অজস্রবার ছুটে গেছে সেই প্রশ্নবাণ। তিনি সোজাসাপ্টা জবাব দিয়েছেন, নিজের চাহিদামতো বাজেট এখানে পাওয়া যায় না, সময়ের টানাটানি থাকে, শান্তিমতো কাজটা করা যায় না, তাহলে কেন তিনি ফিকশন বানাবেন? এরচেয়ে তো কয়েক সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনই ভালো। আদনান ফিকশন বানাতে চান, বানাতে ভালোবাসেন, কিন্তু এতসব সমস্যা, এসব জটিলতা তাকে বড় প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে বারবার।
কিন্তু বাজেট পেলে, জটিলতাবিহীন সিস্টেমেটিক উপায়ে কাজটা এগিয়ে নেয়ার গ্যারান্টি পেলে আদনান নিয়মিত নাটক বানাতে চান, সিনেমা বানানোতেও তার আপত্তি নেই। এমনকি শাকিব খান বা আরিফিন শুভকে কাস্ট করতেও তিনি দ্বিধা করবেন না, যদি তারা ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হয়ে তার ভিশনটা ধরতে পারেন।

আদনানের হাতে অন্তত দুটো স্ক্রিপ্ট রেডি আছে অনেক আগে থেকেই, মার্কেট ঠিকঠাক থাকলে, আর ভালো প্রোডিউসার পেলেই প্ল্যান করে কাজে নেমে পড়ার টার্গেট ছিল তার। এই কথাগুলো আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বলেছিলেন আদনান, পাঁচটা বছর পেরিয়ে গেছে, মার্কেট ঠিক হয়নি, অন্যান্য সমস্যারও সমাধান হয়নি, আদনানও কাজে নামতে পারেননি।
সিনেমায় না এলেও, আস্ত একটা ওয়েব ফিল্ম তিনি বানিয়ে ফেলেছেন। 'ইউটিউমার' নামের স্যাটায়ারধর্মী সেই ফিল্ম রিলিজ পাবে আজ। স্যাটায়ার শব্দটার মানেই যে দেশের বেশিরভাগ দর্শক ঠিকঠাক জানে না, সেখানে স্যাটায়ার কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণই বলা যায়। তার ওপর বাংলা ওয়েব কন্টেন্ট মানেই যেখানে থ্রিলারের রমরমা মেলা, সেখানে স্যাটায়ার কমেডি'র মতো একটা কঠিন জনরা বেছে নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং কাজ বটে। প্রথম আলোয় আদনানের বক্তব্য পড়লাম, তিনি বলেছেন-
‘আমি কখনো স্রোতে ভাসি না। এমন না যে আমাকে থ্রিলারই বানাতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন আমি এই গল্প নির্মাণ করলাম? কাজের জন্য আমরা কিন্তু আশপাশের দেশ, বিশেষ করে ভারতের ইন্ডাস্ট্রিকে অনেকটাই ফলো করি। সেখানে “সেক্রেড গেমস” বা “মির্জাপুর” যখন জনপ্রিয় হয়, তখন আমাদের অনেকেই ধরেই নেয় ওয়েব কনটেন্ট মানেই থ্রিলার জাতীয় কিছু একটা হতে হবে। আশপাশে যা হচ্ছে, সেই স্রোতেই ভাসতে হবে, এটাতে আমি বিশ্বাসী নই। সততার জায়গা থেকে কাজটি করতে পারলে শুধু থ্রিলার নয়, যেকোনো জনরাই দর্শক দেখবেন।’

আদনান এই ঝুঁকিটা নিয়েছেন, কারণ নির্দিষ্ট কোন প্যাটার্নে আবদ্ধ থাকতে তিনি রাজী নন। মধ্যবিত্তের জীবন বাস্তবতা যেমন তার নাটকে উঠে এসেছে, তেমনই তিনি কাজ করতে চান রোমান্টিক থ্রিলার নিয়েও। কমেডিতে তার আপত্তি নেই, ইমোশনাল ফ্যামিলি ড্রামার জায়গাটাও তিনি পরখ করে দেখতে চান। আদনান শুধু থ্রিলার বানান, আদনান শুধু রোমান্টিক গল্পে কাজ করেন, কিংবা ফ্যামিলি ড্রামা ছাড়া আর কিছু তো আদনান পারে না- এমন ট্যাগ নিজের গায়ে লাগানোতে তার বড্ড আপত্তি।
কন্টেন্ট হিসেবে ইউটিউমার অনেকেরই পছন্দ না হতে পারে। সেটা রিলিজের পরই বোঝা যাবে। তবে আদনান নিজের কন্টেন্টের আলোচনা আর সমালোচনা, উভয়কেই দারুণ এপ্রেশিয়েট করেন। তার কথা হচ্ছে, "সমালোচনায় আমার কোন সমস্যা নাই, ভালই তো হবে এটা। কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবেই। আর আমি আসলে কোন কিছু দিয়েই সবাইকে কখনও খুশি করতে পারব না। না ভাল লাগলে নাই, আই ফেইলড।"
জোর করে নিজের কন্টেন্টকে মাস্টারপিস বানানোর আগ্রহ তার নেই, মুক্তির পর দর্শকের সমালোচনার মুখে 'এই কন্টেন্ট সবার জন্য নয়' টাইপের বুলিও তিনি ছুঁড়তে চান না। তার নির্মাণ দর্শকদের পছন্দ হলে যেমন প্রশংসাটা তিনি হাসিমুখে গ্রহণ করবেন, দর্শকের কাছে তার কাজ ভালো না লাগলে সেই নিন্দাটাও তিনি মাথা পেতে নিতে রাজী। নিজের ব্যর্থতাকে এমন সহজভাবে গ্রহণ করাটাও বিশেষ একটা গুণ। সেটা আদনান আল রাজীবের আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে, এমনটাই চাই।