লাক্স সুন্দরী হয়ে বিনোদন জগতে আগমন, প্রথম সিনেমা দারুচিনি দ্বীপেই তাক লাগিয়েছিলেন, মাহাদীর 'সুনীল বরুণা' গানের মডেল হয়ে পেয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয়তা। সুনীলের বরুণা অভিমান ভেঙে ঘরে ফিরে এসেছিলেন, রিল লাইফের বরুণা আফসান আরা বিন্দু অভিমান ভেঙে অভিনয়ে ফিরবেন কি?

তুমি বরুণা হলে হব আমি সুনীল/ 
তুমি আকাশ হলে হব শঙখচিল/ 
তুমি নদী হলে হব আমি জল/ 
তুমি শ্রাবণ হলে হব শ্রাবণঢল!

মাহাদীর গাওয়া এই গানে অভিমানী বরুণা হয়ে দর্শকদের মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন, তিনিই হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত চরিত্র লীলাবতী, প্রথার বাইরে গিয়ে ছড়িয়েছিলেন উজ্জ্বলতা। কিংবা দারুচিনি দ্বীপের আনুশকা, আধুনিকা যে তার ছেলে বন্ধুদের সাথে সমুদ্রে ঘুরতে যেতে চায়! 

২০০৬ সাল, লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরীতমা রিয়েলিটি শোর প্রতিপাদ্য ছিল 'দারুচিনের দ্বীপের নায়িকা খুঁজছি', বলা হয় এই বছর ছিল সবচেয়ে বেশি প্রতিভাদের উন্মোচন। সেরা দশে আসা প্রায় সবাই নিজ গুণে প্রতিষ্ঠিত, তাদের মাঝে যাকে নিয়ে বেশি আলোচনা হতো। তরুণদের মধ্যে বেশি আকর্ষণ কেড়েছিলেন তিনি 'আফসানা আরা বিন্দু', চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলেও প্রথম রানারআপ হয়েছিলেন। তার হাসির মুগ্ধতার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র।

তখনকার সময়ে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। বাণিজ্য বিভাগ থেকেই এটা অর্জন করেছিলেনমেধাবী ছাত্রী বিন্দু, ভর্তি হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে অভিনয়। স্বাভাবিকভাবেই  দারুচিনি দ্বীপের দ্বিতীয় নায়িকা, তবে আলো ছড়ালেন ঠিকই। বেশি বাজিমাৎ করলেন মাহাদীর গাওয়া 'তুমি বরুনা হলে' গানের মডেল হয়ে, রাতারাতি তরুণদের পছন্দের তারকায় পরিনত হয়েছিলেন। 

আরেফিন শুভ র সঙ্গে ক্লোজআপ, বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন, হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ধারাবাহিক 'লীলাবতী' করে অভিনেত্রী হিসেবে আসন পাকা করেছিলেন, দর্শক জরিপে মনোনয়ন অব্দি পেয়েছিলেন। সেইসঙ্গে জাগো সিনেমা এমনকি বানিজ্যিক ধারার ছবি 'পিরিতির আগুন জ্বলে দ্বিগুণ' ছবিও করেছেন। 

আফসান আরা বিন্দু

'আমি তোমার মনের ভিতর একবার ঘুরে আসতে চাই' খ্যাত 'এই তো প্রেম' সিনেমায় শাকিব খানের নায়িকা তখন রীতিমত আকাশের নক্ষত্র হয়ে উঠলেন, সঙ্গে পাটিগণিত, ব্রেকিং নিউজ, ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল, ভালোবাসি তাই, বিবাহত্তোর সংবর্ধনা, শখের গাড়ী, সোনালী কলম, অনাকাঙ্ক্ষিত, তৃতীয়জন, মেঘ, বৃষ্টি কাল কাঁদবে, দেখা হবে ভালোবাসায় বেদনায়- ক্রমশ নাটকের সংখ্যাও বাড়তে লাগলো। অনেকেই বলতে লাগলো,তিশার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজের নামটি বসিয়ে নিচ্ছেন ভালোভাবেই। অভিনয়ে খুঁত ছিল, তবে বিন্দুর মধ্যে চেষ্টা ছিল সফল হবার।

কিন্তু বিধিবাম, এই আলোচনা, ব্যস্ততা সইলো না। ভালোবাসার  মানুষের কাছে প্রত্যাখাত হওয়া, গুজব, এমনকি যেসব নির্মাতারা তাকে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত করতেন তারাও ক্রমশ এড়িয়ে যাওয়া শুরু করলো। ফলে বাছবিচারহীন ভাবেই নাটকে অভিনয় করা শুরু করলেন, শহর কিংবা মধ্যবিত্তের আধুনিকা কন্যা, রোমান্টিক নাটক করে খ্যাত এই অভিনেত্রি গ্রাম্যধারার নাটক শুরু করলেন। কিন্তু দেখলেন দর্শকরা তাকে এই রুপে পছন্দ করছে না, ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিলেন অভিনয়ের জগত থেকে। 

ব্যক্তিগত জীবনে অভিনয় বাদ দিয়ে সংসারে থিতু হবার জন্য বিয়ে করলেন কিন্তু সেখানেও লেগেছিল বিচ্ছেদের হাওয়া। এখন একাই আছেন নিজের সংসারে।

সুনীলের বরুণা অভিমান ভেঙ্গে ঘরে ফিরে এসেছিলেন, রিল লাইফের বরুণা আফসান আরা বিন্দু অভিমান ভেঙ্গে অভিনয়ে ফিরবেন কিনা জানি না। তবে সব সময়ের জন্য শুভকামনা রইলো। শুভ জন্মদিন, বিন্দু। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা