আফজাল হোসেন: টিভি নাটকের প্রথম সুপারস্টার অভিনেতা
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

আমাদের টিভি নাটকে প্রথম সুপারস্টার অভিনেতা আফজাল। যিনি দেখিয়েছিলেন, টিভি নাটকের অভিনেতারাও ব্যক্তিত্ব আর আভিজাত্যে সিনেমার নায়কদের চেয়ে কম নন। তরুণদের জন্য যেমন ছিলেন ফ্যাশন আউডল, তেমনই তরুণীদের স্বপ্নপুরুষ...
টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় তারকাদের সঙ্গে সুপারস্টার শব্দটা যায় কিনা জানি না, যদি যায় তাহলে আমাদের টিভি নাটকে প্রথম সুপারস্টার অভিনেতা তিনি। যিনি কিনা দেখিয়েছিলেন, টিভি নাটকের অভিনেতারাও ব্যক্তিত্ব আর আভিজাত্যে কম নন। তরুণদের জন্য যেমন ছিলেন ফ্যাশন আউডল, তেমনই তরুণীদের স্বপ্নপুরুষ। যার খ্যাতি, দ্যুতি দুটোই এগিয়েছিল সমানতালে।
রোমান্টিক নাটকের জন্য তিনি ছিলেন অগ্রপথিক, যার পথ ধরে পরবর্তীতে অনেকেই জনপ্রিয় হয়েছেন। অভিনয় ও চরিত্রের জন্য বাংলা নাটকের ভালো ছেলে হিসেবে ছিল যার পরিচিতি, তিনি আর কেউ নন চিরসবুজ অভিনেতা আফজাল হোসেন।
ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র, চিত্রশিল্পী। সত্তরের দশকে টিভি নাটক তখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। আফজাল যখন কাজ শুরু করেন তখন বিটিভির কেন্দ্রে অনেক বিখ্যাত অভিনেতাদের আনাগোনা, যারা মঞ্চ আর চলচ্চিত্রের অন্যতম দিকপাল। তিনি নিজেও ঢাকা থিয়েটারের সক্রিয় সদস্য হয়েছেন পরে। আফজাল টিভি নাটকে এলেন। অভিনয়ের পারদর্শিতায় অন্যদের থেকে সুনজরে আসা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন ব্যাপার ছিল, তবে তিনি আলাদা আবেদন গড়ে তোলেন উনার ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য নিয়ে।

এখন মধ্য বয়স পেরোনো মহিলাদের জিজ্ঞাসা করলে পাওয়া যায় সেই সময়ে আফজাল হোসেনের ক্রেজ। 'পারলে না রুমকি' নাটকের পর ক্যারিয়ারে লাগে বসন্তের হাওয়া, সঙ্গে গড়ে ওঠে সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে জুটি। যেই জুটি আজও সেরা জুটি হিসেবে জায়গা দখল করে আছে। শহুরে ইমেজ ভেঙ্গে কূল নাই কিনার নাই, হাজার বছর ধরে'তেও দেখিয়েছিলেন তিনি গ্রামের নাটকেও পারদর্শী।
ঐতিহাসিক চরিত্র আওরঙ্গজেব করেছেন, অভিনয় করেছেন এই সেই কন্ঠস্বর, একটি যুদ্ধ অন্য একটি মেয়ে, সুখের ছাড়পত্র, বাবার কলম কোথায়, তুমি, নিলয় না জানি, প্রচ্ছায়া, বহুব্রীহি সহ আরো নাটকে। সবগুলো নাটকই আশির দশকের। সেই দশকে আমাদের টিভি নাটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন তিনিই৷ এদেশের মডেলিং জগতের উত্থানের পেছনে তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, যার হাত ধরে অনেক মডেল তারকা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়েছেন। নব্বইয়ের অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনই আফজালের হাতে গড়া, নাটক নির্মানও করেছেন অনেকগুলো; ছবির মত মেয়ে, মন ময়ুরী এরমধ্যে অন্যতম।
আফজাল হোসেন নব্বইয়ের দশকে নাটকে অভিনয় করেছেন খুবই কম, বলতে গেলে 'আড়াল' নাটকটার কথা বলতে হয়, পাশাপাশি আরও কিছু নাটক করেছেন। আমাদের প্রজন্মের কাছে উনার পরিচিতি ছিল দুই জীবন সিনেমার বিখ্যাত গান 'আমি একদিন তোমায় না দেখিলে' বা পালাবি কোথায় সিনেমার একেবারে শেষ দৃশ্যে আকর্ষনীয় উপস্থিতি দিয়ে। ইউটিউবের যুগে এসে অনেক পুরনো নাটক দেখা হয়েছে এটা সত্য। তবে আশির দশকের নাটক একেবারেই কম পাওয়া যায়, যার কারনে উনার অভিনীত অনেক বিখ্যাত নাটক ই অদেখা। যেমন পারলে না রুমকিই আজও দেখা হয় নি অনেক দর্শকদের।

হুমায়ূন আহমেদের পুরনো নাটকগুলো এখনকার দর্শকদের কাছেও বেশ পরিচিতি কিন্তু উনার সঙ্গেও আফজাল হোসেনের এক বহুব্রীহি বাদে তেমন কাজ নেই, সিনেমাও তেমন করেননি। গত দুই দশকে স্বল্প পরিসরে যেসব নাটকেই অভিনয় করেছেন তা দিয়ে উনাকে চেনা সম্ভব নয়, তাতে আফজাল হোসেনের স্বরূপ পাওয়া যেত না। হয়তো কাছের মানুষদের আবদারেই করতেন।
বর্তমানের ওয়েব কন্টেন্টের যুগে এসে যেখানে সমসাময়িকরা বিভিন্ন চরিত্রে নিজেদের সঁপে দিচ্ছেন, সেখানেও তার অনীহা ছিল। অবশেষে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত ধরে নতুন প্রজন্ম এই ভদ্রলোককে চিনে নিল স্বরূপে, আর যারা অপেক্ষায় ছিলেন আফজাল হোসেনকে নতুনভাবে দেখার তাদের ও আশা পূর্ণ হলো। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান ওয়েব সিরিজে তার ব্যতিক্রমী উপস্থিতি সকলকে মুগ্ধ করেছে, এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
শুভ জন্মদিন, আফজাল হোসেন!