মহামারীর প্রকোপে বলিউডে যখন কোনোকিছুই ঠিকঠাক ক্লিক করছে না, এরকম এক সময়ে অক্ষয় কুমারই যেন সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। যাকে সিনেমায় নিলে সে সিনেমা নিয়ে খুব বেশি না ভাবলেও চলে। এবং যে অভিনেতা শুধু অভিনয় করে আর পারিশ্রমিক নিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ মনে করে না৷ বরং সিনেমার শুরু থেকে শেষপর্যন্ত সিনেমার সাথেই লেগে থাকেন দৃঢ়ভাবে। সিনেমার সাফল্য নিশ্চিত করেন। সিনেমা ও দর্শকের পালসও যে মানুষটি বেশ ভালোই বুঝতে পারেন!

মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই বলিউডে বিস্তর ক্রান্তিকাল যাচ্ছিলো। প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ, অব্যবহৃত সিনেমাহলে সাপের খোলসের মত খসে পড়ছে পলেস্তারা, ওটিটির যুগ শুরু হয়েছে, কিন্তু ওটিটিতে যে বলিউডি সিনেমাগুলো আসছে, সেগুলোও তথৈবচ, খুব একটা ব্যবসা হচ্ছে না। বিতিকিচ্ছিরি এক অবস্থা যেন। অথচ, স্রোতের উল্টোপাশে, সাউথের প্রায় সব ইন্ডাস্ট্রিই ওটিটিতে দুর্দান্ত ব্যবসা করেছে। পাল্লা দিয়ে একের পর এক দুর্দান্ত সব সিনেমা নিয়ে এসেছে তারা।

হয়তো নিজেদের এহেন দুর্দশা ও সাউথের বিপুল  জয়জয়কার দেখে, মহামারীর এই ক্রান্তিকালে দাঁতে দাঁত চেপে বি টাউন ভেবেছিলো- 

রোসো, সিনেমাহলগুলো খুলুক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক৷ আবার ছড়ি ঘোরানো শুরু করবো আমি। 'কেন আমিই মোড়ল' সেটা প্রমাণিত হবে আবারও। 

কিন্তু সে আশাতেও পড়লো গুড়েবালি। সিনেমাহলগুলো একে একে খোলার পরেও, দর্শক আড়মোড়া ভেঙ্গে ক্রমশ হলমুখী হবার পরেও 'বলিউডি সিনেমা' সেরকম ব্যবসা করতে পারলো না, যেরকমটা অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি করলো। এক 'সূর্যবংশী' বাদ দিয়ে অন্যান্য বলিউডি সিনেমার থিয়েটার রিলিজের পারফরম্যান্স এতটাই খারাপ, তারা একরকম উড়েই গেলো সাউথের দাপটের কাছে।

সূর্যবংশী! 

যেটা আগেই বললাম, একমাত্র 'সূর্যবংশী'ই ব্যতিক্রম, এই বলিউডি সিনেমাই একমাত্র খানিকটা ব্যবসাসফল হলো। পরবর্তীতে আসা 'বান্টি অর বাবলি টু' কিংবা বহুল প্রতীক্ষিত 'এইটি থ্রি' বা 'চণ্ডীগড় কারে আশিকী'... কোনোটিই ঠিক জুত করতে পারলো না৷ অন্যদিকে থিয়েটারে এলো আল্লু অর্জুনের 'পুষ্পা।' গড়লো তাণ্ডবলীলার ইতিহাস। ওটিটিতে আসা মালায়ালাম সুপারহিরো ফিল্ম 'মিন্নাল মুরালি'ও বেশ জনপ্রিয় হলো। সিনেমাটি দারুণ ব্যবসাও করলো। তবে, উল্লেখ্য, এই সময়ে ওটিটিতে জনপ্রিয় হলো বলিউডি এক সিনেমাও। আনন্দ এল রাই এর 'আতরাঙ্গি রে।' যে সিনেমা ভিউয়ের দিক থেকে টপকে গেলো বাদবাকি সবাইকে। অল্পসময়ের মধ্যেই ছাড়িয়ে গেলো বিশ মিলিয়ন ভিউ। এই যে বলিউডি সিনেমা, যে সিনেমাগুলো মন্দার বাজারেও সাফল্য পেলো, অর্থাৎ- থিয়েটারে 'সূর্যবংশী' ও ওটিটিতে 'আতরাঙ্গি রে'... এই দুই সিনেমার সাথে যুক্ত রইলো একজন বিশেষ তারকার নাম। যার নাম- অক্ষয় কুমার৷ মহামারীতে সব তারকাই খানিকটা থমকে গেলেও অক্ষয় কুমারই যেন ব্যতিক্রম। যিনি একের পর এক কাজ তো করলেনই, পাশাপাশি নির্মাণগুলোর সাথেও যুক্ত থাকলেন ওতপ্রোতভাবে। এবং যেসব নির্মাণে যুক্ত থাকলেন, প্রতিটি নির্মাণই আলাদা আলাদাভাবে হলো আলোচিত। সমালোচিত। 

আতরাঙ্গি রে! 

মহামারীর এই প্রতিকূল সময়ে বাদবাকি রথি-মহারথিরা যেখানে একটি সিনেমা করতেই হিমশিম খেয়েছেন, এরকম এক সময়ে তিনি টানা পাঁচটি সিনেমায় কাজ করেছেন। বেল বটম, আতরাঙ্গি রে, পৃথ্বীরাজ, বচ্চন পাণ্ডে এবং রক্ষাবন্ধন৷ এবং এদের মধ্যে মুক্তি পাওয়া বেল বটম এবং আতরাঙ্গি রে... এই দুই সিনেমা নিয়েই কমবেশি আলোচনা হয়েছে৷ যদিও 'বেলবটম' ব্যবসা করতে পারেনি খুব একটা। তবুও করোনার মধ্যে এ সিনেমা রিলিজে এটা বোঝা গিয়েছে, চাইলে মহামারীকে থোড়াই কেয়ার করেই সিনেমা নিয়ে আসা যায়। সে হিসেবে, 'বেল বটম' আলাদা এক মোটিভেশন হিসেবেই কাজ করেছে বাদবাকি সিনেমাগুলোর জন্যে। এবং এসবকিছুর মিলিত ফলশ্রুতিতে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে- বলিউডে যখন কোনোকিছুই ঠিকঠাক ক্লিক করছে না, এরকম এক সময়ে অক্ষয় কুমারই যেন সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। যাকে সিনেমায় নিলে সে সিনেমা নিয়ে খুব বেশি না ভাবলেও চলে। এবং যে অভিনেতা শুধু অভিনয় করে আর পারিশ্রমিক নিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ মনে করে না৷ বরং সিনেমার শুরু থেকে শেষপর্যন্ত সিনেমার সাথেই লেগে থাকেন দৃঢ়ভাবে। সিনেমার সাফল্য নিশ্চিত করেন। সিনেমা ও দর্শকের পালসও যে মানুষটি বেশ ভালোই বুঝতে পারেন! 

এবং যদি অক্ষয় কুমারের 'ক্যারিয়ার-গ্রাফ' এর দিকে তাকাই, ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত সিনেমা অর্থাৎ- কেসারি, হাউসফুল-ফোর, গুড নিউজ এবং মিশন মঙ্গল... সবগুলো সিনেমাই ছিলো ব্যবসাসফল। সিনেমাগুলো সবমিলিয়ে আয় করেছে সাড়ে সাতশো কোটি রূপিও, যেটাও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এবং সাফল্যের এই পরিসংখ্যানে তার আশেপাশেও কেউ নেই। আবার যদি ২০২০ সালের দিকে তাকাই, অক্ষয় কুমারই একমাত্র ভারতীয় অভিনেতা, যিনি জায়গা করে নিয়েছেন 'ফোর্বস টপ হান্ড্রেড হাইয়েস্ট-পেইড সেলিব্রেটিস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড' ক্যাটাগরিতে৷ এমন এক সময়ে তিনি এরকম এক তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যখন মহামারীর প্রকোপে ভারতীয় অভিনেতাদের বেতন ক্রমশই পড়তির দিকে৷ সেসময়েও অক্ষয় কুমার অক্ষয় রেখেছেন নিজের স্ট্যাটাস! 

বেল বটম! 

যদিও 'মহামারীকালে পারিশ্রমিক না কমানো'র এই বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখতে চাইতে গেলেও দেখার উপায় নেই মোটেও। কারণ, এই সময়ে অক্ষয় কুমারের সিনেমাগুলো ব্যবসাও করছে ঠিকঠাক। এবং অক্ষয় কুমার যেসব সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন, সেসব সিনেমার শুটিং থেকে ডিস্ট্রিবিউশন... সবকিছুতেই যুক্ত থেকেছেন তিনি দক্ষভাবে৷ তার প্রোডাকশন হাউজ অনেকগুলো সিনেমার সাথে ডিরেক্ট কোলাবোরেশানও করেছে। সুতরাং, যেসব প্রযোজক-পরিচালকেরা তাদের নির্মাণের সাথে অক্ষয় কুমারকে নিয়েছেন, তারা একেবারেই সন্তুষ্ট থাকতে পেরেছেন। নির্ভার হতে পেরেছেন। এবং ঠিক এ কারণেই 'অক্ষয় কুমার' অক্ষয় এক আস্থার প্রতীকেই রূপান্তরিত হয়েছেন ক্রমশ। পরিশ্রমকে জাস্টিফাই করেই পারিশ্রমিক নিয়েছেন তিনি সবসময়। 

৫৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা, যিনি 'ধীরে চলো' নীতিকে লেশমাত্র পরোয়া না করে এগিয়ে যাচ্ছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপে, মহামারীর এই সময়ে সমসাময়িক অভিনেতাদের রীতিমতো ম্লান করে পরিণত হয়েছেন বলিউডের একমাত্র ভরসার জায়গায়, সেই অক্ষয় কুমার সামনে কী কী করবেন, তা দেখার বিস্তর আগ্রহ তো আছেই৷ পাশাপাশি, পাইপলাইনে থাকা তার সিনেমাগুলো সামনে কতদূর কী করে, আগের সিনেমাগুলোর সুনাম ও জনপ্রিয়তা কতটুকু বজায় রাখে, সেদিকেও আছে তীব্র কৌতূহল। তবে সামনে যা-ই হোক না কেন, সংকটকালে তিনি যেভাবে পরিস্থিতির সাথে লড়েছেন, বলতে গেলে ইন্ডাস্ট্রির হাল যেভাবে নিজেই ধরে রেখেছেন একা হাতে, সে সমীকরণ বিবেচনায়- অক্ষয় কুমার খানিকটা শ্রদ্ধাবনত প্রশংসা যে পেতেই পারেন, তাতেও সন্দেহ নেই মোটেও। 

তথ্যসূত্রঃ ফিল্ম কম্পানিয়ন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা