হিন্দিতে 'পুষ্পা'র তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে আল্লু অর্জুনের আরেক সুপারহিট সিনেমা 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু' হিন্দিতে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 'পুষ্পা'র হাইপ মোটেও কমেনি, এরইমধ্যে আল্লু অর্জুনের আরেক সুপারহিট সিনেমা মুক্তি পাবে হিন্দিতে... ব্যবসা যে তুমুল হতো, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই সিনেমা আসার ঠিক আগে দিয়েই এ গল্পে আসে বড়সড় কিছু টুইস্ট।
গত বছরের একদম শেষাংশে এসে মুক্তি পাওয়া আল্লু অর্জুনের 'পুষ্পা: দ্য রাইজ' যেভাবে কোনোকিছুকে তোয়াক্কা না করে বক্সঅফিসে তাণ্ডবলীলা চালায়, তা বেশ শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো একইসময়ে মুক্তি পাওয়া আরো বেশ কিছু সিনেমার জন্যে। শুধু তেলেগুই না, সিনেমাটির হিন্দি ভার্সনও যেরকম জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সেটাও ছিলো অন্যরকম এক বিস্ময়। এবং 'পুষ্পা'র হিন্দিতে এহেন জনপ্রিয়তা দেখেই আল্লু অর্জুনের আরেক সুপারহিট সিনেমা 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র হিন্দি ভার্সন মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছিলেন মনীশ গিরি শাহ। এই মনীশ গিরি শাহ 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র হিন্দি ভার্সনের রাইট কিনে নিয়েছিলেন আগেই। সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারি ২৬ তারিখে থিয়েটারগুলোতে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো সিনেমাটির। 'পুষ্পা'র হাইপ মোটেও কমেনি, এরইমধ্যে আল্লু অর্জুনের আরেক সুপারহিট সিনেমা হিন্দিতে... ব্যবসা যে তুমুল হতো, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই সিনেমা মুক্তির ঠিক আগে দিয়েই এ গল্পে আসে বড়সড় কিছু টুইস্ট।
'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র হিন্দি রিমেকের শুটিং শুরু হয়েছিলো গত বছরেই। 'শেহজাদা' শিরোনামের যে সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা আছে এ বছরের নভেম্বরে। এখন এই সিনেমা মুক্তির আগেই যদি আল্লু অর্জুনের 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু' সিনেমাহলে চলে আসে, তাহলে 'শেহজাদা'র কপালে যে অশনিসংকেত, তা বুঝতে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন হয়না মোটেও। আবার ওদিকে 'শেহজাদা'র যে প্রোটাগনিস্ট অর্থাৎ কার্তিক আরিয়ান, তিনিও ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু' যদি থিয়েটারে আসে, তাহলে 'শেহজাদা' সিনেমা থেকে সরে আসবেন তিনি। নানাবিধ সংকট! এসব সংকটের যাপিত সংঘর্ষে 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র হিন্দি ভার্সন ঠেকাতে তৎপর হন আল্লু অর্জুনের বাবা আল্লু অরবিন্দ। যিনি আবার 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু' এবং 'শেহজাদা' দুটি সিনেমারই প্রযোজক!
অরবিন্দ চাচ্ছিলেন, 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র শুধু একটাই হিন্দি রিমেক হোক, এবং সেটা 'শেহজাদা'ই হোক। সে কারণেই তিনি প্রথমে যোগাযোগ করলেন মনীশ গিরি শাহ এর সাথে। তিনি শাহকে অনুরোধ করলেন 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র হিন্দি ডাবড ভার্সন মুক্তি না দিতে। কিন্তু মনীশ গিরি শাহ অনড়। অনুরোধে ঢেঁকি না গিলে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন- ২৬শে জানুয়ারিতেই সিনেমা রিলিজ করবেন তিনি। এদিকে আল্লু অরবিন্দও নাছোড়বান্দা। তিনি আর কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে সরাসরি চলে এলেন মুম্বাই। মনীশ গিরি শাহ এর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলেন। মিটিং করলেন। এবং দুইপক্ষের দড়ি টানাটানিতে শেষমেশ জিতলেন আল্লু অরবিন্দই। সিদ্ধান্ত হলো-
'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র হিন্দি ডাবড ভার্সন মুক্তি পাচ্ছে না থিয়েটারে!
এতেও কিন্তু নাটক শেষ হয়নি। গতকালই মিডিয়ার সামনে বোমা ফাটিয়েছেন মনীশ গিরি শাহ। তার দাবী, প্রেক্ষাগৃহে ‘আলা বৈকুণ্ঠপুরামুলু’ হিন্দি ভাষায় মুক্তি পেলে রিমেক থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে নাকি প্রযোজকদের একপ্রকার ‘হুমকি’ই দিয়েছিলেন কার্তিক আরিয়ান। মনীষ বলেছেন, “কার্তিক ভীষণই অপেশাদার। ‘শেহজাদা’-র নির্মাতারা তেলুগু ছবিটি হিন্দিতে বড় পর্দায় আনতে রাজি ছিলেন না। কার্তিকও বলেছিল হিন্দি ডাবিংয়ে ছবিটি মুক্তি পেলে ও রিমেক থেকে সরে দাঁড়াবে। ও সেটা করলে ‘শেহজাদা’-র নির্মাতাদের প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হত। খুবই অপেশাদার আচরণ করেছে ও।” সাথে মনীশ এটাও যোগ করেছেন, এই সিনেমার হিন্দি ভার্সন সিনেমা হলে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে এসেছেন শুধু বন্ধুদের আর্থিক ক্ষতি হবে ভেবেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু' সিনেমা তেলেগুতে মুক্তি পায় ২০২০ এ। এবং বক্স অফিস থেকে ২৭৫ কোটি রূপি আয় করে সিনেমাটি, ২০২০ এর তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা হিসেবেও স্বীকৃত হয়। সেই সিনেমার হিন্ডি ডাবড ভার্সন, আল্লু অর্জুনের ফ্যানবেজ এবং সাম্প্রতিক 'পুষ্পা'র দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাফল্য... আল্লু অরবিন্দ মুম্বাইতে না গেলে এবং মনীশ গিরি শাহ তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে 'শেহজাদা' সিনেমার ভাগ্যে যে কী দুর্দশা ছিলো, তা ভাবনারও অতীত। অবশ্য দুর্দশার চক্র ভেঙ্গে 'আলা বৈকুন্ঠপুরামুলু'র মুক্তি যে আটকানো গিয়েছে, এ ঘটনাটা তাই 'শেহজাদা' টিমের বাকিদের বুক থেকে জগদ্দল পাথর নেমে যাওয়ার মতন স্বস্তির। এবং বিশেষ এক সিনেমার মুক্তি দেওয়া না দেওয়া নিয়ে বেশ ক'দিন ধরে যেরকম নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ চললো নানা চলকে, সেটাও হয়ে রইলো বেশ চটকদার মশলামুড়ির এক দৃষ্টান্ত!