আমিন খান দেখতে নায়কোচিত, অভিনয়টাও সন্তোষজনক। শুধুমাত্র নিজের অসতর্কতা আর পরিচালকদের অপব্যবহারের কারণে ভালোভাবে উজ্জ্বল হতে পারেনি তার ক্যারিয়ার।

১৯৯৩ সাল ছিল নবাগতদের জয়জয়কারের বছর। একের পর এক অভিষিক্ত হয়েছিলেন সালমান শাহ, শাবনূর, মৌসুমীর মতো তারকারা, যারা পরবর্তীতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিজেদের অনন্য করে তুলেছিলেন। তাদের সাথেই 'অবুঝ দুটি মন' সিনেমার সুবাদে নায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন 'আমিন খান'। মোহাম্মদ হোসেনের অবুঝ দুটি মন ছিল সুপারহিট। প্রথম সিনেমাতেই তিনি সফল, সঙ্গে ছিলেন নতুন নায়িকা রথী। 'হৃদয় আমার' হিট হওয়ার পর তাকে নিয়ে প্রত্যাশাও বেড়ে যায়, 'দুনিয়ার বাদশাহ' হিট হলেও এটা অগোচরেই থেকে যায়। তবে চরিত্রের গুরুত্ব না বুঝে গণহারে সিনেমা নির্বাচন, রোমান্টিক সিনেমায় কোন শক্ত জুটি না করায়, সমসাময়িক দুই নায়কের প্রতিদ্বন্দ্বিতার দরুণ পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেনি।

সালমান শাহ'র অকাল প্রয়াণের পর সেই সুযোগ আসে। সালমানের অসমাপ্ত সিনেমা 'স্বপ্নের নায়ক'-এ অভিনয় করলেন আমিন খান। 'কুলি', 'মৃত্যুর মুখে', 'আম্মাজান'-এর মতো সুপারহিট ছবির নায়ক হলেও তিনি ছিলেন দ্বিতীয় নায়ক বা প্রভাবহীন চরিত্রে। এমনটা বলা যায় সাগরিকা, রাঙা বউয়ের ক্ষেত্রেও। রাঙা বউ সমালোচিত হলেও তিনি পরিচ্ছন্ন ছিলেন। এরপর এলো অশ্লীলতার যুগ। এমনিতেই তিনি সিনেমা নির্বাচনে অসচেতন ছিলেন, তার উপর অশ্লীলতা আসার পর আরো বেড়ে যায়। বানিজ্যিক দৃষ্টিতে তখন অনেক হিট ছবি আছে বটে, তবে দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয় বা সুস্থ ছবির প্রভাব পড়েনি। অবশ্য সুস্থধারার ছবি 'আজ গায়ে হলুদ', 'তোমার আমার প্রেম' কোনোটাই চলেনি।

এমন সময় আসে 'ফুল নেবো না অশ্রু নেবো' ছবি। সেই দুঃসময়ে আসে পরিচ্ছন্ন সুপারহিট ছবির দুইজন নায়কের একজন, 'মুখোমুখি'ও হিট হয়েছিল, অভিনয়ও ভালো করেছিলেন। সেই সময় আলোচনায় চলে আসেন 'হৃদয়ের বন্ধন'-এ ভিন্নধর্মী অভিনয়ের কারণে।

আমিন খান, মা বড় না বউ বড়
প্রধান নায়ক হিসেবে আমির খানের শেষ সুপারহিট সিনেমা

এত বছরের ক্যারিয়ারে সেরা অভিনয় সম্ভবত করেছিলেন 'মা বড় না বউ বড়' সিনেমা', প্রধান নায়ক হিসেবে এটিই সর্বশেষ সুপারহিট সিনেমা। অদ্ভুত নামের কারণে তখন বেশ আলোচনায় এসেছিল ছবিটি। সংখ্যার বিচারে অনেক ছবিই করেছেন, সব সময় ব্যস্ত থেকেছেন অভিনয়ে। এটাও ঠিক, অনেক জনপ্রিয় সিনেমাও নাকি ছেড়ে দিয়েছিলেন! ব্যবসায়িকভাবে বেশ সংখ্যক ছবি হিট হলেও দর্শকদের মাঝে সেভাবে প্রভাব পড়েনি, সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে এমন নজির খুব বেশি একটা নেই।

আমিন খান দেখতে নায়কোচিত, অভিনয়টাও সন্তোষজনক। শুধুমাত্র নিজের অসতর্কতা আর পরিচালকদের অপব্যবহারের কারণে ভালোভাবে উজ্জ্বল হতে পারেনি তার ক্যারিয়ার। অনেকদিন ধরে আটকে থাকা 'ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২' মুক্তি পেয়েছে। অভিনয় করেছেন ঐতিহাসিক চরিত্র 'দুদু মিয়া' রুপে। 'অবতার' নামেও আরেকটি ছবি করেছেন। তবে দুটোই দুর্বল ছবি।

আজ তার জন্মদিন। সুবর্ণ সময়ের যেই ভুলগুলো করেছেন, সেইগুলো কাটিয়ে আবার নতুন করে আসুক, ভালো প্রত্যাবর্তন ঘটুক। শুভকামনা রইলো।

শুভ জন্মদিন আমিন খান।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা