শুভর হাতে একটা ট্যাটু আছে। যাতে লেখা Vini Vidi Vici, যার বাংলা অর্থ- এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। কিন্তু শুভর এই পথচলা এতটা মসৃণ ছিল না, পদে পদে বাধা পেতে হয়েছে তাঁকে...

আদিত্য আদি: 

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার অঙ্গারগাঁও গ্রামে এক রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠেছে এক কিশোর। বাবা সরকারি চাকরিজীবী। মা গৃহিণী। দুই ভাই। ছোটকাল থেকে তাকে শেখানো হতো- 'তুমি এক টাকা নয়, একশো পয়সা খরচ করেছ। তোমার কোনো অভাব নেই, কিন্তু তোমার ‘লাক্সারি’ জীবন যাপন করার সুযোগও নেই!' এভাবে চলতো কিশোরটির দিনকাল। 

এই পরিবারে বড় হওয়া ছোট ছেলেটি হুট করেই সিদ্ধান্ত নেয় অঙ্গারগাঁও থেকে ঢাকায় আসবে মিডিয়ায় কাজ করার জন্য। কিন্তু পরিবার চাইতো না তাদের ছেলে মিডিয়ায় কাজ করুক। কিন্তু ছেলে নাছোড়বান্দা। তার লক্ষ্য যে অনেক বড়! একদিন পরিবারের অমতেই স্রেফ ২৫৭ টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে আসে সে। টাকাগুলো দিয়েছিল তার দুই বন্ধু ইমতিয়াজ ও আসিফ।

এতক্ষণ যেই ছেলেটির কথা বললাম তাকে আপনারা সবাই চেনেন। ছেলেটির নাম- আরিফিন শুভ। বর্তমান সময়ের ঢালিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ও রুচিশীল নায়ক, দশ বছর পার করে ফেলেছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা পেতে ভীষণ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে, জীবনে ব্যর্থ হয়েছে অনেকবার, কিন্তু দমে যাননি। জীবন ‘নষ্ট’ করার সুযোগ এসেছে বহুবার। সেদিকে পা বাড়াননি। একসময় ‘বাতিল’ তকমা লেগেছে গায়ে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ধীরে ধীরে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা অ্যাটাক সিনেমার সফলতার পর সিনেমার 'নেক্সট বিগ থিং' ভাবা হয় আরিফিন শুভকে। চলুন জেনে আসা যাক আরিফিন শুভর এগিয়ে চলার গল্প! 

র‍্যাম্পে শুভ

ঢাকায় এসে অনেক দিন পরে ডাক পেয়ে বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে র‍্যাম্পে প্রথম হাঁটেন শুভ। সেই শুরু। এত এত স্টাইলিশ ছেলের মধ্যে তখন নাকি শুভকে নিজের কাছে 'ক্ষ্যাত' মনে হতো! মজার ব্যাপার হলো, সম্ভবত ওই সময় সবচেয়ে বেশি রিজেক্টেড (বাতিল) মডেল ছিলেন শুভ। তিনি তার সীমাবদ্ধতা জানতেন। তাই এতে তার মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করতো না ,বরং তার মধ্যে ছিল সকল ব্যর্থতা দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। 

আরিফিন শুভ- তারকাখ্যাতি থেকে অনেক দূরে তখনও

এফএম রেডিও-তে শুভ

র‍্যাম্প থেকে পা দিলেন সোজা "রেডিও স্টেশনে"। "রেডিও ফূর্তি"-তে "শুভর শো" নামে একটি বিখ্যাত শো-এর আরজে ছিলেন তিনি। শুভর কণ্ঠের যাদু আর স্মার্ট এটিটিউডে বুঁদ হয়েছে অজস্র মানুষ, মেয়েদের মাঝে ছিল তার ভীষণ জনপ্রিয়তা। 

ছোটপর্দায় শুভ

২০০৭-এ শুরু হলো ছোট পর্দায় যাত্রা। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় "হ্যাঁ না" নাটক দিয়ে এ যাত্রা শুরু হয়। অভিনয় করেছে ৬০+ নাটকে। কাজ করেছে অমিতাভ রেজা, শিহাব শাহীনদের মতো নির্মাতাদের সাথে। শুভর ক্যারিয়ারে শিহাব শাহীনের রয়েছে ব্যাপক অবদান। শিহাব শাহীনের প্রায় সব কাজেই প্রশংসিত হয়েছেন শুভ।

চলচ্চিত্রে শুভ

শুরুটা মোটেও মসৃণ ছিল না। ফিল্মে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছিলেন, পরে দেখা গেল প্রজেক্ট বাতিল। তন্মধ্যে "ওয়ারিশ" নামের একটি ছবি ২০১০ সালে নির্মাণের কথা ছিল। সেই সময় একটি প্রধান চরিত্রে হুমায়ূন ফরিদী অভিনয় করবেন বলে জানা গিয়েছিল। নায়িকা চরিত্রে অপি করিমের অভিনয়ের কথা থাকলেও পরবর্তীতে তাকে বাদ দিয়ে মেহজাবিনকে নেন পরিচালক লাভলু।

৩ রা এপ্রিল ২০১০ তারিখে "হোটেল শেরাটন" এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ওয়ারিশ ছবির মহরত। কিন্তু দুঃখের বিষয় কাজটা হয়নি। শুভ হতাশ হলেন। ক্যারিয়ার শুরুর মুহূর্তে কারো উপর এত চাপ সত্যি পীড়াদায়ক হয়। কিন্তু ২০০৩-এ শুভ যে ঢাকায় এসেছিল ফিল্মের হিরো হতে! তার মাথায় কাজ করতো, কীভাবে তা সম্ভব। এফডিসিতে ঘুরাফেরা করতেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আজকের অবস্হানে আসার জন্য তাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। কেউ বলেছে, তোমার কণ্ঠ ভিলেনদের মতো, ভিলেন হও। আরো বলেছে, তুমি এত লম্বা যে তোমার নায়িকা পাবো না! কিন্তু শুভ এসবে কান দিতেন না। 

অবশেষে তার প্রথম ছবি মুক্তি পায় ১৫ জানুয়ারি ২০১০-এ। খিজির হায়াত খানের পরিচালনায় দেশের প্রথম স্পোর্টস ফিল্ম 'জাগো'-তে মিললো ছোট একটি চরিত্র। নিজের অভিনয়গুণ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করলেন। তারপর আবার বিরতি নিলেন। ছোটপর্দাতে দর্শকপ্রিয় নাটক/টেলিফিল্মে অভিনয় করতে থাকেন। "জাগো" এর ঠিক প্রায় তিন বছর পর শুভ মোস্তফা কামাল রাজের 'ছায়াছবি' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এ ছবিতে তার বিপরীতে পূর্ণিমা অভিনয় করেছিলেন। তখনকার সময়ে ব্যাপক ক্রেজ তৈরি করেছিল ফিল্মটি। বিশেষ করে ফিল্মের গানগুলো ছিল অসাধারণ।

ঢাকা অ্যাটাক সিনেমায় অভিনয় করেছেন পুলিশের চরিত্রে

গানগুলো দিয়ে শুভ রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন। আরিফিন রুমির চমৎকার মিউজিকে প্রত্যেকটি গান ছিল শ্রুতিমধুর। আর চিত্রায়নে লোকশন ও কস্টিউম আভিজাত্য, শুভ-পূর্ণিমার রোমান্স দর্শকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। বিশেষ করে শুভর হিরোইজম পরিলক্ষিত হয়েছিল। তখনকার সময়ে শুভর ফ্যাশন সচেতনতা ও বডি ফিটনেস ছিল দারুণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রযোজকদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে ফিল্মটি শেষ পর্যন্ত রিলিজ হয়নি! 

দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে ১৬ অক্টোবর ২০১৩-তে মুক্তি পায় "পূর্নদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী"। মূলত ২০১৩ সাল থেকে শুভর ক্যারিয়ারের যাত্রা। এন্টি হিরোর রোল প্লে করেছিলেন, তখনকার সময়ে শুভর সাথে জয়ার রসায়ন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। ঐ বছরের সবচেয়ে বড় হিট গান ছিল "আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো"। যেটিতে পারফর্ম করেছেন শুভ-জয়া এবং ফিল্মটির ব্যবসায়িক সাফল্যে গানটির ভূমিকা ছিল বলে অনেকেই বিশ্বাস করে। ফিল্মটিতে শুভর অভিনয় প্রশংসিত হয়।

তখনকার সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের হিরো মানে মেদবহুল একজন ভদ্রলোক। কিন্তু তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিলেন শুভ। নিজের ফিটনেস নিয়ে সদা সচেতন ছিলেন। শুভ এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য জিতে নেন "বায়োস্কোপ বর্ষসেরা অভিনেতা (নেগেটিভ রোল)"। পাশাপাশি "মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার"-এর দর্শক জরিপে মনোনয়নও পেয়েছিলেন, যা ছিল ভীষণ চমকপ্রদ। 

তৃতীয় মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হচ্ছে "ভালোবাসা জিন্দাবাদ"। এটিও ২০১৩ সালে রিলিজ হয়। ছবিটি সাধারণ দর্শকদের খুশি করলেও ক্লাস ও ক্রিটিকসদের হতাশ করে। শুভর বাজে কাজগুলোর একটি এটি। যদিও তখন নতুন ছিলেন শুভ। "ভালোবাসা জিন্দাবাদ"-এর টাইটেল ট্র্যাকে তার নৃত্যশৈলী সবাইকে মুগ্ধ করে। কিন্তু অভিনয়ে ঘাটতির জন্য কিছুটা সমালোচিতও হয়েছিলেন।  

তারপর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টটি পেয়ে যান শুভ। তা হলো জাজের "অগ্নি"। কাজটির জন্য পরিচালক শুভকে শর্ত দিয়েছিল তাকে বডি-বিল্ডার হতে হবে। শুভ নিজেকে তেমনভাবেই গড়ে তুলেন। তারপর তো ইতিহাস সবার জানা। ছবিটি বিশাল হিট হয়। শুভও প্রশংসিত হন। তার মারকাটারি শরীর আর অ্যাংরি ইয়াং ম্যান ইমেজকে পরিচালক ইফতেখার দারুণভাবে ব্যবহার করেছিল। তার হাত ধরে চলচ্চিত্রে অ্যাকশনের নতুন মাত্রা আসে। সাথে সাথে তার এটিটিউড স্টাইল সবই চরিত্রের সাথে মিলে গিয়েছিল।

এ চলচ্চিত্রে শুভ তার অভিনয়কে আরো পরিপক্ব করেন। এবারও শুভ "মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার" এর দর্শক জরিপে নমিনেশন পান। ২০১৪ সালে শুভর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে রিলিজ হয় "তাঁরকাটা"। রাজের এই ছবিটি "ছায়াছবি" এর মতো আটকে যায়নি। একটি ভালো গল্পকে রাজ একটু বোরিংভাবে উপস্থাপন করেছিলেন দর্শকদের সামনে। বারবার কিডন্যাপিং দেখিয়ে পরিচালক রাজ গল্পকে অনেকের কাছে বোরিং করে তুললেও শুভর অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করে নেয়। একটি দেখার মত মুভি। "ছায়াছবি" এরপরে আবার ও শুভর ফিল্মে আরিফিন রুমীর মিউজিক। আবারও বাজিমাত। মুভিটির জন্য শুভ প্রথমবারের মত "মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার (সমালোচক)" লাভ করে। 

২০১৪-তে আবারও "কিস্তিমাত" করেন। মুভিটি নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও ঠিকই বক্স অফিসে কিস্তিমাত করে (সূত্র: প্রথম আলো)। তিনটা মুভির সাথে ঈদের বাজারে ফাইট করে দ্বিতীয় সপ্তাহে হল না হারিয়ে আরো প্রথম সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছিল প্রায় দ্বিগুণ হল। পরিচালক আশিকুর রহমান এটিকে বাম্পার হিট বলে উল্লেখ করেছিল। এটিও সমালোচিত হয়। বুয়েটিয়ান আশিক স্বপ্ন নিয়ে সিনেমায় আসেন আর নকল রাইটাররা তাকে ধরিয়ে দেয় নকল স্কিপ্ট। এটি নিয়ে পরে দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন।

মিশন এক্সট্রিম সিনেমার জন্য পুরোপুরি বদলে নিয়েছেন নিজেকে

তবে তার নির্মাণে নতুনত্ব ছিল। ক্ষেত্রবিশেষে শুভ ওভারএক্টিং করেছেন ঠিকই, তবে তার লুক আর পুলিশগিরি একদম জমে ক্ষির। তার অ্যাকশন অবতার প্রশংসিত হয়। আশিক মূলত ফিল্মে নতুন কিছু রাখতে ট্রাই করেছেন। আর্টিফিশিয়াল কালার কারেকশনের কারণে অনেকে সমালোচনা করেছে, যদিও ঐ টাইপ কালার নাকি আশিকের ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ! ফিল্মটি এত আলোচিত হয়েছিল যে রিলিজের পর প্রশংসা ও সমালোচনা সমানে চলেছিল। সমালোচনায় নোংরাভাবে যোগ হয়েছিল ফিল্মের লোকেরাও। ইফতেখার চৌধুরী বাজেভাবে সমালোচনা করেছিলেন, আর তার এক হাত নিয়েছিলেন পরিচালক রাজ। ফেসবুকে তাদের মধ্যকার ঝগড়া দর্শকসমাজে হাসির খোরাক জুগিয়েছিল। সবকিছু বাদ দিয়ে বিচার করলে দেখার মতো একটি চলচ্চিত্র। 

২০১৫ তে দুইটি মুভি করেন। "ছুঁয়ে দিলে মন' ও "ওয়ার্নিং"। ২০১৫ এর সেরা কমার্শিয়াল ফিল্ম "ছুঁয়ে দিলে মন" (মান, ব্যবসা, ক্রেজ বিবেচনায়)। মুভিটি ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়। এর টিভি রাইট বিক্রি হয়েছিল ৪০ লাখ টাকায়। ছোটপর্দায় জনপ্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম’র সঙ্গে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিল আরিফিন শুভ। শুভ এবং মম’র অভিনয়ে যেমন মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক ঠিক, তেমনি চলচ্চিত্রর গান এবং লোকেশনে যথেষ্ট বিচিত্রতা থাকার কারণে দর্শক হলমুখী হয়েছেন।

দর্শকের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন আরিফিন শুভ ও মম। শিহাব শাহীন ছোট পর্দার পর বড় পর্দায় ও শুভকে দারুণভাবে দর্শকের সামনে তুলে ধরলেন। ২০১৫ এর সেরা মিউজিক অ্যালবাম বলতে গেলে "ছুঁয়ে দিলে মন" সিনেমারই। আন্তর্জাতিক বাজারেও সফল ছিল ছুঁয়ে দিলে মনে। আমেরিকার চারটা স্টেইটে সপ্তাহ ধরে হাউজফুল গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াতে এক সপ্তাহের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছিল। ডিস্ট্রিবিউটরদের তরফ থেকে দর্শকদের এক রিঅ্যাকশন ভিডিওতে দর্শকরা শুভ ও ফিল্ম দুটিরই ব্যাপক প্রশংসা করে। 

তারই ফলশ্রুতিতে অস্ট্রেলিয়ান প্রোডাকশন "বাজ ফিল্মস" এর ব্যানারে শুভ কাজ করেছেন ২০১৫ সালে। হলিউডের প্রোডাকশন ওয়ার্নার ব্রো'স থেকে অ্যাকশন ও থ্রীলার ফিল্মের উপর ইন্টার্নশিপ করা ডিরেক্টর জায়েদ রেজওয়ানের "মৃত্যুপুরী"-তে প্রসূনের সাথে কাজ করেছেন। বাকি সব আর্টিস্ট ছিল অস্ট্রেলিয়ান। ছবিটির কাজ শেষ এবং সব কাজ হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে। উল্লেখ্য ফিল্মটির জন্য শুভ "ভ্রমর" নামের একটি ফিল্ম ছেড়ে দেন। ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে "ওয়ার্নিং" নির্মাণশৈলীর জন্য সমালোচিত হয়। ডিজিটাল ফরম্যাটে পুরনো ডিরেক্টরদের উপর যে ভরসা রাখা কঠিন, তা আরেকবার এই সিনেমা দ্বারা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৫-তে শুভ "মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার (দর্শক জরিপ)" লাভ করেন। এছাড়াও "সিজেএফবি পুরস্কার"ও জিতে নেন তিনি। 

২০১৬ তে তিনটি মুভি রিলিজ হয়। মুসাফির, অস্তিত্ব, নিয়তি। তিনটি মুভিতেই শুভ প্রশংসা কুড়ান। একজন অ্যাকশন হিরো, রোমান্টিক হিরো, একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে নিজেকে পর্দায় নিয়ে আসেন। তিনটি মুভিতেই শুভর অভিনয় প্রশংসিত হয়। বিশেষ করে অস্তিত্ব-এর কথা না বললেই নয়। ব্যবসায়িক দিক বিচার করলে, দুইটি মুভি ব্যবসাসফল হয়। প্রযোজকের ভাষ্যমতে আসছে "মুসাফির ২", যেটাতেও থাকছেন শুভ! আর নিয়তি নিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুশি ছিল। সবচেয়ে বড় কথা অস্তিত্ব মুভিটি আন্তর্জাতিক বাজারে দারুণ ব্যবসা করে, সাথে সাথে মুসাফিরও। কানাডাতে প্রথম সপ্তাহে ২৪টি শো'এর দারুণ রেসপন্সে দ্বিতীয় সপ্তাহে অস্তিত্ব শো পায় ২৬ টি। ২ সপ্তাহে ৫০টি। যা ছিল রেকর্ড। আর মুসাফির তো বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাকশন থ্রিলার ফিল্মের স্বাদ দেয়। নিয়তি সিনেমায় "ঢাকাই শাড়ি"-তে শুভর নাচ ভালো লেগেছে দর্শকদের। 

২০১৭-তে এখন পর্যন্ত তিনটি মুভি রিলিজ হয়েছে। শুভর “প্রেমী ও প্রেমী” ১ম সপ্তাহে ৮৭ হল, ২য় সপ্তাহে ৮৩ হল পায়। ঈদ ব্যতীত টানা ২ সপ্তাহ ধরে এতগুলো হল ধরে রাখা নিঃসন্দেহে কঠিন। তাছাড়া মুভিটি কানাডা, আমেরিকা, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রিলিজ হয়। এত বেশি পরিমাণ মাল্টিপ্লেক্স এর আগে কোন বাংলা মুভি রিলিজ হয়নি। প্রদর্শক সজিব সপ্তক একে "Biggest foreign release ever in the history of Bangla Cinema" বলে উল্লেখ করেন। তাছাড়া ধ্যাততেরিকিও হয়েছে ব্যবসাসফল। প্রযোজকদের মতে প্রথম ২ দিন ঈদের সেল পেয়েছিল সিনেমাটি। রোড জার্নি ও রম-কম দুটি ভিন্ন ভিন্ন জনরাতে শুভ দারুণ ছিলেন। সমালোচকেরা অনেকেই বলে থাকেন, কমিক টাইমিংয়ে শুভ দুর্বল। তবে ধ্যাততেরিকি সিনেমায় পাশ মার্ক পেয়ে উতরে গেছেন শুভ।  

তারপরের সিনেমার নাম ঢাকা অ্যাটাক। নতুন করে কিছু বলা লাগবে কি? 

হারিয়ে যাওয়া প্রজেক্ট

  • ছায়াছবি। কাস্ট: শুভ, পূর্ণিমা ও প্রমুখ। পরিচালক: মোস্তাফা কামাল রাজ
  • মন বোঝে না/লাভলী। কাস্ট: শুভ, তমা মির্জা ও প্রমুখ
  • জেদী। কাস্ট: শুভ, ইশারা, মিশা ও প্রমুখ

নায়িকা ভাগ্য

অনেকের মতে শুভর নায়িকা ভাগ্য বাজে। কাজ অর্ধেক হয়ে আটকে যাওয়া+মুক্তিপ্রাপ্ত+আপকামিং চলচ্চিত্র মিলে শুভর ২০ টি চলচ্চিত্রে ১৭ জন নায়িকার সাথে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত ১৪টির মাঝে তাকে ১১ জন নায়িকার সাথে রোমান্স করতে দেখা গেছে।

গায়ক শুভ

শুভ ভালো গানও গেয়ে থাকেন। তারই ফিল্ম অগ্নির "সহে না যাতনা" গানটি শুভর গাওয়া! তাছাড়া "নিয়তি" এর "অনেক সাধনার পরে" গানটিও শুভ গেয়েছেন প্রমোশনাল সং হিসেবে। তার সাথে ছিল এক বিশেষ প্রতিযোগিতায় জয়ী সিমন। শুভ শুধু নায়ক হিসেবে ভালো নন, গায়ক হিসেবেও বেশ!

ব্যক্তি শুভ

২০১৫ এর মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার জয়ের পর মঞ্চে উঠে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, "রাস্তার ছেলে ছিলাম। আমার ভক্তরাই আমাকে আরিফিন শুভ বানিয়েছে"। শুভ বলেন,

"গল্প পছন্দ হলে আত্মতৃপ্তির জন্যই অভিনয় করি, নায়কদের ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকার জন্য নয়। আমার মনে হয় অনেকগুলো মানহীন কাজ করার চেয়ে একটি মানসম্মত কাজ করা ভালো। তাই প্রতিটি মুর্হুতে একটি ভালো সুযোগের প্রতীক্ষায় থাকি।”

শুভর হাতে একটা ট্যাটু আছে। যাতে লেখা Vini Vidi vici। যার বাংলা অর্থ এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। তবে এসেই জয় করার বাইরেও একটা জগৎ আছে, যে জগতের নানা দিক দেখে এসেছেন শুভ। অধ্যবসায়ের এক জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি। একা একা লড়ে গেছেন। শুভর আগামী দিনগুলো যেন শুভ রয়, সেজন্যে রইলো শুভকামনা!

তরুণদের জন্য শুভর পরামর্শ

এক সাক্ষাৎকারে তরুণদের জন্য এই পরামর্শগুলো দিয়েছিলেন শুভ। ভীষণ মনে নাড়া দিয়েছিল বলে সেগুলো আলাদা করে তুলে ধরছি-

  • আমি বলব, তুমি শুভ না, তুমি তুমিই হও। একটা গোল ঠিক করে সামনে আগাও। সফল তুমি হবেই। আর হাঁটতে গিয়ে দেখবে জীবন কত সুন্দর। সেটা উপভোগ করো।
  • কষ্ট ছাড়া জীবন হবে না। পতনের সময় উঠে দাঁড়ানোটা জীবন। এটা মাথায় রাখতে হবে সবাইকে।
  • প্রত্যেক কিশোর-তরুণের মধ্যে জীবনবোধটা তৈরি করে দিতে হবে। এই কাজটা করার দায়িত্ব মা-বাবার।
  • স্বপ্ন দেখে অনেকেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে চায় না। স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নের পেছনে ছোটা শিখতে হবে। তাহলে সবই তোমার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।
  • নেশা থাকা ভালো। তবে সেই নেশা হোক শরীরচর্চার, বই পড়া, সিনেমা দেখার মতো নেশা। এই নেশাগুলো জীবন বদলে দেবে তোমার।
  • সফলতার পেছনে না ছুটে যোগ্যতার পেছনে ছোটো। তুমি যোগ্য হয়ে উঠলে সফলতা তোমার হাতের মুঠোয় আসতে বাধ্য।
  • বোকা নয়, বিনয়ী হও। কারণ তোমার বিনয় তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
  • জীবনটাকে ভালোবাসো এবং সেটা উপভোগ করো।

লিখেছেন- আদিত্য আদি, কৃতজ্ঞতা- বাংলা চলচ্চিত্র ফেসবুক গ্রুপ


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা