এই ব্যাটম্যান এখনো চোখ ধাঁধানো গ্যাজেটে বিশ্বাসী না, হ্যান্ড টু হ্যান্ড কম্ব্যাটে দুটো পাঞ্চ থ্রো করলে একটা পাঞ্চ তার বুকেও লাগে, মাস্কের আড়ালে তার ঘর্মাক্ত-ক্লেদাক্ত মুখ দেখে টের পাওয়া যায় তার দৈনিক পরিশ্রম। এই ব্যাটম্যান আমাদের মতোই, যে কীনা ভুল করে সেই ভুলকে ঠিক করার চেষ্টাও করে...

Thug: What the hell are you supposed to be?

Batman: I'm vengeance!

স্ক্রিপ্টে লেখা ছিল রবার্ট প্যাটিনসন বারংবার ঘুষি মেরে করে দুর্বৃত্তকে অচেতন করে এই ডায়লগ বলে উঠবে। কিন্তু রব ইম্প্রোভাইজ করে বসে নিয়ে আরও বাড়তি দুটো ঘুষি মারে যেন জ্ঞান ফেরার পরও তার এই রেইজ মনে থাকে সে দুর্বৃত্তের। ব্যাটম্যান হয়তো তার ভেনজেন্স এভাবেই বোঝাতে চাইতো, এমনটাই মনে হয়েছিল রবের। এই রোল যে রবার্ট প্যাটিনসন পাবেন তা তিনি নিজেও জানতেন না, অথচ ম্যাট রিভস শুরু থেকেই রবকে মাথায় রেখে ব্যাটম্যান লিখেছিলেন। যখন অডিশনের কল আসে তখন সে টেনেটের শ্যুটিং এ ব্যস্ত। আর টেনেট কার সিনেমা সেটা তো কারও অজানা নয়। সে ভয় পেয়েই রব নোলানকে জানালেন না যে অডিশন দিতে যেতে হবে, নোলানকে বললেন ফ্যামিলি ইমার্জেন্সি। সেটা শুনে নোলান বলে উঠলেন- তুমি ব্যাটম্যানের অডিশন দিতে যাচ্ছ, তাই না?

যে নোলানের ট্রিলজির জন্য দর্শক আর কোন ব্যাটম্যানকে একসেপ্ট করতে পারছিল না সে নোলানের সিনেমার নায়কই শেষমেশ ব্যাটম্যান হল। আর অডিশন দিতে গিয়েও যেন আগের ব্যাটম্যানরা ছায়া হয়ে ছিল রবার্ট প্যাটিনসনের। ভ্যাল কিলমারের ব্যাটস্যুট আর আর জর্জ ক্লুনির ব্যাট ম্যাস্ক পরে অডিশন দিয়েছিলেন তিনি। এই সব ব্যাটম্যানরা যেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল রবার্ট প্যাটিনসনের দিকে। তাই তো বেন এফ্লেকের শিওর শট সলো ব্যাটম্যান মুভি ক্যান্সেল হয়ে নতুন ব্যাটম্যান হিসেবে অবতারণা হল রবার্ট প্যাটিনসনের। আর কী ব্যাটম্যানটাই না হল!  

This is the Batman movie we all deserved. নোলানের ট্রিলজির পরে আসলে ব্যাটম্যানে হাত দেয়াটাই ঠিক কাজ হয় নি। কারণ যখন কোন চরিত্র বেশি উঁচুতে উঠে যায়, নাগালের বাইরে চলে যায় তখন তাকে ছুঁতে গেলেই নিচে নামিয়ে আনতে হয়। ব্যাটম্যানের সে কিংবদন্তীতুল্য উপসংহারের পর তাকে সময় দেয়া উচিত ছিল। সময় ঠিকই পেল, কিন্তু মাঝখানে এক দশক চলে গেল ব্যাটম্যান, গথাম, জোকারদের খুঁজে পেতে। ম্যাট রিভস ঝানু পরিচালক তিনি ঐ পথে আর পা ই মাড়ান নি। ব্যাটম্যানের অরিজিন স্টোরি বলতে গিয়ে সময় নষ্ট করেন নি, নতুন জোকারকে অকস্মাৎ উদয় করার দুঃসাহসও করতে চান নি। ব্রুস ওয়েনের গল্পকে আড়ালে রেখে, ব্যাটম্যানকে নিয়েই এগুতে চেয়েছেন। সুপারহিরো সিনেমা বানানোর চেয়েও বানাতে চেয়েছেন ডিটেকটিভ, সাইকোলজিক্যাল সিনেমা। ক্যাওস ক্রিয়েট করতে চেয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন নোলানের পর তিনিই ক্যাওস সৃষ্টি করতে সবচেয়ে পটু।

ব্যাটম্যান (২০২২) সিনেমার একটি দৃশ্য

ব্যাটম্যানের গল্পটা মূলত রিডলারকে ঘিরে। যে কীনা গথাম শহরে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে একের পর এক বিগ শটদের হত্যা করে। আর প্রতিটি খুনের সাথে রেখে যায় একটি করে রিডল, ব্যাটম্যানের সলভ করার জন্য। গর্ডনের সাথে মিলে ব্যাটম্যান খুঁজে বেড়ায় রিডলারকে, জানার চেষ্টা করে কেন এদের হত্যা করা হচ্ছে একের পর এক। আর খুঁজতে গিয়ে খোঁজ পেয়ে যায় নিজের অজানা অতীতের।

ম্যাট রিভস প্রায় ৩ ঘণ্টার এই সিনেমায় সময় নিয়েছেন তার চরিত্রগুলোকে স্ট্যাবলিশ করার জন্য। চরিত্রের চেয়েও বেশি তার গল্পটা স্ট্যাবলিশ করার জন্য। গল্পের প্রতিটি পরত খুলতে থাকে আর চরিত্রগুলোরও একেকটা দিক সম্পর্কে আমরা জানি। কে আলফ্রেড, কে গর্ডন এসব জেনে ও জানিয়ে সময় নষ্ট করেন নি তিনি। সময় নষ্ট করেন নি ব্রুসের বাবা-মা'র 'আঙ্কল বেন' সিন দেখিয়েও। যদিও এই গল্পে মৃত্যুর কারণ আলাদা, প্রেক্ষাপট আলাদা, চরিত্রের মোটিভও আলাদা। তবুও ম্যাট গল্পেই স্থির থাকতে চেয়েছেন। ব্যাটম্যানকে দেখিয়েছেন ভঙ্গুর ও ক্রমাগত চেষ্টারত এক ভিজিল্যান্ট হিরো হিসেবে। এই ব্যাটম্যান এখনো চোখ ধাঁধানো গ্যাজেটে বিশ্বাসী না, হ্যান্ড টু হ্যান্ড কম্ব্যাটে দুটো পাঞ্চ থ্রো করলে একটা পাঞ্চ তার বুকেও লাগে, মাস্কের আড়ালে তার ঘর্মাক্ত-ক্লেদাক্ত মুখ দেখে টের পাওয়া যায় তার দৈনিক পরিশ্রম। এই ব্যাটম্যান আমাদের মতোই, যে কীনা ভুল করে সে ভুলকে ঠিক করার চেষ্টাও করে।

ব্যাটম্যান চরিত্রে রবার্ট প্যাটিনসন পারফেক্ট কাস্টিং। যারা রবের ভালো কাজ দেখে নি, কেবল প্রিটি ফেইস মনে করে তাদের জন্যও মোক্ষম জবাব দিয়েছে সে এখানে। জোয়ী, জেফরি রাইট, এন্ডি সারকিস যার যার চরিত্রে পারফেক্ট ছিলেন। বেশি ভালো লেগেছে পেঙ্গুইন চরিত্রে কলিন ফেরেল আর রিডলার চরিত্রে পল ড্যানোকে। ব্যাটম্যানের সবচেয়ে ডার্ক মুভি এটাই। ম্যাট রিভস ক্যাওস তৈরি করতে মাস্টার। ক্লাইম্যাক্সের পুরো ক্যাওটিক পোরশনটুকু খুবই ভালো নির্দেশনার ফসল। ডিসি ম্যাট রিভসকে তার মতো কাজ করার স্বাধীনতা দিক, আমি নিশ্চিত ম্যাট আরও দারুণ কিছু উপহার দিতে পারবে দর্শকদের।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা