এই সিনেমায় এমন অনেক কিছুই আছে, যেটা দর্শকের পছন্দ হবে না। পরিচালক বা অভিনেতারা সবাইকে পছন্দ করাতেও চাননি। তারা চেয়েছেন পেটের ভেতর পাঁক দিয়ে উঠুক, বমি হোক। বমিতে উগড়ে পড়ুক শত বছরের সংস্কার, সামাজিকতা, মূল্যবোধ...

Bold! Beautiful! Unsettling! Disturbing! Brave! Too much!

সবগুলো বিশেষণই যায় এই সিনেমার সাথে। Biriyaani- Flavors Of Flesh মালয়লাম একটি সিনেমা। বেশ কিছু দিন ধরেই খোঁজ করছিলাম। ভাবি নি এতোটা সাহসী হবে, এতোটা ডিস্টার্বিং হবে। অনেক কিছুই আছে এই সিনেমার যেটা পছন্দ হবে না। পরিচালক, অভিনেতারা পছন্দ করাতেও চান নি। তারা চেয়েছেন পেটের ভেতর পাঁক দিয়ে উঠুক, বমি হোক। বমিতে উগড়ে পড়ুক শত বছরের সংস্কার, সামাজিকতা, মূল্যবোধ। যেগুলো যুগ যুগ ধরে নরমালাইজ করেছি আমরা সেগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে না বরং আঙুল ঢুকিয়ে চোখ অন্ধ করে দেখিয়ে দিয়েছে যেন এই সিনেমার কলাকুশলীরা। 

গল্পটা খাদিজার। শুরুতেই দেখা যায় তার ওপর চড়ে বসে আছে তার স্বামী। তলপেটের মাংসের ফলি ওয়ার্ক কানে এসে শুরুতেই নাড়া দেবে। আযানের শব্দ শোনা যায়। স্বামী তাড়াহুড়ো করে নিজেকে পরিতৃপ্ত করে নেয়, তখন খেয়াল থাকে না আযানের। কিন্তু স্ত্রী যখনই নিজেকে তৃপ্ত করতে নেয় তখন সে খিস্তি দিয়ে বলে আযানের কথা। শুরুতেই যেন ধাক্কা দিয়ে যান পরিচালক, বুঝিয়ে দেন সামনে আরও অনেক ধাক্কা আসছে। 

এরপরে গল্প চলে যায় জঙ্গিবাদে জড়িত এক ছেলের পরিবারের ওপর আসা নানান যন্ত্রণা-বঞ্চনায়। কেরালার অনেক শহরকেই মিনি গালফ বলা হয় কেননা সেখনাকার বেশিরভাগ ছেলে একটা সময় গিয়ে গালফে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে চলে যায়।  খাদিজার ভাইকেও পাঠানো হয়েছিল গালফে। অন্তত এমনটাই জানতো তার বোন ও পাগল মা। দারিদ্রতায় জর্জরিত এই পরিবারের সে ই একমাত্র আশা ছিল। কিন্তু একদিন খবর আসে যে সে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, কাশ্মীরে ট্রেনিং করছে। 

খাদিজা চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন কানি কুসরুতি

একে তো জঙ্গিবাদ, তার ওপর দারিদ্রতা, সাথে পাগল মা আর স্বামীর পরিবারের যন্ত্রণা নিয়ে খাদিজা যেন অকূল পাথারে পড়ে। তার সে স্ট্রাগল খুব দ্রুতই দেখিয়েছেন পরিচালক, কারণ তিনি অনেককিছু দেখাতে চেয়েছেন। কারণ, মানুষের জীবনে বিপদ আসলে কখনো একা আসে না, সাথে আরও দশটা বিপদকে সে ডেকে আনে। খাদিজার সাথে আমরাও যেন টের পাই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী, আপনজন সাজা মানুষদের দ্বিচারিতা, বিপদেও সুযোগ খুঁজতে আসা পশুদের দ্বিমুখী স্বভাব। খাদিজা এসব থেকে উত্তরণও করে, কিন্তু সে উত্তরণে নিজের মতো করে পথ খুঁজতে গিয়ে আবারও হারিয়ে যায় অন্ধকার কানাগলিতে। চারপাশে প্রতিটা মানুষের চোখে সে দেখে মাংসের নেশা।

খাদিজা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কানি কুসরুতি। তিনি যে কাজ দেখিয়েছেন এই চরিত্রে তা এক কথায় অনবদ্য। আমি দেখছিলাম আর বারবার মনে পড়ছিল গোলশিফতেহ ফারাহানির 'দ্য পেশেন্স স্টোন' সিনেমার কথা। দুজনের চরিত্রে কী দারুণ মিল, কী নিদারুণ সংগ্রাম দুজনেরই! কানির চোখেমুখে যে এক্সপ্রেশন, যে হেল্পনেসনেস সেটা দর্শককে যেমন আর্দ্র করে তেমনি পরে গিয়ে গল্পের পট পরিবর্তনে কানির দুষ্টু স্বাধীন হাসি, কামুক চাহনি টের পাইয়ে দেয় খাদিজার সকল চাওয়া। সিনেমার শুরুতে থাকা পজিশন তাই সিনেমার শেষে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে যায়। ইল্যুশন হোক তবুও খাদিজা পরিতৃপ্তি খুঁজে নেয় তার মতো করেই। যদিও বাস্তবে সে আশা দুরাশাই।

পরিচালক সাজিন বাবু এই এক সিনেমায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দিকই তুলে এনেছেন। যৌন স্বাধীনতা, জঙ্গিবাদ ইস্যু, সামাজিক সংস্কার ও কুসংস্কার, মিডিয়া ট্রায়াল, ধর্মের রাজনীতি-অনেক কিছুই উঠে এসেছে এখানে। কিন্তু উপস্থাপনটা খুবই ডিস্টার্বিং, আমি জানিনা তাই যে নিজেও ঠিক মানতে পেরেছি কীনা এমন উপস্থাপন। তবে দরকার ছিল এমন সিনেমার এ বিষয়ে দ্বিধা নেই।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা