যদিও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর বদান্যতায় আজকাল দর্শকের রুচি পাল্টেছে বিস্তর। স্টারডম ও সস্তা গল্প দিয়ে যে আজকাল নির্মাণকে জনপ্রিয় করা যায় না, সেটারও প্রমাণ অজস্র। এরকম এক সময়ে এসেও যারা 'রাধে' 'ভুজ' কিংবা 'সত্যমেব জয়তে টু' এর মতন 'সিনেমা' নির্মাণের সাহস দেখিয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই একমাত্র কর্তব্য!

সীমিত অর্থ, অধিক সীমাবদ্ধতা আর জৌলুশের বালাই না রেখেও দুর্দান্ত গল্প বলে এমন ইন্ডাস্ট্রির তালিকার শীর্ষে যদি 'মলিউড' থাকে, তাহলে, অঢেল অর্থ, অপার সম্ভাবনা আর জাঁকালো চাকচিক্যের মধ্যে থেকে ক্লিশে সব গল্প বলার ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষতম উদাহরণ হবে বলিউড! আশেপাশের একগাদা ইন্ডাস্ট্রি যেসব সুবিধে পাওয়ার জন্যে নিরন্তর হাপিত্যেশ করে বসে থাকে, সেসব সুযোগের সর্বোচ্চটা পেয়েও হেলায় হারানোয় ফলশ্রুতিতে যদি কোনো দণ্ডের ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে সে দণ্ডের বদান্যতায় বলিউডের কোন পরিণতি হতো, তা ভাবনারও বাইরে। যদিও দণ্ডবিধির বিধান প্রণয়ন আজকের কথাবার্তার প্রসঙ্গ না৷ আজকের কথা গত বছরের এমন তিনটি বলিউডি সিনেমা নিয়ে, যেসব সিনেমা পৃথিবীতে না এলেও পৃথিবীর খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি হতোনা৷ শিল্পসংস্কৃতির উনিশ-বিশ হতোনা। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে এই ক্লিশে সিনেমা নিয়ে লিখে সময়ের অপচয়ের কী কারণ? কারণ একটা আছে বৈকি। সে কারণ এটাই- যাতে করে এদের সম্পর্কে জেনে মানুষ নিজেদের সচেতনভাবে দূরে রাখতে পারে এই ত্রিরত্নের বলয় থেকে। সেজন্যেই এই প্রয়াস। প্রচেষ্টা। 

১. রাধে: ইওর মোস্ট ওয়ান্টেড ভাই

জামা খুলে  কিলবিলে পেশিপ্রদর্শনী করলেই আজকাল দর্শক মুগ্ধ হয়ে যায় না, দর্শককে চমকে দিতে হয় গল্প দিয়ে... এই সত্যটা 'ভাইজান' সালমান খান যে এখনো বোঝেননি, এই সিনেমাটাই সে উক্তির সাপেক্ষে এক মূল্যবান দলিল। 'ওয়ান্টেড' এর সিক্যুয়েল এই 'রাধে'তে সালমান খানই সব। হর্তাকর্তাবিধাতা। তিনিই নায়ক। শরীরের পোশাক খুলে উদোম হয়ে তিনিই রক্ষাকর্তা। কমিক রিলিফে তিনিও সর্বেসর্বা। পুরো নির্মাণে গল্পের ছিটেফোঁটাও নেই, আছে অর্থহীন প্রলাপ, সস্তা ভিএফএক্স আর একঘেঁয়ে মারামারি। বহুদিন পরে সালমান খানের সিনেমা আসছে, এই ভাবনায় যারা খানিকটা হলেও আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তাদের আশায় গুড়েবালি ছিটিয়ে ক্রমশই বিব্রত করেছেন বলিউডের অন্যতম এই 'খান'সাহেব ও তার সাম্প্রতিক নির্মাণ!

রাধে! 

২. ভুজ: দ্য প্রাইড অব ইন্ডিয়া

'ইন্ডিয়ান জিঙ্গোইজম' নিয়ে বলিউডে মাঝেমধ্যে এমন সিনেমা হয়, মুগ্ধ হয়ে যাই বিস্তর। আবার, উল্টোপাশে, এমন সব সিনেমা দেখি কখনোসখনো, বিরক্তির সর্বশেষ সীমায় পৌঁছে যেতে হয়। 'ভুজঃ দ্য প্রাইড অব ইন্ডিয়া' দ্বিতীয় শ্রেনির উদাহরণ। প্রথমত, ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে দেদারসে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত...মিলিয়েমিশিয়ে জগাখিচুড়ি করা হয়েছে। এরপর গল্প। গল্পের আদি-অন্ত কোনো কিছুরই সামঞ্জস্য নেই। অভিনয়? সেখানেও অবস্থা তথৈবচ। বাদ থাকে সংলাপ। সে সংলাপ এতটাই লাউড এবং ক্লিশে, মাঝেমধ্যে যাত্রাপালা দেখছি বলেও ভ্রম হচ্ছিলো। কিছু গ্রাফিক্স ছিলো, সেসবকে গ্রাফিক্স না বলে হাস্যকর কার্টুন বলাই বোধহয় বেশি প্রাসঙ্গিক! 

রাধে! 

৩. সত্যমেব জয়তে-২ 

এই সিনেমা যতটা না সিনেমা, তারচেয়ে বেশি মানসিক নির্যাতন। সিনেমায় তিন প্রোটাগনিস্ট  চরিত্র, এবং এই তিন চরিত্রেই অভিনয় করছেন একজন মাত্র মানুষ- জন আব্রাহাম। চরিত্র-ত্রয়ীর মধ্যে একজন বাবা, আর দুইজন যমজ সন্তান। এই তিন বাবা-ছেলে মিলে নেমেছেন ভারতকে রক্ষার মিশনে। যদিও সে মিশন কীরকম তা দেখানোর চেয়ে জন আব্রাহামের উদোম দেহ দেখানোতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন সিনেমার ডিওপি। এই সিনেমার যে গল্প আর সে গল্পের যে এক্সিকিউশন... মনে হয় না, ভোজপুরী সিনেমার গল্পও আজকাল এত বাজে হয়! ২০২১ সালের পৃথিবীতে এসেও এরকম 'যাচ্ছেতাই' সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা কিভাবে কারো মাথায় আসতে পারে, তা যতই ভেবেছি, নিঃসীম বিভ্রান্ত হয়েছি।

সত্যমেব জয়তে টু! 

যদিও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর বদান্যতায় আজকাল দর্শকের রুচি পাল্টেছে বিস্তর। স্টারডম ও সস্তা গল্প দিয়ে যে আজকাল নির্মাণকে জনপ্রিয় করা যায় না, সেটারও প্রমাণ অজস্র। এরকম এক সময়ে এসেও যারা এই 'ত্রিরত্ন সিনেমা' নির্মাণের সাহস দেখিয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই লাগাম টানলাম লেখার। ঈশ্বর নিকট ভবিষ্যতে হয়তো এদের খানিকটা হলেও সুমতি দেবেন, প্রার্থণা রইলো সেটিও। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা