সিনেমা বন্দী: মনে মনে আমরা সবাই ফিল্মমেকার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

কিছু সিনেমা থাকে না, খুব পিওর। এটা সেরকম একটি সিনেমা। এত সরল ইমোশন, এত সহজিয়া জীবন- সিনেমায় উঠে আসে খুব কমই। একদিকে দারিদ্রতা, গ্রামের দুর্দশাগ্রস্থ জীবন অন্যদিকে সিনেমা মেকিং এর প্রতি ভালোবাসার অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে এই সিনেমায়...
তেলেঙ্গানার এক প্রত্যন্ত গ্রামের গল্প। বীরবাবু নামের এক অটোরিকশাচালকের জীবনের গল্প। একদিন তার রিকশায় সে হুট করেই খুঁজে পায় দামী একটা ক্যামেরা। কে রেখে গেছে, কে হারিয়ে ফেলেছে কিছুই জানে না সে। গ্রামের বিয়েতে ছবি তুলে দেয় এমন ফটোগ্রাফার বন্ধুকে গিয়ে দেখালো সে ঐ ক্যামেরা। জিজ্ঞেস করলো বিক্রি করলে ১০ হাজার টাকা পাবে নাকি?
সেই বন্ধু হাসতে হাসতে বলল ভাড়া দিলেই মাসে মাসে ১০ হাজার টাকা কামাই করা যাবে। দরিদ্র ঋণগ্রস্থ বীরবাবুর চোখেমুখে তখন সচ্ছলতার চমক। এর মাঝেই একদিন টিভিতে দেখা গেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমার জয়জয়কার। কম বাজেটে বানানো সেসব সিনেমা ধুন্ধুমার ব্যবসা করছে সিনেমাহলে। তা দেখে বীরবাবু সিদ্ধান্ত নিলো যে এই ক্যামেরা সে ভাড়াও দেবে না, বিক্রিও করবে না, বরং সিনেমা বানাবে। টাকার নেশায় শুরু করা সে সিনেমা বানানোর ইচ্ছাই কখন প্যাশনে পরিণত হয়ে যায় শুধু বীরবাবুর না, পুরো গ্রামের সেটা নিয়েই সিনেমার গল্প।

সিনেমা বন্দী মূলত সেসব গাড়ি/রিকশা/বাহনকে বোঝায় যারা সিনেমার পোস্টার সেঁটে মাইকে মাইকে সিনেমার বিজ্ঞাপন করে গ্রামে-মফস্বলে। ভারত-বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে আগে এই চলটা ছিল। এখন তো নেই বললেই চলে। এই গল্পটাও মূলত একটা অটোরিকশা ও অটোরিকশাচালককে ঘিরেই। কিছু সিনেমা থাকে না, খুব পিওর। এটা সেরকম একটি সিনেমা। এত সরল ইমোশন, এত সহজিয়া জীবন-সিনেমায় উঠে আসে খুব কমই। একদিকে দারিদ্রতা, গ্রামের দুর্দশাগ্রস্থ জীবন অন্যদিকে সিনেমা মেকিং এর প্রতি ভালোবাসার অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে এই সিনেমায়।
আমি অনুরাগ কশ্যপ, রাজ এন্ড ডিকে এদের দেখে মুগ্ধ হয়। নিজেরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার ছিলেন, এখন সফল হয়ে তারা আরও অনেক অনেক ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমার পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমেরিকায় বেড়ে ওঠা রাজ এন্ড ডিকের কোনভাবেই তেলেঙ্গানার প্রত্যন্ত গ্রাম নিয়ে আইডিয়া থাকার কথা না। কিন্তু যারা ফিল্মমেকার তারা গল্প চিনতে জানেন, খুঁজতে জানেন। সেরকম গল্প তারা খুঁজে নিয়েছেন, প্রোডিউস করেছেন। এজন্য তাদের সাধুবাদ।
সিনেমা বন্দী সিনেমাকে ভালোবাসা, সিনেমা নিয়ে প্যাশন থাকা প্রতিটা মানুষের দেখা উচিত। এটা মূলত সিনেমাকে উদযাপন করে, সিনেমার ম্যাজিককে উপলব্ধি করায়। আমাদের প্রত্যেকের ভেতরকার ফিল্মমেকারকে তাগাদা দেয় কিছু করার জন্য।