'কান চলচ্চিত্র উৎসব' এর সম্মানজনক 'আঁ সার্তে রিগা' বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে 'রেহানা মরিয়ম নূর।' এ খবর সবারই জানা৷ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একই চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা 'মার্শে দ্যু ফিল্ম' এ নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের আরো তিনটি নির্মান৷ এখানেই শেষ নয়। অস্কারেও মনোনয়ন পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশের এক শর্টফিল্ম!

'ঈশ্বর যখন দেন, দু'হাত উপুড় করে দেন' বাংলার এই বহুল প্রচলিত প্রবাদের সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। এই প্রবাদেরই সার্থক রূপান্তর দেখি, বাংলাদেশের সংস্কৃতিক্ষেত্রের বর্তমান হালহকিকতের দিকে তাকালে। চারপাশ থেকে ক্রমশই আসছে একের পর এক সুসংবাদ। মন ভালো করে দেয়ার সন্দেশ। 

'কান চলচ্চিত্র উৎসব' এর 'আঁ সার্তে রিগা' বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে আবদুল্লাহ মোহম্মদ সাদ এর 'রেহানা মরিয়ম নূর।' এ খবর সবারই জানা৷ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একই চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা 'মার্শে দ্যু ফিল্ম' এ নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের তিনটি নির্মান৷ নির্মানগুলো নিয়ে বলার আগে জানা দরকার, মার্শে দ্যু ফিল্ম বিষয়টি নিয়ে। প্রায় প্রত্যেকটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের একটি করে বাণিজ্যিক শাখা থাকে। এই বাণিজ্যিক শাখায় তারা দেশবিদেশের বিভিন্ন নির্মানকে মনোয়নন দেন। এই নির্মানগুলোর উৎকর্ষ, অপকর্ষ, প্রচার, প্রসার সবকিছু নিয়ে কথা হয় এই বাণিজ্যিক শাখাগুলোতে৷ সেই প্রথা বজায় রেখেই, সম্মানজনক 'কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল' এর বাণিজ্যিক শাখাটির নাম মার্শে দ্যু ফিল্ম৷ 

আসা যাক এখানে মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশের নির্মানগুলোর প্রসঙ্গে। নির্বাচিত তিনটি নির্মানের মধ্যে দুটিই প্রামাণ্যচিত্র আর একটি সিনেমা। 'মুন্নি' আর 'থার্টিন ডেসটিনেশনস অব আ ট্রাভেলার' নামের দুটি প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে যাপিত জীবনের নানারকম সংগ্রামের গল্প। প্রামাণ্যচিত্র দুটি মার্শে দ্যু ফিল্মের ডকস ইন প্রগ্রেস-এর শোকেজ সাউথ এশিয়ায় স্থান পেয়েছে। এখান থেকেই পরবর্তীতে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে কাজ দুটি৷ যদিও নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়নি এখনও, তবে এরমধ্যেই বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে 'মুন্নি' আর 'থার্টিন ডেসটিনেশনস অব আ ট্রাভেলার' নিয়ে৷ 

পিছিয়ে পড়া একঝাঁক ফুটবলারের গল্প নিয়েই 'মুন্নি' প্রামাণ্যচিত্র! 

মার্শে দ্যু ফিল্মে মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি সিনেমাটির নাম 'মুভিং বাংলাদেশ।' পরিচালনায় নুহাশ হুমায়ূন৷ আগামী বছরে শুটিং শুরু হবে এই সিনেমার৷ শুটিং শুরুর আগেই 'মার্শে দ্যু ফিল্ম' এ নির্বাচিত হওয়ায়, গোটা টিম যে যারপরনাই খুশি, তা বলাই বাহুল্য।

মুভিং বাংলাদেশ! 

সুসংবাদ এখানেই শেষ নয়৷ আন্তর্জাতিক আরেকটি মঞ্চে যাওয়ার জন্যে আশাবাদী বাংলাদেশের আরেকটি নির্মান। অস্কারে কোয়ালিফাই করার জন্যে গোটা পৃথিবীতে দুইশোরও বেশি শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়৷ এসব ফেস্টিভ্যালে যেসব শর্টফিল্ম পুরস্কার জেতে, সেগুলো পৌঁছে যায় অস্কারের স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে।এরকমই তিনটি ' ইন্টারন্যাশনাল শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল' এ নমিনেশন পেয়েছে বাংলাদেশের একটি নির্মান। 'ট্রানজিট' নামের উনিশ মিনিটের এ শর্টফিল্মের পরিচালক আরিক আনাম খান৷ তাঁর নির্মিত 'ট্রানজিট' মনোনয়ন পেয়েছে লস অ্যাঞ্জেলস শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ফ্রান্সের 'ক্লেম ফেঁরা শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল' এবং 'এনকাউন্টারস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল' এ। এই তিনটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মধ্যে যেকোনো একটিতে পুরস্কার পেলেই অস্কারের মূল পর্বে পৌঁছে যাবে 'ট্রানজিট।'

অস্কারের শর্টফিল্মে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের ট্রানজিট কে! 

এই বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক যে, শুধুমাত্র সিনেমা বা ওটিটি কন্টেন্টেই না, বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিচ্ছে শর্টফিল্ম, প্রামাণ্যচিত্র'র মত কাজগুলো দিয়েও। ক্রমশই এক স্বকীয় সম্মানজনক আত্মপরিচয় হচ্ছে এই অপরিসর বদ্বীপের। যে পরিচয় গর্বের, অনুপ্রেরণার ও দায়িত্ববোধের। পেশাদারিত্ব, ত্যাগ ও মেধার সম্মেলনে এরকম সাফল্যবার্তা আরো বহুবার আসুক, এটাই কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা