ডক্টর: এক্সপেরিমেন্টাল প্লটের বানিজ্যিক নির্মাণ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
নেলসন দিলীপ কুমারের নির্মাণ 'ডক্টর' এর গল্প অনেকটাই নিরীক্ষাধর্মী। খানিকটা আন-অর্থোডক্স। থ্রিলার সিনেমা, কিডন্যাপিং, বাঘা ভিলেন... কমার্শিয়াল সিনেমার খুবই পরিচিত এসব মালমশলা তার সিনেমাতেও উপস্থিত, তবুও এই চেনাপরিচিত অনুষঙ্গ দিয়েই তিনি যে গল্প বানান, সে গল্প খানিকটা অনাস্বাদিতপূর্ব হিসেবেই ধরা দেয় দর্শকের কাছে।
থ্রিলার সিনেমার থিম হিসেবে 'কিডন্যাপিং' বেশ প্রচলিত এক বিষয়। নতুন কোনো সংযোজন না। আবার 'কিডন্যাপিং'কে উপজীব্য করে নির্মিত থ্রিলারগুলোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই লক্ষ্য করি এক কমন প্যাটার্ণ, যে প্যাটার্ণে নায়কের খুব কাছের একজনকে কিডন্যাপ করার পরে নায়ক তেড়েফুঁড়ে নেমে যান সেই মানুষকে উদ্ধার করার তাগিদে। রহস্যের জট ধীরে ধীরে খোলে। ক্লাইম্যাক্সে এসে ধরা পড়ে অপরাধী। গল্প শেষ, দর্শকের মুখে সন্তুষ্টির হাসি, পয়সা উসুল। কিন্তু যদি প্রেক্ষাপট এমন হয়, নায়ক একটা কিডন্যাপিং এর রহস্য উদঘাটন করার জন্যে নিজে উদ্যোগী হয়ে করছেন পালটা কিডন্যাপ, সে কিডন্যাপে তিনি আবার যুক্ত করেছেন প্রফেশনাল কিডন্যাপারদেরও, ক্রমশ এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একসময়ে তিনি এসে পড়ছেন কিডন্যাপিং এর মূলহোতার মুখোমুখি... কেমন হবে তখন? খানিকটা উল্টোপুরাণ মনে হবে না?
নেলসন দিলীপকুমারের নির্মাণ 'ডক্টর' এর গল্প অনেকটাই এরকম। খানিকটা আন-অর্থোডক্স। থ্রিলার সিনেমা, কিডন্যাপিং, বাঘা ভিলেন... কমার্শিয়াল সিনেমার খুবই পরিচিত এসব মালমশলা তার সিনেমাতেও উপস্থিত, তবুও এই চেনাপরিচিত অনুষঙ্গ দিয়েই তিনি যে গল্প বানান, সে গল্প খানিকটা অনাস্বাদিতপূর্ব হিসেবেই ধরা দেয় দর্শকের কাছে। যে গল্পের শুরুতেই দেখতে পাই একজন আর্মি ডাক্তারকে। কাঠখোট্টা এ ডাক্তার অনেকটা যেন 'মানি হাইস্ট' এর প্রফেসর। খুব একটা অনুভূতিপ্রবণ না। হৃদয়ের চেয়ে মস্তিষ্ককে বেশি প্রাধান্য দিয়ে গুছিয়ে নিজের কাজ ঠিকঠাকভাবে শেষ করাই তার ধ্যানজ্ঞান। অনুভূতিশূন্য এই ডাক্তার পাকেচক্রে একদিন জড়িয়ে পড়েন এক কিডন্যাপিং এর ঘটনার সাথে৷ কিডন্যাপিং এর পালের গোদাকে খুঁজতে সে পালটা আরেকটা কিডন্যাপ করে। গল্প আস্তে আস্তে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে। এগোয় প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে। বিপজ্জনক বাঁকের নানা গলিঘুঁজিতে।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, 'ডক্টর' এর গল্প শুনতে যতটা আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে, বাস্তবিকভাবে গল্প ততটা রঙিন না৷ কমার্শিয়াল মালমশলা যুক্ত করার কারণে গল্প মাঝেমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কিছু জায়গায় প্লটহোলও ছিলো চোখে পড়ার মতন। নেলসন দিলীপকুমার বানিজ্যিক সিনেমার 'ক্লিশে' সজ্ঞানে এড়াতে গিয়ে কিছু জায়গায় যেন সেই ক্লিশে বিষয়কেই আঁকড়ে ধরেছেন প্রাণপণে। ক্ষণেক্ষণেই মনে হয়েছে, এ গল্প যেভাবে শুরু হয়েছিলো, শেষতক সেই একই সুর বজায় রাখা যেতে পারলে, এ গল্প নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হতো, কড়চা হতো। কিন্তু সেটা যে হয়নি, সে দায় নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকারের জন্যেই বরাদ্দ থাকবে সর্বাগ্রে।
তবে গল্পজনিত আক্ষেপ খানিকটা কাটে অভিনয়ে। প্রোটাগনিস্ট শিবকার্তিকায়ণের অভিনয় বেশ ভালো। বিশেষ এক দৃশ্য ছাড়া গোটা সিনেমাতে গোমড়ামুখো হয়ে কাঠখোট্টা অবয়বে লড়ে গেছেন কিডন্যাপিং এর এই কেস নিয়ে। অ্যান্টাগনিস্ট বিনয় রায়ও অসাধারণ। তবে সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছি, যোগী বাবুর কমিক টাইমিংয়ে। তার অভিনয়ের রসটুকু বেশ প্রাসঙ্গিক, সময়োপযোগী। যেসব জায়গায় মনে হচ্ছিলো গল্প বিস্তর ঝুলে যাচ্ছে, সেসব জায়গাতে দুর্দান্ত কমিক রিলিফ এসেছে তার দিক থেকে। পাশাপাশি বিখ্যাত টুইন 'রঘু' ও 'রাজিব' এর স্বল্পদৈর্ঘ্যের অভিনয়ও বেশ বৈচিত্র্য এনেছে। বাকিরাও ঠিকঠাক। প্রাসঙ্গিক।
নেলসন তার সিনেমা নিয়ে বরাবরই এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করেন। 'ডক্টর'ও সেরকমই৷ এক্সপেরিমেন্টাল এক নির্মাণ। এই সিনেমার কিছু কিছু দৃশ্য বেশ অনবদ্যও৷ মেট্রোরেলে নাইট গগলস পরে ধস্তাধস্তি, অপহরণকে সামাল দিতে পালটা অপহরণ, সিরিয়াস থ্রিলার গল্পেও সফলভাবে ফান এলিমেন্টস আনা...এগুলো বেশ প্রশংসাযোগ্যও৷ কিন্তু এসব থাকার পরেও খানিকটা খচখচানি রয়ে যায় গল্পেই। গল্প আরেকটু জমাট বুনোটের হলেই এই খচখচানির মেঘ যে বেমালুম উবে যেতো, সেটিও নিশ্চিত। আশা থাকবে, নেলসনের পরবর্তী সিনেমায় এবারের অতৃপ্তিগুলো থাকবে না৷ জমাটি গল্পের আসরই বসবে সেখানে৷ ঠিক সে কারণেই থাকলো শুভকামনা। পাশাপাশি এটাও বলে রাখি, 'ডক্টর' ওয়ানটাইম ওয়াচ হিসেবে আদর্শ সিনেমা। সে হিসেবে নির্দ্বিধায় দেখা যেতেই পারে এই নির্মাণ!