হ্যান্ডস ডাউন টু জিথু জোসেফ এন্ড মোহনলাল। আপনাদের দুজনের পা ধরে মাফ চাইতে চাই আমি কারণ আমার এক্সপেক্টেশন লো ছিল দৃশ্যম টু এর জন্য। কিন্তু স্বাভাবিক না? ঐ এক ডার্ক নাইট, গডফাদার টু আর গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ২ ছাড়া কে-ই বা কবে সিকুয়েলে আশা পূরণ করতে পেরেছে? খুবই আনলাইকলি সিকুয়েলে একই না হলেও কাছাকাছি লেভেলের ভালো করা। তাও আবার আনপ্ল্যানড, ৭/৮ বছর পর। কিন্তু জিথু জোসেফ খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন যে চাইলে সব কিছুই কানেক্ট করা যায়।

দৃশ্যম যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকে শুরু হয়ে ৬ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও জর্জকুট্টি আর তার পরিবার এখনো স্বাভাবিক হতে পারে নি। সেই ট্রমা ঘুরফিরে প্রতিদিনই তাদের ভয় দেখায়। সিনেমাপাগল জর্জকুট্টি এখন নিজেই থিয়েটার খুলে সিনেমা প্রডিউস করার কথা ভাবছে। গল্পও তার মাথায় আছে, ঐসব নিয়েই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু তাঁর স্ত্রী, বড় মেয়ে এখনো ভয় পায় পুলিশের গাড়ি দেখলেই। আবারও যদি তাদের পরিবারকে ঐ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়! জর্জকুট্টির সেই কেস পুলিশের জন্য খুবই লজ্জাজনক এক অধ্যায় ছিল সে লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে এখনো ঢিমেতালে তারা তদন্ত চালায় মাঝেমধ্যেই। এরই মাঝে ঘটতে থাকে রহস্যজনক কিছু, জর্জকুট্টির স্ত্রীর বারবার মনে হতে থাকে এবার তারা ধরা পড়বেই। ওদিকে জর্জকুট্টির কোন বিকার নেই, সে শুধু বলে যায় শান্ত হতে। কিন্তু এক অশান্ত ঝড় যে অপেক্ষা করছে সব লণ্ডভণ্ড করে দেবার জন্য। এবার কি পারবে জর্জকুট্টি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে রক্ষা পেতে?

দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন মোহনলাল

থ্রিলার দেখার সবচেয়ে বড় মজা হল দর্শক হিসেবে আপনি প্রেডিক্ট করতে থাকবেন ক্রমাগত। কোন কোন সিন আপনি মিস করে যাবেন, কোন কোন সিন খুব খুটিয়ে দেখবেন। তারপর আবিষ্কার করবেন মিস করা সিনগুলোতেই আসলে রহস্যের চাবিকাঠি ছিল। তখন হেরে গিয়েও তৃপ্তি লাগবে। এজন্য থ্রিলার সবসময় ভালো লাগে। আর মালয়লাম থ্রিলারগুলো তো ক্লাস এপার্ট। এদের সাথে একমাত্র কোরিয়ান থ্রিলারই টেক্কা দিতে পারবে, স্প্যানিশরা সেকেন্ড ক্লোজ। আর কোন ইন্ডাস্ট্রি ধারেকাছেও নেই, আই রিপিট ধারেকাছেও নেই। দৃশ্যম টু দিয়ে আবারও সেটাই যেন প্রমাণ হল। এই সিনেমা আজ রিলিজ পেয়েছে, আজকেই তার রিমেক রাইটস কিনে ফেলা হয়েছে। বলিউডে দু-এক বছরের মাঝেই রিমেক হতে যাচ্ছে। সাথে আরও অনেক ইন্ডাস্ট্রিও যে রিমেক করবে তা বলাইবাহুল্য।

জিথু জোসেফ

এখন শেষ করছি আমার প্রিয় জিনিস রাইটিং নিয়ে কিছু কথা বলে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে জিথু জোসেফ দৃশ্যম করার সময় সিকুয়েল টানার প্ল্যান করেন নি। কারণ সিকুয়েলের প্ল্যান থাকলে গল্পে কিছু এলেমেন্ট রাখতে হয় যেটা থেকে পরে টেনে নতুন গল্প বিস্তৃত করা যাবে। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যখন সিনেমা সফল হবার পরে সিকুয়েলের চাহিদা ওঠে তখন নতুন করে গল্প সাজানোর সময় পুরোনো সাবপ্লটগুলোতে চোখ বুলাতে হয় সাথে নতুন অপরচুনিটিও ক্রিয়েট করতে হয়। জিথু জোসেফ এই দুইয়ের ব্যালেন্স দারুণভাবে করেছেন এই সিনেমার রাইটিং এ। তিনি পুরনো সময়ের কিছু পরিচিত সাবপ্লট টেনেছেন, তখন হয়েছে এরকম কিছু ঘটনা নতুন করে দেখিয়েছেন আবার নতুন প্লটেও এমন সব অপরচুনিটি বের করেছেন যা খালি চোখে দেখার সময় মনে হবে অপ্রয়োজনীয় কিন্তু পরে গিয়ে আবিষ্কার করা হবে প্লটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে। এমন রাইটিংকে স্ক্রিনে বাস্তবায়িত হতে দেখলেও আরাম লাগে।

হ্যাটস অফ টু টিম দৃশ্যম! 

 


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা