বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটা আবেগের, সম্পর্কটা তীব্র এক অনুভূতির। সেই সম্পর্কগুলো সেলুলয়েডে নানা সময়েই বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। নানা সময়ে এমন কিছু সিনেমা এসেছে বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের গভীরতাকে উপজীব্য করে, যেগুলো পেয়েছে কাল্ট ক্ল্যাসিকের মর্যাদা। বাবা দিবসে সিনেগল্পের পাঠকদের জন্য সেরকমই কয়েকটি সিনেমা নিয়ে রইলো আয়োজন...

১. Bicycle Thieves

সত্যজিৎ রায় আর অনুরাগ কাশ্যাপের ফিল্মমেকার হওয়ার পেছনে ছিল এই সিনেমার অবদান। হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়া এক বাবা একটা সাইকেল কেনেন নতুন কোন কাজ শুরুর জন্য, কিন্তু তখনই তার সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। নিজের ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাবা বেরিয়ে পড়েন সাইকেলের সন্ধানে। সিনেমার শেষ দৃশ্যটা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। 

২. To Kill a Mockingbird 

একই নামের উপন্যাস থেকে নির্মিত এই সিনেমার কাহিনি আবর্তিত হয়েছে এক বাবাকে নিয়ে যিনি তৎকালীন রেসিস্ট আমেরিকায় ধর্ষণ মামলায় একজন নিগ্রো ব্যক্তিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে লড়েন। সিনেমাটি দেখানো হয়েছে সেই বাবার মেয়ের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে। 

৩. Life is Beautiful 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক ইহুদি পরিবার কীভাবে যুদ্ধের বিপর্যস্ততার মধ্য দিয়ে যায় আর সেই পরিবারের বাবা কীভাবে মিথ্যা বলে তার ছেলেকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে, সেটা নিয়েই নির্মিত হয়েছে এই দুর্দান্ত সিনেমাটি। 

৪. Road to Perdition

গ্রেট ডিপ্রেশনের সময়কার গ্যাংস্টার ড্রামা জনরার সিনেমা এটি। মাথায় মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে এক গ্যাংস্টার বাবা যখন নিজের ছেলেকে নিয়ে নির্বাসনে বের হন, তখন দুজনের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন এই সিনেমার উপজীব্য। বাবা চরিত্রে টম হ্যাংকস আর খুনী চরিত্রে জুড ল ছিলেন অনবদ্য! 

৫. The Pursuit of Happyness

ক্রিস গার্নার নামের এক বাবার জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই সিনেমা নির্মিত। যে বাবা অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের জন্য নানা বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হন কিন্তু এর মাঝে নিজের একমাত্র ছেলেকে প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা দিতে আর জীবনের যেকোনো বাধাবিপত্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার শিক্ষা দিতে ভোলেন না। জীবনে কখনও লো ফিল করা যেকোনো মানুষের জন্য এই সিনেমা এক অর্থে কার্যকরী ওষুধের মত কাজ করবে। 

পারসুইট অফ হ্যাপিনেস সিনেমার একটি দৃশ্য

৬. World's Greatest Dad 

এক্সিডেন্টলি মারা যাওয়া নিজের ছেলের মৃত্যুর পর একটি সুইসাইড নোট খুঁজে পান তার শিক্ষক বাবা। এই সুইসাইড নোট পাওয়ার পর থেকে একজন বাবার চারপাশ কীভাবে বদলে যায় তা নিয়েই এই সিনেমার কাহিনি। রবিন উইলিয়ামসের ওয়ান অফ দ্য ফাইনেস্ট পার্ফরমেন্স। 

৭. Captain Fantastic

লোকালয় থেকে দূরে রেখে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না দিয়ে নিজের সন্তানদের নিজের মত করে, নিজের জ্ঞান অনুযায়ী শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলছিলেন একজন বাবা। একটি ঘটনায় বাধ্য হয়ে অনেকদিন পর তাদের লোকালয়ে আসতে হয়। কীভাবে পেরে উঠবে তারা এখন লোকালয়ের মানুষের সাথে? খুবই চমৎকার আর ভাবনার উদ্রেককারী একটি সিনেমা। 

৮. Logan

উলভারিন ফ্যান বা অন্য অনেকের কাছে এই সিনেমাটা সুপারহিরো সিনেমা মনে হলেও আমার কাছে সিনেমাটিকে বাবা মেয়ের মধ্যকার নিবিড় সম্পর্কের সিনেমা বলেই মনে হয়। একজন সুপারহিরো বাবা কী পরিমাণ উদ্বেগ আর আশংকার মধ্য দিয়ে যান যখন তার একজন সন্তান থাকে, সেই ব্যাপারটা এই সিনেমাতে বেশ ভালভাবেই ফুটে উঠেছে।

৯। The Father

স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে আক্রান্ত এক বয়স্ক বাবা কীভাবে আস্তেধীরে সব ভুলতে বসেন আর সে কারণে তার মেয়েকে কীসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা নিয়েই এই সিনেমার গল্প। মূল চরিত্রে এন্থনি হপকিন্স এতটাই ভাল অভিনয় করেছেন যে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক অভিনেতা হিসেবে গতবছরের অস্কারটা খুব সহজেই তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন। 

১০. Like Father Like Son

নিজের  বাচ্চার সপ্তম জন্মদিন পালন করতে যাওয়ার সময় একটি ফোন সবকিছু এলোমেলো করে দিল। যেই হাসপাতালে বাবার ছেলে জন্মগ্রহণ করেছিল, সেই হাসপাতাল থেকে একটি ফোন আসল- সাত বছর আগে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করা ছেলেটি আসলে তার ছেলে নয়। হাসপাতালের ছোটো একটা ভুলের কারণে আরেকজনের ছেলের সাথে তার ছেলে "পাল্টাপাল্টি" হয়ে গিয়েছিল। "আসল" ছেলেকে যদিও ফিরে পাওয়া গেছে, কিন্তু বাবা এখন কী করবেন? হিরোকাজু কোরিদার এই সিনেমা আপনাকে আবেগাক্রান্ত করবেই।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা