'বিগ ফিশ' বলি, কিংবা, 'কারওয়ান' অথবা 'লিটল ফরেস্ট'- এই সিনেমাগুলোর একটা বড় গুণ, শেষে এসে তারা আর নিছক সিনেমা হয়ে থাকে না। বরং, তারা জীবনেরই অংশ হয়ে যায় ক্রমশ। এবং, ঠিক সেজন্যে হলেও, এই সিনেমাগুলো মাস্টওয়াচ। আর কিছু না হোক, কোনো কিছু শেখা না হোক, অন্ততপক্ষে এ সিনেমাগুলোর বরাতে কিছু সময় যে ভালো কাটবে, তা হলফ করে বলাই যায়...

যেকোনো উৎসবে মানুষের ঘরে ফেরার টানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বোধহয়, প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঝাড়া হাত-পা হয়ে কিছুদিন থাকার সাধ। যেহেতু যাপিত 'ব্যস্ততা' আমাদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখে সর্বক্ষণ, সেহেতু মাঝেমধ্যে দুয়েকটা বিরতি পেলে তা 'মহার্ঘ' এক আমেজেই পরিণত হয়। এবং এরকম দুর্লভ সময়েই বাদবাকি সবকিছুর পাশাপাশি চোখ রাখা যেতে পারে এমন কিছু সিনেমাতে, যারা মন তো ভালো করেই, পাশাপাশি, জীবনের নানা সংকটেরও উত্তর দেয়। কিভাবে? চলুন সেটাই বরং জেনে আসা যাক! 

১. সারভাইভাল ফ্যামিলি

'টোকিও'তে হঠাৎ করে এক সকালে দেখা দেয় লোডশেডিং। এমন লোডশেডিং, যে লোডশেডিংয়ে মাসের পর মাস কেটে যায়, বিদ্যুৎ আর আসেনা। এই নিঃসীম ব্ল্যাকআউটের মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করা এক দম্পতির বিদ্যুৎ-বিহীন জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার গল্পই 'সারভাইভাল ফ্যামিলি।' বিদ্যুৎ এর অভাবে প্রথমে মোবাইলগুলো অচল হয়। বন্ধ হয় সুপারশপগুলোতে এটিএম কার্ড দিয়ে জিনিসপত্র কেনাও৷ হুট করেই মানুষ আবিষ্কার করে, তাদের গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, প্রচুর টাকা আছে, কিন্তু খাবার নেই। পানীয় জল নেই। কী করবে তারা? তারা কী এই ইট-কাঠ-কংক্রিটের জঙ্গলে টিকে থাকবে, নাকি, হারিয়ে যাবে? ঠিক এরকমই এক সময়ে সিনেমার পরিবারটি নেমে পড়ে জীবনযুদ্ধে। বেঁচে থাকার যুদ্ধে।

সারভাইভাল ফ্যামিলি

২. দ্য হেল্প

আমেরিকায় 'বর্ণবিদ্বেষ' নামক বিষবৃক্ষ বহুদিন ধরেই দণ্ডায়মান। এই বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে সিনেমাও আছে অজস্র। দ্য গ্রিন বুক, ম্যালকম এক্স, দ্য হারিকেন, মিসিসিপি বার্নিং, দ্য হেট ইউ গিভ, টুয়েলভ ইয়ারস আ স্লেভ.... অনেক সিনেমা। সেই একই 'বর্ণবিদ্বেষ' এর এক ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে  সিনেমা 'দ্য হেল্প৷' যে সিনেমা শুরুই হয় এমন একটি গ্রামে, যে গ্রামে সাদা চামড়া পরিবারগুলোতে কাজ করতো কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা। বলাবাহুল্য, তুচ্ছ নানা কারণেও এই কালো মানুষদের উপরে অমানুষিক নানা নির্যাতন চালাতো শ্বেতাঙ্গ প্রভুরা। কিন্তু এই  নির্যাতনও একদিন থেমে যায়। তাও থেমে যায় 'The Help' নামের একটি বইয়ের কারণে৷ কীভাবে? এই বইয়ের সাথে ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকে এক শ্বেতাঙ্গ নারীরও। তাও বা কিভাবে? মূলত, সেসব নিয়েই এ সিনেমা। রেসিজম রিলেটেড সিনেমা ভালো লাগলে, এ নির্মাণ দেখতে হবে৷ 'ফিল গুড মুভি' দেখতে চাইলে, তাও দেখতে হবে 'দ্য হেল্প।' 

দ্য হেল্প

৩. দ্য ব্লাইন্ড সাইড

প্রফেশনাল আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড় মাইকেল ওহারের জীবনের সত্যঘটনা অবলম্বনে  নির্মিত এ সিনেমা প্রথম থেকেই দুরন্ত জীবনবোধের৷ সিনেমার প্রোটাগনিস্ট মাইকেল ওহারের প্রথম জীবন কেটেছিলো নানা টানাপোড়েনে। মাদকাসক্ত বাবা-মা'র সন্তান হিসেবে বড় হয়ে ওঠাটা খুব সুখকর হয়নি তার। কৈশোরের ডামাডোলের এ সময়ে তার পরিচয় হয় লেই অ্যান নামক এক মহিলার সাথে। যে লেই অ্যান তাকে দত্তক নিয়ে আনেন নিজের বাড়িতে। তিনি ক্রমশ রূপান্তরিত হন ওহারের দ্বিতীয় মা'তে। এই মায়ের ত্যাগ, শ্রম আর ঐকান্তিক ইচ্ছেতেই মাইকেল ওহার একসময়ে হন আমেরিকার অন্যতম কিংবদন্তি ফুটবল খেলোয়াড়। এবং ঠিক এভাবেই 'দ্য ব্লাইন্ড সাইড' বোঝায়, বায়োলজিকালি মা না হয়েও মাতৃত্বের অপত্যস্নেহে একটা মানুষের জীবন পুরোপুরি বদলে দেয়া সম্ভব। জীবনের গতিপথ পালটে দেয়া সম্ভব। অসম্ভব মন ভালো করা এ সিনেমা যেমন ভালো লাগার, তেমনি স্যান্ড্রা বুলকের 'অস্কার-উইনিং' পারফরম্যান্সও এ সিনেমার অন্যতম বিশেষ প্রাপ্তি।

দ্য ব্লাইন্ড সাইড

৪. দ্য টার্মিনাল

এ সিনেমায় ভিক্টর নভোরস্কি নামক এক মানুষ আটকে পড়েন 'জন এফ কেনেডি' নামে পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত এক এয়ারপোর্টে। নভোরস্কি খুব বিরল রাজনৈতিক জটিলতার মুখোমুখি হয়ে আমেরিকার নুড়িমাখা সড়কে হাঁটার অনুমতি পান না। অথচ তিনি সে সড়কে নামতে চান, কৌটোভর্তি বাবার স্বপ্ন সত্যি করতে চান। কিন্তু নাচার প্রশাসনের মন গলেনা। মুক্ত হবার সকল দ্বার ক্রমশই যখন রুদ্ধ হতে থাকে, তখন এই মানুষটি এয়ারপোর্টকেই বানান ঘরবাড়ি। সেখানেই অদৃশ্য কালিতে লিখতে থাকেন দিনযাপনের কড়চা। এবং এভাবেই এগোতে থাকে গল্প। স্পিলবার্গের দুর্দান্ত পরিচালনার পাশাপাশি এ সিনেমায় মুগ্ধ করে 'ভিক্টর নভোরস্কি' চরিত্রে টম হ্যাংকসের অসাধারণ অভিনয়ও। নিষ্পাপ চাহনি, অবাক সারল্য আর গভীর জীবন-দর্শনে পুরো সিনেমাই যেন হয়ে থাকে 'একক ক্ষমতাপ্রদর্শনী'র দারুণ মহামঞ্চ। এ সিনেমা এভাবেই হয়ে থাকে বিষন্নতার দাওয়াই। মন খারাপের ওষুধ। 

দ্য টার্মিনাল

৫. আ ট্যাক্সি ড্রাইভার

আশির দশকের কোরিয়ার এক ছোট্ট শহর গোয়াঞ্জো৷ সেখানে প্রশাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় মুক্তিকামী কিছু মানুষ৷ শুরু হয় দু'পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ। এই সংবাদ কাভার করার জন্যে এক জার্মান সাংবাদিক চলে আসেন কোরিয়ায়। কিন্তু কিভাবে যাবেন ঘটনাস্থলে? সব রাস্তাই তো বন্ধ। মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে এক ড্রাইভারকে তিনি শেষমেষ রাজি করান। সেই ট্যাক্সি নিয়ে দুর্গম পথ পেরিয়ে পৌঁছান গোয়াঞ্জো'তে। কভার করেন স্টোরি৷ কিন্তু ফেরার পথে অকস্মাৎ চোখে পড়ে যান ঘাতকদের। গল্প মোড় বদলায়। এবং এভাবেই ক্রমশ কমেডি, হিউমার, সাসপেন্স, ক্রাইসিস... নানা চলকের মোড়কে এগোতে থাকে গল্প। ধীরে ধীরে। সাবলীলভাবে। তিলে তিলে এভাবে এগোনো এই সিনেমা যখন শেষ হয়, তখন মন ভরে ওঠে অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে। কেন এ প্রশান্তি, সেটার জন্যে সিনেমাটা দেখাই হবে সমীচীন।

আ ট্যাক্সি ড্রাইভার

৬. বিগ ফিশ

'বিগ ফিশ' জীবনের গল্প। জীবনবোধের গল্প। ম্যাজিক রিয়েলিটির গল্প। ফ্যান্টাসিরও গল্প। এ সিনেমার প্রোটাগনিস্ট 'এড ব্লুম সিনিয়র' ঘুরেছেন পৃথিবীর পথে পথে। মুখোমুখি হয়েছেন বহুকিছুর। দেখেছেন, শিখেছেন, জেনেছেন নানা সত্য, বিচিত্র তথ্য। এই যে 'পায়ের তলায় সর্ষে' জীবন তার, তা তিনি তার সন্তানকেও জানিয়েওছেন। বহুবার। বহু গল্পে। কিন্তু তার সন্তান সেসব বিশ্বাস করেনি। সে ভেবেছে, বাবা হয়তো বানিয়ে বানিয়ে বলেছে এসব ছেলেভোলানো গল্প। যেটা সব বাবারাই করে। কিন্তু আসলেই কি তাই? 'এড ব্লুম সিনিয়র' এর এই যে অদ্ভুতুড়ে জীবন-আখ্যান, এর কি পুরোটাই ভ্রম? নাকি, নির্জলা সত্যি? এ সত্য ঘটনা অনুসন্ধানের সাথে 'বিগ ফিশ' এরও বা সম্পর্ক কি? এসব নিয়েই এই সিনেমা। মন ভালো হয়ে যাওয়ার মত সিনেমা।

বিগ ফিশ

৭. কারওয়ান

'রোড ট্রিপ' সিনেমা তো বরাবরই বেশ প্রিয়। আর সেরকম এক সিনেমায় যদি থাকে ইরফান খানের মত গুণী শিল্পী, তাহলে আর কথাই নেই যেন। 'কারওয়ান'ও ঠিক সেরকম। স্যাটায়ার, হিউমার, ন্যাচার কিংবা ইমোশনাল রোলারকোস্টার তো আছেই, পাশাপাশি, এ গল্পে কেমন যেন স্পষ্ট হয় সম্পর্কের নানামাত্রিক জটিলতাও। এবং এ জটিলতার সরল আখ্যানই মূলত এই সিনেমাকে করে অন্য সব সিনেমার চেয়ে খানিকটা হলেও পৃথক। গল্পের শুরুতে যেমন কোচি'গামী ইরফান খানের সাথে পাকেচক্রে দেখা হয় দুলকার ও মিথিলার, এই দেখা হওয়ার পরেই তাদের জীবন পালটায় দ্রুতগতিতে। তিনজন জটিল মানুষ একত্রে সময়ের যত গভীরে যেতে থাকে, তাদের ক্রমশই পরিচয় হয় নানা ভাষার, নানা সংস্কৃতির, নানা ঘটনা-দূর্ঘটনার সাথে। মৃদুলয়ে এভাবেই প্রকাশিত হতে থাকে গল্প। পাশাপাশি, এই তিন প্রাণীর জীবন আখ্যানও। এবং, অবশ্যই, প্রকাশিত হতে থাকে জীবনের জটিলতাও। 

কারওয়ান

৮. গ্রিন বুক

'ট্রাভেল' জঁরার সিনেমায় জটিল বিষয়আশয় কিংবা সামাজিক বৈষম্য নিয়ে কথাবার্তা হয় খুব কম। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন- 'গ্রিন বুক।' এ সিনেমায় ভ্রমণগাঁথার ক্যানভাসে খুব স্পষ্টভাবেই প্রকাশিত হয় বর্ণবৈষম্যের বিষবৃক্ষ। ষাটের দশকের আমেরিকা, যে আমেরিকায় বর্ণবৈষম্য ছিলো এখনের চেয়েও তীব্র, সে সময়ে হোয়াইট ম্যান টনি ভ্যালেলঙ্গার গাড়িতে চেপে 'কান্ট্রি ট্যুর' এ বেড়িয়ে পড়েন আফ্রিকান আমেরিকান সিঙ্গার ডন শিরলি। ডন শিরলি কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় যাত্রাপথে যেভাবে নানা বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয় তাকে, এবং এ বৈষম্যের সাথে যেভাবে চলে তার লড়াই, সেসবের বয়ানই 'গ্রিন বুক'কে করে অন্যান্য সিনেমা থেকে স্বকীয়, পৃথক। এবং এভাবেই চলতে থাকা সিনেমা শেষাংশে এসে যেভাবে আশাবাদী করে, ভালোবাসার শিক্ষা দেয়, সেখান থেকেও শেখার থাকে বহুকিছু। 

গ্রিন বুক

৯. লিটল মিস সানশাইন 

পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যকে একটা।কম্পিটিশনে নিয়ে যাওয়ার জন্যে পরিবারের বাকিরা মিলে বহু দূরের গন্তব্যে শুরু করলেন যাত্রা। সে যাত্রাপথে হলো বহু অঘটন। যাত্রার বাহন যে বাস, সে বাস যাত্রাপথে ইস্তফা দিলো কাজে। পরিবারের একেক সদস্য একেক রকম কীর্তিকলাপে জেরবার করতে লাগলো বাকিদের। শেষমেশ এমন অবস্থা দাঁড়ালো, যে কম্পিটিশনের জন্যে এত কাঠখড় পোড়ানো, সেখানে যাওয়াই হলো অনিশ্চিত। শেষমেশ, এই পরিবারের গন্তব্যে পৌঁছানো হবে, নাকি, অদ্ভুত সব কীর্তিকলাপে মাঝপথেই থেমে যাবে তারা, সেসব নিয়েই জমাটি নির্মাণ 'লিটল মিস সানশাইন।' যারা রসবোধের মোড়কে খুব গভীর কিছু জীবনবোধ চান, তাদের জন্যে এ সিনেমা রেকোমেন্ডেড। যারা সিনেমা থেকে শুধু হাসির রসদ পেতে চান, তাদের জন্যেও এ সিনেমা রেকোমেন্ডেড। 

লিটল মিস সানশাইন

১০. কারিব কারিব সিঙ্গেল

অনলাইন ডেটিং অ্যাপে পরিচয় হওয়া 'যোগী' এবং 'জয়া'র যাত্রাপথটা ভিন্ন৷ জীবনকে তারা দেখেছেন ভিন্ন চোখে। ভিন্ন আলোতে। আপাতদৃষ্টে পুরোপুরি বিপরীত দুই মেরুতে অবস্থান করা এই দুই মানব-মানবী এক পথে হাঁটবে, সিনেমার শুরুতে এমনটা ভাবা দুঃসাধ্য হলেও গল্প যতই সামতে এগোতে থাকে, বোঝা যায়- নিয়তি তাদেরকে একই সরললেখার যাত্রীই বানাচ্ছে ক্রমশ। এবং এই যাত্রাপথেরই গল্প 'কারিব কারিব সিঙ্গেল।' দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি, ঋষিকেশ, ইরফান-পার্বতীর দুর্দান্ত অভিনয়... সব মিলেমিশে এ সিনেমা এমন কিছু বার্তা দেয়, এমন কিছু জীবনবোধের মুখোমুখি করে... যা সাথে থেকে যায় বহুদিন। এ সিনেমার সার্থকতাও সেটাই।

কারিব কারিব সিঙ্গেল

১১. সিনেমা প্যারাডিসো

যুদ্ধ-পরবর্তী ছোট মফস্বল শহরের বালক তোতোর সাথে সম্পর্ক হয় সে শহরের একমাত্র সিনেমাহলের প্রজেকশনিস্ট আলফ্রেডের৷ 'সিনেমা প্যারাডিসো'র অভ্যন্তরে এই দুই অসমবয়সী বন্ধুর কাটে অন্যরকম দিন। সিনেমা, সিনেমার রীল, বায়োস্কোপে ভেসে আসে তোতোর জীবন, প্রেম, বিচ্ছেদ... নানাবিধ অনুষঙ্গ। একসময়ে তোতো বড় হয়। নির্মাতা হয়। বহু বছর পরে সে ফিরে আসে নিজের শৈশবের শহরে। যায় পুরোনো বন্ধু আলফ্রেডের বাড়িতেও। সে বাড়িতে গিয়ে সে খুঁজে পায় অন্যরকম এক উপহার। কি সেই উপহার? সেটা যখন জানা যায়, 'সিনেমা প্যারাডিসো' তখনই হয়ে যায় জীবনের অংশ। যারা সিনেমা ভালোবাসেন, তাদের সবারই বিশেষ প্রিয় এ সিনেমা মন ভালো করে। হয়তো খানিকটা বিষণ্ণও করে। 

সিনেমা প্যারাডিসো

১২. লিটল ফরেস্ট

জীবনের নানা জটিলতায় নাভিশ্বাস ওঠা এক  তরুণী সবকিছু ছেড়ে চলে আসে মায়ের গ্রামে। যদিও যে মায়ের সন্ধানে আসা, সে মা তখন নিরুদ্দেশ। অগত্যা, শুরু হয় মেয়েটির নিঃসঙ্গ জীবন। মায়ের বানানো ছোট্ট সবজির বাগান, যে বাগানকে ডাকা হয় 'লিটল ফরেস্ট', সে বাগানের সবজি নিয়ে নানারকম রান্নার রেসিপি, স্থানীয় দুই বন্ধুর মিঠেকড়া রসায়ন... সব মিলেমিশে কাটতে থাকে এই তরুণীর অম্লমধুর জীবন। নিভৃতে। মাটির সংস্পর্শে। খাবারের প্রলেপে জীবনের নানা অধ্যায় যেভাবে উঠে আসে এ সিনেমার বিভিন্ন অংশে, তা মুগ্ধ যেমন করে, তেমনি ভেতরে ভেতরে চিন্তা-ভাবনার নানা শেকড়-বাকড়কেও পরিশীলিত করে। এ সিনেমার চমৎকারিত্বও মূলত সেখানেই।

লিটল ফরেস্ট

১৩. গ্রাউন্ডহগ ডে

নিউজ কাভার করতে প্রত্যন্ত এক গ্রামে গেলেন দাম্ভিক এক সাংবাদিক। এবং সেখানে গিয়েই তিনি আটকে গেলেন সময়ের বিরল এক ফাঁকে। তিনি দেখতে পেলেন, একটা একটা করে যদিও দিন পার হচ্ছে, কিন্তু সময় থেমে আছে ক্যালেন্ডারের এক বিশেষ দিনে। প্রথম প্রথম এই অদ্ভুতুড়ে বিষয়ের সাথে মানিয়ে নিতে খানিকটা কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হলেন তিনি। প্রতিদিনই করতে লাগলেন নতুন কিছু। একই সময়, অথচ সে সময়কে তিনি কাজে লাগাতে লাগলেন নানাভাবে। এই সময়ের মধ্যেই তার জীবনে প্রেম এলো। অনেক কিছু শিখলেন। অনেক কিছু করলেনও। সময়ের এই অদ্ভুত টানাপোড়েন এভাবে এই সাংবাদিকের জীবন যেভাবে পাল্টালো, 'গ্রাউন্ডহগ ডে' মূলত সে সময়েরই বিশেষ সাক্ষী হয়ে রইলো! 

১৪. অ্যামেলি 

এ সিনেমা মূলত ভালোবাসার সিনেমা। 'অ্যামিলি' নামের এক মেয়ে, যার শৈশব কেটেছে বিভ্রান্তির নানা মোড়কে, সে মেয়েটি আচমকা একদিন বেড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর ধূলিধূসর পথে। আশেপাশের মানুষদের ভালোবাসার রাংতায় জড়িয়ে রাখার অদ্ভুত নেশা পেয়ে বসে তাকে। দুনিয়া চষে বেড়ানোর এই যাত্রাপথে মণিমুক্তার মতই সে ছড়াতে থাকে নানাবিধ পেলব মানবীয় অনুভূতি। এবং এই যাত্রাপথই হয়ে থাকে সিনেমার সারাংশ, যে সিনেমার নাম 'অ্যামেলি।' ঝঞ্জাটের এ পৃথিবীতে 'অ্যামিলি' আসলে কতটুকু পার্থক্য গড়তে পারে কি পারেনা, এ নির্মাণের বরাতে সে তো জানা যায়ই, পাশাপাশি, কোথাও গিয়ে যেন এ সিনেমা ভেতরকেই শান্ত করে দেয় পুরোপুরি।

অ্যামেলি

১৫. নীলাকাশাম পাচাকাধাল চাভান্না ভূমি

'দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরিজ' এর আর্নেস্তো ও গ্রানাদার মতই দুই বন্ধু- কাশী ও সুনি মোটরসাইকেলে চেপে একদিন বেরিয়ে পড়ে বাইরে। ব্যাঙ্গালোর ও ভাইজাগ হয়ে উড়িষ্যা, ডাকাতদলের খপ্পড়, পুরীর সমুদ্রে সার্ফিং কম্পিটিশন, নাগাল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা... আসে বহুকিছুই। এসবের মাঝখানে দক্ষিন ভারতের অদ্ভুত স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আছেই। দুই বন্ধুর এই 'রোড ট্রিপ' যেমন প্রাকৃতিকভাবে মুগ্ধ করে, তেমনি দেয় কিছু গভীর জীবনবোধেরও সন্ধান৷ বহু বছর পার হলেও তাই এ সিনেমা নিয়ে আলোচনা কমেনা। কমেনা বিস্ময়ের মাত্রাও।

নীলাকাশাম পাচাকাধাল চাভান্না ভূমি

'ফিল গুড' জঁরার এই সিনেমাগুলোর একটা বড় গুণ, শেষে এসে তারা আর নিছক সিনেমা হয়ে থাকে না। বরং, তারা জীবনেরই অংশ হয়ে যায় ক্রমশ। এবং, ঠিক সেজন্যে হলেও, এই সিনেমাগুলো মাস্টওয়াচ। আর কিছু না হোক, কোনো কিছু শেখা না হোক, অন্ততপক্ষে এ সিনেমাগুলোর বরাতে কিছু সময় যে ভালো কাটবে, তা হলফ করে বলাই যায়। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা