ফ্রেশ বাংলাদেশ: যুদ্ধের মোড়কে সামাজিক বার্তা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এই টিভিসি'র উপজীব্য রণাঙ্গনের অদম্য যোদ্ধা 'সুফিয়া বেগম' কোথাও গিয়ে যেন নাম না জানা সেসব নারীরই প্রতিবিম্ব, যারা যুদ্ধের নয়মাস পর্দার অলক্ষ্যে থেকে চালিয়েছিলেন সংগ্রাম, হয়েছিলেন যুদ্ধ-জয়ের অন্যতম প্রভাবক। 'সুফিয়া বেগম'কে প্রোটাগনিস্ট করে এ নির্মাণে মূলত স্মরণ করা হয় সেসব লড়াকু নারীকেই...
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ শুধু রণাঙ্গনে না। যুদ্ধ পুরো দেশেই। অথবা পুরো দেশই তখন রণাঙ্গন। কেউ অস্ত্র হাতে লড়ছে। অথবা কারো লড়াইটা ব্যক্তিগত। চেনা আশ্রয়ের প্রিয় মানুষ ছেড়ে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চলছে কারো। কেউ আবার নিজ চৌহদ্দিতে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছেন সংগ্রাম। যুদ্ধ মানে তো শুধু অস্ত্র হাতে মুখোমুখি শত্রু নিকেষ করা না। যারা যুদ্ধের পুরোটা সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য-টাকাপয়সার যোগান দিলেন, গুপ্তচর হয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আনলেন শত্রুদলের নীলনকশা...এই মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানও কি কম?
এরকমই একজন সুফিয়া বেগম। এলাকার সবাই হানাদারদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালালেও যিনি পালান না। বরং বাবার হাত ধরে থেকে যান নিজ আবাসেই। যদি মরতে হয়, নিজভূমে থেকেই মরবেন। তবু নড়বেন না একচুল। সুফিয়া ও তার বাবা শুধু থেকেই গেলেন না, সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেন স্বাধীনতা-সংগ্রামেও। রাতের আঁধারে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানো, পাকবাহিনীর গোপন সব মিশনের তথ্য নিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো, সবই করতেন তারা৷ এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলেও হতো। কিন্তু সুফিয়া একদিন বন্দুক চালানোও শিখে নিলেন। মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলে ঘায়েল করলেন পাকিদের। মুচকি হেসে জানালেন-
টেরনিং-মেরনিং কিছু না। যে দেশরে ভালোবাইসা যুদ্ধে নামে, তারে কেউই হারাইতে পারে না৷
'ফ্রেশ বাংলাদেশ' এর সাম্প্রতিকতম টিভিসি'র উপজীব্য রণাঙ্গনের অদম্য 'সুফিয়া বেগম' কোথাও গিয়ে যেন নাম না জানা সেসব নারীরই প্রতিবিম্ব, যারা যুদ্ধের নয়মাস পর্দার অলক্ষ্যে থেকে চালিয়েছিলেন সংগ্রাম, হয়েছিলেন যুদ্ধ-জয়ের অন্যতম প্রভাবক। এ বিজ্ঞাপনে প্রোটাগনিস্ট 'সুফিয়া বেগম' এর মধ্যে দিয়ে মূলত তাই স্মরণ করা হয় সেসব লড়াকু নারীকেই। তাছাড়া আজকাল বিজ্ঞাপন যে আর শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনেই আটকে নেই, বরং বিজ্ঞাপন হয়েছে দুর্দান্ত গল্প বলার মাধ্যম, সেটার প্রমাণও আরেকবার পাই এখানে।
ভেবেছিলাম, এই নির্মাণে যুদ্ধের মোড়কেই দেখবো সব। কিন্তু চমক ভাঙ্গলো তখনই, যখন দেখলাম, মূলত 'ব্রেস্ট ক্যান্সার' নিয়ে সচেতনতার জন্যে করা হয়েছে এ বিজ্ঞাপন। যে সুফিয়া বেগম অস্ত্র হাতে ঘায়েল করেছিলেন একাধিক পাক-হানাদারকে, সেই মানুষকেই হার মানতে হয়েছিলো হিংস্র ঘাতক 'ব্রেস্ট ক্যান্সার' এর কাছে। যেভাবে একাত্তরের সুফিয়ার সাথে এই সুফিয়াকে মেলানো হলো, সেখানেই এই বিজ্ঞাপন নিয়ে এলো চমৎকারিত্বের আবহ। প্রত্যক্ষ শত্রুর চেয়ে যে পরোক্ষ শত্রু অনেক বেশি মারাত্মক, এই 'ব্রেস্ট ক্যান্সার' এর বিরুদ্ধেও যে চাই একাত্তরের মতই দুর্বার-দুর্নিবার প্রতিরোধ...খুব সূক্ষ্মভাবে উঠে এলো এই বার্তাও।
সারাবিশ্বে প্রতিদিন উনিশ জন মানুষ মারা যান ব্রেস্ট ক্যান্সারে। বাংলাদেশেও এই সংখ্যাটা কম না মোটেও। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষে গড়ে ত্রিশ জন মারা যাচ্ছেন বিশেষ এ ব্যাধিতে। যখন এই লেখাটা লিখছি, আমার পরিচিত একজন তখন ছুটছেন হাসপাতালে-হাসপাতালে, ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার পেছনে নিয়মিত খরচ করছেন লাখখানেক টাকা। অথচ ঠিক সময়ে সচেতন হলে, এরকম দুর্দশা আসতো না মোটেও। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ব্রেস্ট ক্যান্সার যে মোটেও গুরুতর না, সেটা তো ধ্রুবসত্যিও। শুধুমাত্র অজ্ঞানতার জন্যেই যে এ রোগ ক্রমশ পেরিয়ে যাচ্ছে নিরাপদ সীমার গণ্ডি, সেটা ভাবলে যেমন বিস্মিত হই। ক্ষুব্ধও হই। নিজেদের উদাসীনতায় বিব্রতও হই।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাংলাদেশে কম খরচে ব্রেস্ট ক্যান্সারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্যে আছে অজস্র সব প্রতিষ্ঠান। চাইলেই সেবা নিতে পারেন যে কেউ। যে রোগ নিমেষেই প্রাণ কেড়ে নেয়, সে রোগ হেলাফেলার বিষয় না মোটেও। একটু সচেতন হলেই যেখানে নিজের জীবন রাখা যায় নিরাপদ, সেখানে সেই সতর্কতাই হতে পারে নিরাপত্তার একমাত্র প্রভাবক। আশা রাখি, 'ফ্রেশ বাংলাদেশ' এর এই টিভিসি মানুষকে ভাবাবে, জাগাবে এবং উপলব্ধি করাবে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ভয়াবহতা। এবং মানুষ যদি এই রোগ নিয়ে তিলমাত্রও সচেতন হয়, এই বিজ্ঞাপনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মেলবন্ধন ঘটবে ঠিক তখনই। শুভবুদ্ধির উদয় হোক সবার, এটাই প্রত্যাশা।