হ্যারি পটারের রিইউনিয়ন দেখে স্রোতস্বিনী নদীর মতো গলগল করে নস্টালজিয়ার স্রোত আগলে ধরলো। অতীতের স্মৃতিচারণ আর বর্তমানের মানুষগুলোকে নিয়ে আবার ঘুরে এলাম যেন হগওয়ার্টস থেকে। ত্রিশের কোটা পার করে ফেলা মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে এলাম টিনেজ থেকে। অনেক প্রিয় চরিত্র প্রয়াত হয়ে গেছে, তাদের আরও একবার মনে করে নিলাম...
There is something about Harry Potter, that makes life richer. Like, when things get really dark and times are really hard, stories gives us places we can go, where we can rest and feel held.
হ্যারি পটার যখন প্রথম আমার হাতে আসে তখন আমি হ্যারিরই বয়সী। অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে তখন কেবল সরসরার্স স্টোন আর চেম্বার অব সিক্রেটসের অনুবাদ বের হয়েছিল। আজকাবান রিলিজ hঅয়েছিল মাত্র ইংলিশে, পরের বছর অনুবাদ আসবে বলে জানিয়েছিল বইমেলায়। ডিজনির কেনা ২০ টাকার কার্টুন বই আর কমিক ওয়ার্ল্ডকে বিদায় জানিয়ে হ্যারি পটারের ভারি দুটো বই কিনে ফিরেছিলাম সেবার। তারপর প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে পড়া শেষ করা। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে গুরুগম্ভীর আলাপ। চেম্বার অফ সিক্রেটস রাতে পড়তে পারতাম না ভয়ের চোটে। এরপর আজকাবান রিলিজ পেলো বাংলায়, জানতে পারলাম হ্যারি পটারের সিনেমাও নাকি আছে। দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম এরাই তো বইয়ে পড়া হ্যারি, হারমিওনি, রন, হ্যাগ্রিড, ডাম্বলডোর।
এরপর বই পড়লে এদের কল্পনা করেই পড়া হতো। চিনতাম না কে গ্যারি ওল্ডম্যান, কে অ্যাল্যান রিকম্যান। স্টার মুভিজে সরসরার্স স্টোন ছাড়তো মাঝরাতে। পুরোটা দেখতে হলে জেগে থাকতে হবে ১ টা পর্যন্ত। সে সময় মোটামুটি যা অসম্ভব ছিল। চ্যানেল আইতে ঈদে মনে হয় বাংলা ডাবিং আনতো। সেগুলোও গিলতাম গোগ্রাসে। গবলেট অব ফায়ার একদম এখনো স্পষ্ট মনে আছে। রিলিজ পাবার আগে টিভিতে ট্রেলার দিতো, বাংলা বই তখনো আসে নি। গবলেট অব ফায়ারের ভিজুয়ালস দেখে মনে হতো এটাই বেস্ট হ্যারি পটার মুভি হবে। সাহস করে স্টার মুভিজে রাত করে দেখে শেষ করলাম গবলেট অফ ফায়ার। স্কুলে গিয়ে তারপর তুমুল গবেষণা। বই নিয়ে আরও খুঁটিয়ে পড়া।
ইংরেজি বইগুলো তখন ওয়াপট্রিকে পাওয়া যেত। কয়েক মেগাবাইট সাইজ, ২০০ কিলোবাইটের গেমস নামাতেই তখন দুই বার ভাবতে হতো। বন্ধু ইমন পড়তো আর প্রতিদিন এসে ক্লাসে গল্প বলতো। এরপর বই আসতে থাকলো, বইয়ের দাম বাড়তে থাকলো। কোনভাবে আব্বু-আম্মুকে ম্যানেজ করে, আপুকে বলে কয়ে কেনার চেষ্টা করতাম। হ্যারির সাথে আমিও বড় হতে থাকলাম। ডেথলি হ্যালোজে হ্যারি যখন ভোল্ডেমর্টের মুখোমুখি তখন কম্পিউটার কেনা হল বাসায়। এক ডিভিডিতে ৬ টা সিনেমা পাওয়া যেত সে সময়। আর সিনেমা রিলিজের পরদিন ডিভিডিতে ৪০ টাকায় হল প্রিন্ট পাওয়া যেত নতুন সিনেমার। ডেথলি হ্যালোজ রিলিজ হবার পর সে হল প্রিন্ট দেখেই হ্যারিকে বিদায় দেয়া।
হ্যারি পটারের রিইউনিয়ন দেখে স্রোতস্বিনী নদীর মতো গলগল করে নস্টালজিয়ার স্রোত আগলে ধরলো। অতীতের স্মৃতিচারণ আর বর্তমানের মানুষগুলোকে নিয়ে আবার ঘুরে এলাম যেন হগওয়ার্টস থেকে। ত্রিশের কোটা পার করে ফেলা মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে এলাম টিনেজ থেকে। অনেক প্রিয় চরিত্র প্রয়াত হয়ে গেছে, তাদের আরও একবার মনে করে নিলাম। আমার পরবর্তী প্রজন্ম যখন হোম থিয়েটারে ফ্ল্যাট স্ক্রিনে চাইল্ডিশ গ্রাফিক্সের হ্যারি পটার দেখবে, আপবিট ফাঙ্কি ট্র্যাকে অভ্যাস হয়ে যাবার পরে স্লো ট্র্যাকের সে ইন্ট্রো শুনবে তখন রিয়ালাইজ করতে পারবে আমাদের আবেগের কথা? না পারুক সমস্যা নেই, নিজের মতো করে তারও নিশ্চয়ই অন্য কিছু নিয়ে এমন স্মৃতি তৈরি হবে। কিন্তু আমি আশা করি একদিন তারা এসে বলবে- চলো দাদু, একসাথে হ্যারি পটার দেখি। তুমি চেনো হ্যারি, হারমিওনি আর রনকে?
আমি বলবো- চিনি তো দাদু। ওরা তো আর বেঁচে নেই এখন, থাকলেও আমার মতো বুড়ো থুত্থুড়ে। তবে আমরাও একদিন হ্যারি ছিলাম, স্কেল/গাছের ডালকে ওয়ান্ড বানিয়ে আমরাও ঘুরিয়েছি- এক্সপেলিয়ার্মাস বলে।
আমি থাকবো না, ড্যানিয়েল রেডক্লিফ থাকবে না, বয়স কিংবা এমনেশিয়ায় হারিয়ে যাবে স্মৃতি। কিন্তু হ্যারি পটার থেকে যাবে, বইয়ের তাক থেকে পুরনো পুরু বই বের করে হারিয়ে যাবে এক কিশোর কিংবা কিশোরী জাদুময় এক রাজ্যে। দেখে হয়তো আমিই আনমনে বলে উঠবো- After all this time?
বই থেকে মুখ তুলে সে বলবে- Always!