আমি একজন কিংবদন্তীর কথা বলছি, আমি একজন হুমায়ূন ফরীদির কথা বলছি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

ফরীদিকে নিয়ে তারই সমসাময়িক অভিনেতা আল মনসুর বলছিলেন, "এই মাটিতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চির উজ্জ্বল অভিনেতা হলো হুমায়ূন ফরীদি।' একই পেশার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দুজন, তাহলে কীভাবে আল মনসুর সমসাময়িক একজন শিল্পীকে এভাবে ঈর্ষাহীন মূল্যায়ন করতে পারলেন?
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর 'রজনী' উপন্যাসটা উৎসর্গ করেছিলেন আরেক হুমায়ূনকে, সেই বইয়ের উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল- "মহিলা সমিতির সামনে দেখলাম ছোটখাট একটা জটলা, এগিয়ে গিয়ে দেখি যুবক বয়স্ক এক লোক চা খাচ্ছে, আর একদল যুবক তাকে ঘিরে ধরে চা খাওয়া দেখছে, যুবকটি হুমায়ূন ফরীদি। আমার এই বইটি সেই যুবককে উৎসর্গ করলাম।"
উৎসর্গপত্রের এই যুবকটিকে সবাই চেনেন। মঞ্চ থেকে টিভি নাটক, আর সেখান থেকে নিতান্তই পেটের তাগিদে এসেছিলেন চলচ্চিত্রের রঙিন পর্দায়। যেখানেই গিয়েছেন, নিজের অভিনয় প্রতিভার গুণে জয় করেছেন দর্শকহৃদয়। 'চলচ্চিত্রে কীভাবে এলেন?' এই প্রশ্নের জবাবে একটা টকশো-তে সোজাসাপ্টা বলেছিলেন– পরিচালক খোকনের সাথে। প্রশ্নকর্তা ভিরমি খেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, না মানে এফডিসিতে কীভাবে? তার চটপট উত্তর- বেবীটেক্সিতে করে। বাংলা চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যিনি, সিনেমায় নায়কের চেয়ে খলনায়কের প্রতিই দর্শকের আকর্ষণ যিনি বেশি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, সেই মানুষটার নামই হুমায়ূন ফরীদি।
সালটা ১৯৫২, মে মাসের ২৯ তারিখে ঢাকার নারিন্দায় জুট বোর্ডের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ও গৃহিণী ফরিদা ইসলামের কোলজুড়ে এসেছিলেন ফরীদি। পরিবারের কোথাও অভিনয় বা সাংস্কৃতিক আবহ ছিলো না। বলতে গেলে একেবারে শূন্য থেকেই উঠে এসেছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে চাঁদপুর সরকারী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ভর্তি হয়েছিলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে। কিন্ত ক্লাস আর করা হলো না, কিছুদিন পরেই শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। দেশমাতৃকার টানে যুদ্ধে গেলেন তিনি, হাতে তুলে নিলেন অস্ত্র। যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশের রাজধানী ঢাকায় ফিরলেন, কিন্ত ঢাবিতে ফেরা হলো না আর।

এবার চলুন, উনিশশো সাতাত্তরের ফরীদির কাছে যাওয়া যাক। তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তিনি। মাঝের সময়টায় কাটিয়েছেন বোহেমিয়ান এক জীবন। সেটার বর্ণনা না দিয়ে কেবল এটুকু বলাই ভালো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও উড়নচণ্ডী স্বভাবের কারণে ব্রেক অব স্টাডি হয়েছিল পাঁচ বছরের। বিশ্ববিদ্যালয় আর ফিরিয়ে নিল না তাঁকে। কিন্ত ডিগ্রি তো লাগবে একটা, কি করা যায়?
রেজাল্ট ছিল ভালো, চেষ্টা করলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুযোগও পেয়ে গেলেন অর্থনীতি বিভাগে। এরপর আন্তঃহল নাটক প্রতিযোগিতায় নাটক লিখে ও নির্দেশনা দিয়ে প্রথম হলেন। সেই অনুষ্ঠানে বিচারক হয়ে আসা নাসিরউদ্দিন ইউসুফের সঙ্গে পরিচয় হলো তখন। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরেই ঢাকা থিয়েটারে যাওয়া-আসা, টুকটাক ফাইফরমাশ খাটা শুরু হলো। চর কাঁকড়ার ডকুমেন্টরি ছিল ঘূর্ণিঝড়ের পটভূমিতে তৈরি পথনাটক, সেখানে প্রোডাকশনে কাজ করলেন ফরীদি। এরপর সংবাদ কার্টুনে ছোট্ট একটি চরিত্রে বিকল্প হিসেবে মঞ্চে উঠলেন। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে ফরীদি তখন ছোটখাটো সেলেব্রিটি, ঢাকায় গিয়ে মঞ্চে কাজ করেন তিনি! নাট্যকার সেলিম আল দীন তখন আল বেরুনী হলের হাউস টিউটর। তিনিই একদিন ফরীদিকে ডেকে বললেন, একটু আয় তো!
'শকুন্তলার দ্বিতীয় পর্ব' পড়ে শোনালেন সেলিম। ভাষা-শব্দ চয়নে পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন ফরীদি। নাসিরউদ্দিন ইউসুফের নির্দেশনায় এই নাটকেই সর্পরাজ তক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করলেন তিনি। সে সময় ঢাকা থিয়েটার তারকাখচিত দল। আছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, জহিরউদ্দিন পিয়ার ও হাবিবুল হাসান। সেই দলেই নাম লেখালেন ফরীদি।
এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়ার কাহিনী। 'শকুন্তলা'র পর 'ফণীমনসা। তারপর 'কিত্তনখোলা', 'কেরামত মঙ্গল। নতুন করে শুরু হওয়া 'সংবাদ কার্টুন', 'মুনতাসীর ফ্যান্টাসি'। গ্যেটে ইনস্টিটিউটের সঙ্গে 'ধূর্ত উই', 'একটিই পাত্র' পথনাটক 'বাসন'। নির্দেশনা দিলেন 'ভূত' নাটকে। ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সেটাই শেষ কাজ ফরীদির। আর 'ধূর্ত উই'তে শেষ মঞ্চ-অভিনয়। সে সময় যাঁরা মঞ্চনাটক দেখেছেন, তাঁরা জানেন, কী অসাধারণ এক স্বর্ণযুগ ছিল আমাদের নাটকের ইতিহাসে। কত ধরনের নিরীক্ষা আর কত নিবেদিতপ্রাণ অভিনয় হতো সে সময়ে, কত দ্বিগ্বজেরা দিতেন নাটকের নির্দেশনা!
মঞ্চ তো জয় হলো, এবার টিভি পর্দা জয়ের পালা। ৭০ দশকের শেষ থেকে মধ্য ৮০ পর্যন্ত সময়টি ছিল সম্ভবত বিটিভির স্বর্ণযুগ। বিনোদনের মাধ্যম বলতে ছিল সেই বিটিভি। এ সপ্তাহের নাটক, এ মাসের নাটক, ধারাবাহিক নাটক হিসেবে অসাধারন সব সৃষ্টি দর্শকদের বিটিভি উপহার দিয়েছে। অভিনেতা-অভিনেত্রী এ আমলের মতো গন্ডায় গন্ডায় ছিল না। তবে যারা ছিলেন বলতে গেলে সবাই একেকজন কিংবদন্তী। বিশেষ করে আফজাল-ফরিদী-সুবর্ণারা ছিলেন পুরোপুরি আলদা একটা যুগের মতো।
আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় 'নিখোঁজ সংবাদ'- নাটক দিয়ে টিভি নাটকে অভিষেক হয়ে গেল ফরীদির। এই নাটকের মূল চরিত্রের জন্যই প্রযোজক আতিকুল হক চৌধুরী ফরীদির কথা ভেবেছিলেন। ফরীদি বলে দিলেন, মূল চরিত্রটি তিনি করবেন না, করবেন মাত্র এক সিনে থাকা এক বিপ্লবী ছেলের চরিত্র। সেটাতেই রাজি হতে হলো ঘাঘু প্রযোজক আতিকুল হককে। অডিশন নিয়েও ঘাপলা। ফরীদি অডিশন দেবেন না কোনভাবেই। শেষমেশ তার শর্তেই রাজী হতে হলো প্রযোজককে। টিভি নাটকে ফরীদিই সম্ভবত প্রথম অডিশন ছাড়া শিল্পী। আশির দশকের দর্শকদের নিশ্চয়ই বিটিভি’র “আয়না” সিরিজের “ভাঙ্গনের শব্দ শুনি” (১৯৮৩)- তে সেরাজ তালুকদারের কথা মনে আছে। এই নাটকে ফরিদী হাজির হয়েছিলেন দাড়ি টুপিওয়ালা শয়তানের এক জীবন্ত মূর্তি রূপে। "আরে আমি তো জমি কিনি না, পানি কিনি, পানি..." কিংবা "দুধ দিয়া খাইবা, না পানি দিয়া খাইবা বাজান"- এই ডায়লগ তখন তুমুল জনপ্রিয়, সেটা ফরীদির কারণেই।
শহীদুল্লাহ কায়সারের 'সংশপ্তক'- এ তার চরিত্রের নাম ‘কান কাটা রমজান’, সেখানে ফরিদীর অনবদ্য অভিনয় আজও কেউ ভোলে নি। ভোলা কি যায়? অসম্ভব! যখন এই বঙ্গে বিটিভি নামে একটিমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল এবং দর্শক-শ্রোতারা সেই একমাত্র চ্যানেলটির সাপ্তাহিক নাটক দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকত, সেই সাদাকালো প্যান্ডোরার বাক্সেই সেরাজ তালুকদার আর রমজানের চরিত্রে হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় দেখে বিস্ময়ে থ হয়ে গেল দর্শক। খল চরিত্রে অসাধারণ সাবলীল অভিনয় করে নায়কদের চাইতেও বড় তারকা বনে গেলেন তিনি। প্রচলিত ধারায় নায়ক বলতে চেহারার যে ধারণা আছে, সেটা হুমায়ূন ফরীদিই ভেঙে দিয়েছিলেন।

ফরীদিকে নিয়ে তারই সমসাময়িক অভিনেতা আল মনসুর বলছিলেন, "এই মাটিতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চির উজ্জ্বল অভিনেতা হলো হুমায়ূন ফরীদি।' একই পেশার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দুজন, তাহলে কীভাবে আল মনসুর সমসাময়িক একজন শিল্পীকে এভাবে ঈর্ষাহীন মূল্যায়ন করতে পারলেন? সেটার জবাব- অভিনয়ের প্রতি ফরীদির একাগ্রতা; এবং সেই সাথে সততা। তিনি নিজেই বলতেন- “আমি চাকরী করতে পারি না, ব্যবসা জিনিসটাও আমাকে দিয়ে হয় না। সবচাইতে কম খারাপ পারি যেটা, সেটা হচ্ছে অভিনয়; তাই সেটাকেই জীবিকার কাজে লাগিয়েছি।”
অভিনেতা যায়, আসে। কিন্তু কিংবদন্তি তৈরি হয়। একবার গেলে আর আসে না। নজরুলের ধুমকেতুর মতো- "আমি যুগে যুগে আসি; আসি আসি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতু। এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধুমকেতু।" ফরীদিরা বার বার আসেন না। যুগেই আসেন, একবার। এসে বিপ্লব সাধন করেই চলে যান। চলচ্চিত্রে হুমায়ূন ফরীদির আগমনটা ছিল- "এলাম, দেখলাম, জয় করলাম" টাইপের।
শহীদুল ইসলাম খোকনের 'সন্ত্রাস' চলচ্চিত্রে খলচরিত্র দিয়ে রঙিন পর্দায় যাত্রা শুরু। প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন আড়াইশোর বেশী ছবিতে। 'বিচার হবে', 'আনন্দ অশ্রু', 'পালাবি কোথায়', 'হুলিয়া', 'একাত্তরের যিশু', 'ব্যাচেলর', 'জয়যাত্রা', 'শ্যামল ছায়া', 'আহা', 'প্রিয়তমেষু', 'মেহেরজান'... তালিকাটা কেবল লম্বাই হয়েছে। প্রতিটা সিনেমায় তিনি নিজেকে ভেঙে নতুন করে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। খলনায়কের ভূমিকায় হিমশীতল ভয়ের যোগান দিয়েছেন, আবার কখনও তার মৃত্যুতে আমাদের মন খারাপও হয়েছে!
নায়ক-খলনায়ক দুই চরিত্রেই তিনি ছিলেন সাবলীল, এক কথায় বৈচিত্রময়। এক সময়ে মানুষ আর নায়ককে না, এক ভিলেনকে দেখতেই হলে যেতেন। সেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী খলনায়ক ফরিদী। প্রায় দেড় দশক এই মানুষটা দর্শকদের চুম্বকের মতো সিনেমা হলে আটকে রেখেছিলেন। ২০০৩ সালের পর অশ্লীলতার জোয়ারে গা না ভাসিয়ে সিনেমা প্রায় ছেড়ে দিলেন তিনি, তখন অবশ্য দর্শকও হলবিমুখ হতে শুরু করেছিল।
ষাট বছর জীবনকাল কি খুব বেশী সময়? হুমায়ূন ফরীদির মতো প্রতিভাবান অভিনয়শিল্পীর বেঁচে থাকার জন্য কি ষাটটা বছর যথেষ্ট? মোটেই না। আরো অনেক কিছু দেয়ার ছিলো, অনেক অনেক অসাধারণ কাজ করার ছিলো। মঞ্চে ফিরতে চাননি কখনো, এক অজানা অভিমানে। কিন্ত মঞ্চেই শেষ কাজটা করার ইচ্ছেটা পুষে রেখেছিলেন মনের ভেতরে। শেক্সপিয়রের “কিং লিয়র” চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। পারেননি। স্রষ্টা তাঁকে সেই সুযোগ দেননি। মাত্র ষাট বছর বয়সে ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী, বসন্তের প্রথম দিনে ধানমন্ডির বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন এই গুণী অভিনেতা।
ব্যক্তিগত জীবনে পরিপূর্ণভাবে সুখী কখনোই ছিলেন না। স্বাধীনতার পর সহপাঠীর বোন নাজমুন আরা বেগম মিনুর গলায় বেলী ফুলের মালা দিয়ে বিয়ে করেছিলেন। মিনু তাঁকে বোহেমিয়ান জীবন থেকে সংসারের সাজানো শয্যা পেতে দিয়েছিলেন। ধরে রাখতে পারেন নি। টেকেনি সেই সম্পর্কটা। প্রথম প্রেমের সেই মালা ছিঁড়ে সূবর্ণা মুস্তাফার গলায় পরিয়েছিলেন। না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর বছর চারেক আগে সে বন্ধনও ভেঙে গিয়েছিল।

“বাঁচো এবং বাঁচতে দাও”- প্রায়ই এমন একটা ফিলোসফিক্যাল কথা বলতেন ফরিদী। সহ-অভিনেতাদের কাছেও তার দরাজ দিলের কথা শোনা যায় অনেক। নাট্যাঙ্গনে নাকি একটি কথা প্রচলিত ছিল যে, যদি টাকা লাগে তবে হুমায়ূন ফরিদীর কাছ থেকে ধার নাও। কারণ ফেরত দিতে হবে না। কাউকে টাকা দিলে তা নাকি বেমালুম ভুলে যেতেন। তাই কোনোদিন ফেরতও চাইতেন না।
একবার সেটে চঞ্চল চৌধুরীকে দুপুরের খাবারে ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে দেখেছিলেন। চঞ্চলের ভর্তা পছন্দের কথা শুনে একদিন বাসায় নানা রকমের ভর্তা বানিয়ে তাঁকে আসতে বলেন। চঞ্চল তখন পাবনাতে। রাত দুইটায় তিনি ঢাকা ফিরলে ঐ রাতেই নাকি ফরীদির বাসায় যেতে হয় দাওয়াত রক্ষা করতে। গিয়ে দেখেন প্রায় ৫০ রকমের ভর্তা সামনে করে বসে আছেন ফরিদী।
আরেকবার নাকি হোতাপাড়া থেকে সূবর্ণার জরুরী ফোন পেয়ে রাত ২ টার পর ঢাকায় রওনা হন। হঠাৎ মনে পড়ে প্রোডাকশনবয় ইসমাইলকে কোনো টিপস দেয়া হয়নি। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে বহু দূর এসে নিজে গাড়ি চালিয়ে আবার সেটে ফিরে গিয়ে ঐ রাতেই তাকে কিছু দিয়ে ঢাকায় ফেরেন।
এমন বহু গল্প আছে তাঁর হৃদয়ের বিশালতার সাক্ষী হয়ে। ফরীদির জীবনটাকে মেলানো যায় শরৎচন্দ্রের দেবদাসের সঙ্গে। স্নানঘরে পড়ে গিয়ে কী করুণ মৃত্যু! দেবদাস যেমন মরণের কালে পার্বতীর দেখা পাননি, ফরীদিও তেমনই বিদায় নিয়েছিলেন প্রিয়জনদের স্নেহধন্য সান্নিধ্য ছাড়াই। মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দেয়ার সুযোগ পায়নি, কারো হাতটা ধরে বলা হয়নি- বিদায়!
মৃত্যুকে শাশ্বত ও সুন্দর ভাবা হুমায়ূন ফরীদি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন একদম একা, বসন্তের এক মাতাল সমীরণ জাগানো সকালে। এই অভিনেতার চলে যাওয়ার পরে ভক্তরা তার জন্যে চোখের জল ফেলেছে, আজও ফেলে; কিন্ত সেসব তিনি দেখে যেতে পারলেন কই?
তথ্যসূত্র- দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক পূর্বকোন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং আমারব্লগ।