ইনক্লুসিভ ফ্লিল্ম: গুরুত্বপূর্ণ যে কালচার বলিউডে বিরল!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

ইনক্লুসিভ সিনেমা নিয়ে যতই উদাহরণ দিই না কেন, যতই আশাবাদী হইনা কেন, বাস্তবতা এটাই- বলিউড এসব ক্ষেত্রে এখনো পুরোপুরি হয়নি আধুনিক। সে কারণেই হয়তো, 'ইনক্লুসিভিটি'র প্রাকটিস ওভাবে পুরোদস্তুর হয়না এখানে। যে কারণে, সঞ্জয় লীলা বানসালীর মত নির্মাতা তার নির্মাণে এখনও ব্রাত্য রাখেন ট্রান্সজেন্ডারদের।
আয়ুষ্মান খুরানার 'চণ্ডীগড় কারে আশিকী' মুক্তি পেলো গত বছরের শেষদিকে। সে সিনেমা মুক্তির আগে থেকেই একটা বিষয়ে বেশ বিতর্ক হলো। বিতর্কের বিষয়- বাণী কাপুর। এ সিনেমায় বাণী কাপুর যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, সে চরিত্রটি এক ট্রান্স নারীর। প্রশ্ন উঠলো- কেন এক স্বাভাবিক নারীকে 'ট্রান্স নারী'র চরিত্রে অভিনয় করতে হবে? এ চরিত্রে অভিনয় করার মত কোনো ট্রান্স অভিনেত্রী কি বলিউডে নেই? যদি কোনো 'ট্রান্স ওম্যান'কে এখানে অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে কি বলিউডের জাত চলে যেতো? নানারকম প্রশ্ন। এবং এ প্রশ্নগুলোর বাইপ্রোডাক্ট হিসেবেই 'বলিউডি ইনক্লুসিভ ফিল্ম' অর্থাৎ 'যে যেরকম, তাকে দিয়ে সে রোল' এ অভিনয় করিয়ে 'অথেন্টিক ফিল্ম' বানানোর ট্রেডিশন, যে ট্রেডিশন কালেভদ্রে চর্চা হয় বলিউডে, সেটা আবারও এলো আলোচনার টেবিলে।
যদিও বলিউডে 'ইনক্লুসিভ ফিল্ম' যে একেবারেই নেই, বা, আগে ছিলোনা, তাও না। এ বছরেই যেমন বিদ্যা বালান- শেফালী শাহ'র 'জলসা' দেখলাম। যে 'জলসা'য় বিদ্যা বালানের ছেলে 'আয়ুশ' সেরেব্রাল পালসি'তে আক্রান্ত। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এটাই, এই 'আয়ুশ' চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে 'সেরেব্রাল পালসি'তে আক্রান্ত এক কিশোরকেই কাস্ট করেছিলেন নির্মাতা। যে কিশোরের নাম- সুরিয়া কাশিবাতলা। সুরিয়াকে এই চরিত্রে নেয়ায় বেশ ভালোভাবেই বোঝা গিয়েছিলো, অসুস্থ মানুষদের জন্যেও বলিউডে সুযোগ তৈরী হচ্ছে। যারা সিনেমায় যুক্ত হওয়ায় সিনেমা আরেকটু রিয়েলিস্টিকও হচ্ছে। জলসা'র এই অ্যাপ্রোচ সে কারণেই বেশ ভালো লেগেছিলো। নড়েচড়ে বসেছিলাম।

কথাপ্রসঙ্গে চলে আসে 'অ্যাক্সোন' এর প্রসঙ্গও। যে রোমান্টিক ড্রামার উপজীব্য হিসেবে ছিলো, নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার মানুষদের যাপিত নানাকিছু। ইতিবাচক বিষয় এটাই, নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ানদের চরিত্রে সেখানকার মানুষদেরই আনা হয়েছিলো এ নির্মাণে। বজায় রাখা হয়েছিলো 'র'নেস। যেরকমটা হয়েছিলো, জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ 'পাতাল লোক'এও। এই ওয়েব সিরিজের এক অংশে 'ট্রান্সজেন্ডার' এক নারী 'চিনি'র চরিত্রে সত্যিই এক ট্রান্সজেন্ডার নারীকে কাস্ট করা হয়েছিলো। এবং খুব দুর্দান্তভাবে সেই নারী ফুটিয়ে তুলেছিলেন ট্রান্সজেন্ডার নারীদের উপরে সমাজের নৃশংসতা। বেশ ভালো লেগেছিলো সে পোর্ট্রেয়ালও। এবং, খুব রিলেটেবলও ছিলো তা।

শুধু ট্রান্সজেন্ডার, সেরেব্রাল পালসি কিংবা নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ান কাস্ট না, 'উড়তা পাঞ্জাব' নামের মেইনস্ট্রিম বলিউডি সিনেমার প্রোটাগনিস্ট হিসেবে কাস্ট করা হয়েছিলো এক শিখ অভিনেতাকে। সাধারণত, টিপিক্যাল বলিউডি সিনেমায়, 'শিখ ক্যারেক্টার'দের রাখা হয় শুধুমাত্র কমিক রিলিফের জন্যেই। ঠিক সেখানে এসেই এ সিনেমা দেখিয়েছিলো বৈপরীত্য। সিরিয়াস রোলে বেশ দারুণ অভিনয়ও করেছিলেন শিখ যুবক দিলজিৎ। যেমনটা হয়েছিলো, 'ওয়েক আপ সিড' এর 'লক্ষ্মী' চরিত্রটির ক্ষেত্রেও। বলিউডি সিনেমায় যেখানে 'প্লাস সাইজ অ্যাক্টর'দের নেয়া হয় 'ফান এলিমেন্ট' হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে, সেখানে দাঁড়িয়ে 'লক্ষ্মী' চরিত্রকে 'সিরিয়াস ডাইমেনশন' দেয়া এবং 'জোক এর নামে ফ্যাটশেমিং' না করার এ বিষয়টা বেশ 'ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম' টাইপের বিষয়ই ছিলো।
এবার একটু হতাশার কথা বলি। ইনক্লুসিভ সিনেমা নিয়ে যতই উদাহরণ দিই না কেন, যতই আশাবাদী হইনা কেন, বাস্তবতা এটাই- বলিউড এসব ক্ষেত্রে এখনো পুরোপুরি হয়নি আধুনিক। সে কারণেই হয়তো, 'ইনক্লুসিভিটি'র প্রাকটিস ওভাবে পুরোদস্তুর হয়না এখানে। যে কারণে, সঞ্জয় লীলা বানসালীর মত নির্মাতা তার নির্মাণে এখনও ব্রাত্য রাখেন ট্রান্সজেন্ডারদের। যেটা দেখতে হয়তো দৃষ্টিকটু লাগে। কিন্তু মেনেও নিতে হয়। কিছু করার থাকেনা।
তবে আশার ব্যাপার এটাই, সিনারিও পাল্টাচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগেই যেমন এলো আয়ুষ্মান খুরানার নতুন সিনেমা 'অনেক' এর ট্রেলার। এ সিনেমা নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার কনফ্লিক্ট নিয়ে ডিল করবে, তা সবারই জানা৷ এবং ভালো লাগলো এটাই, 'ইনক্লুসিভিটি' বজায় রাখতে এ সিনেমায় কাস্ট করা হলো নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ান ক্যারেক্টারদের৷ যদি আইকনিক 'চাক দে ইন্ডিয়া'র কথা বলি, সেখানেও হকি টিমের প্লেয়ার হিসেবে আনা হয়েছিলো ভারতের নানা প্রদেশের নারীকে, যে কারণে এই টিমের অ্যাপ্রোচও হয়েছিলো বেশ রিয়েলিস্টিক। এবং, আশা থাকবে এটাই, সিনেমার গ্রহনযোগ্যতা বিবেচনাতেই যেন বলিউডি এই ইনক্লুসিভিটি বজায় থাকে সামনেও। এবং, যদি এই প্রাকটিসটা ধরে রাখা যায়, তাহলে যেটা হবে, বৈচিত্র্যময় সব ক্যাটাগরি নিয়ে ডিল যেমন করা যাবে, তেমনি 'বলিউড' এর এই তথাকথিত 'কুলীন' মঞ্চে সমাজের নানা শ্রেনির মানুষের অংশগ্রহণও বাড়বে। বিভেদের এ সময়ে যে অংশগ্রহণই মূলত সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। সবচেয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষিত।