'চৌধুরী পরিবার' এর কনিষ্ঠা কন্যা পেরিয়ে তিনি টেলিভিশনের পর্দায় রহস্যভেদ করা 'গোয়েন্দা গিন্নি', তিনি থাকলেই যেন সিরিয়ালের টিআরপি বেড়ে যায় বহুগুণ। হালের সিরিয়ালপ্রেমীদের কাছে তাঁর পরিচয় তিনি 'শ্রীময়ী'। বারবার তিনি ফিরে আসেন টিভির পর্দায়, বুঝিয়ে দেন 'সময়' ফুরিয়ে যায়নি, হয়ে যান অতি কাছের মানুষ...

নব্বইয়ের দশক, কলকাতার রাস্তায় রাতের অন্ধকারে বৃষ্টির মধ্যে বিপদগামী যুবকদের হাতে লাঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন রমিতা নামের এক সদ্য বিবাহিতা নারী। সেই কালো রাতে রমিতাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এক স্কুল শিক্ষিকা ঝিনুক। এই ঘটনা গড়ায় আদালতে, সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ঝিনুক। কিন্তু কথিত সামাজিকতার ভয়ে রমিতার পরিবার পিছিয়ে যায়। কিন্তু নানা চাপের মুখে প্রতিবাদী হয়ে সাক্ষী দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে ঝিনুক, আদালতে বিব্রতকর প্রশ্নের মাঝেও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন।

এই ঘটনাকে উপজীব্য করে প্রখ্যাত লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্য 'দহন' শিরোনামে উপন্যাস লিখেন। এর কিছুদিন পরেই অকাল প্রয়াত অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ একই নামে চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে ধরেন এই সাহসী কাহিনী। সাহসিকতা ও প্রতিবাদীর প্রতীক ঝিনুক চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার সেরা অভিনেত্রীদের একজন 'ইন্দ্রাণী হালদার'।

সমসাময়িকদের তুলনায় জনপ্রিয়তায় হয়তো পিছিয়ে ছিলেন, তবে অভিনয় গুণে ছিলেন সবার থেকে এগিয়ে। তাঁর মিষ্টি হাসিতে মুগ্ধ হতো দর্শকরা, নায়িকাদের চিরাচরিত ধারা ভেঙ্গে রুপালী পর্দায় হাজির হয়েছেন বহুমাত্রিক চরিত্রে। 'চৌধুরী পরিবার' এর কনিষ্ঠা কন্যা পেরিয়ে তিনি টেলিভিশনের পর্দায় রহস্যভেদ করা 'গোয়েন্দা গিন্নি', তিনি থাকলেই যেন সিরিয়ালের টিআরপি বেড়ে যায় বহুগুণ। তাই তো বারবার ফিরে আসেন টিভির পর্দায়, বুঝিয়ে দেন 'সময়' ফুরিয়ে যায়নি, হয়ে যান অতি কাছের মানুষ। হালের সিরিয়ালপ্রেমীদের কাছে উনার পরিচয় তিনি 'শ্রীময়ী'।

গোয়েন্দা গিন্নিতে

প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ারে সেরা অভিনয় হিসেবে বিবেচিত 'দহন' সিনেমাতে, একই সিনেমাতে অভিনয় করেছিল তখনকার বানিজ্যিক হিট নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা। জুরি বোর্ডের বিচক্ষণতায় দুইজনেই জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছিলেন। পুরস্কার জয়ের কিছুদিনের মাঝেই দুইজন মিলে আবার অভিনয় করেন সামাজিক সচেতনতামূলক ছবি 'দায়-দায়িত্বতে। এদিকে ঋতুপর্ণার প্রথম ছবি 'শ্বেত পাথরের থালা' তেও ইন্দ্রাণীর উজ্জ্বল উপস্থিতি, যে ছবিতে তিনি বয়স্কা চরিত্রে অভিনয় করতেও দ্বিধা করেননি। বহু বছর পর আবার একসাথে অভিনয় করেন 'আরো একবার' সিনেমায়। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'সম্প্রদান' ক্যারিয়ারের আরেকটি সেরা সিনেমা, প্রথা ভেঙ্গে যে মেয়ে মায়ের হাতে কন্যাদান হয়েছিলেন। অঞ্জন দাসের 'যারা বৃষ্টিতে ভেজেছিল'তে অভিনয় করে মাদ্রিদ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের চরাচর, লাল দরজা করে নিজেকে করেছেন পরিক্ষীত, 'অংশুমানের ছবি'তেও দেখিয়েছিলেন নিজের প্রতিভা।

প্রসেনজিতের সঙ্গে বিয়ের ফুল ছবিটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, এছাড়া নয়নের আলো, বর কনে থেকে সত্যম শিবম সুন্দরম, সপ্তমীর মত সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন। এই জুটিকে অনেকদিন বাদে দেখা গিয়েছিল 'ময়ূরাক্ষী' সিনেমাতে। আরো অভিনয় করেছেন 'অনু'র মত সিনেমাতে, এছাড়া রয়েছে অন্তিম শ্বাস সুন্দর, সাঁঝবাতির রুপকথা, রাতপরীর রুপকথা, অংশুমানের ছবি, নিয়তি, বুক ভরা ভালোবাসা সহ অনেক ছবিতেই।

সিনেমার বাইরে সিরিয়ালের জগতে এক উজ্জ্বলতম নাম ইন্দ্রানী হালদার

হিন্দি সিরিয়াল থেকে বাংলাদেশের ক্ষনিক বসন্ত সহ একাধিক টেলিফিল্মে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমার বাইরে সিরিয়ালের জগতে এক উজ্জ্বলতম নাম। সানাই, সময়ের পর বাংলা সিরিয়ালে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন 'গোয়েন্দা গিন্নি'তে, যেটি সাম্প্রতিক কালের অন্যতম আলোচিত সিরিয়াল। ঘর-সংসারে নিবেদিত বাড়ির বড় বউ হয়েও তিনি গোয়েন্দা হয়ে নানা রহস্যের জট খুলেছেন। এরপর সীমারেখায় ছিলেন দ্বৈত চরিত্রে, যদিও সেটা দর্শকপ্রিয় হয়নি। এখন করছেন লীনা গাঙ্গুলির 'শ্রীময়ী'।

অভিনয়টাকে ভালোবাসেন, তাই কোন মাধ্যম সেটা কোনোকালেই বিবেচনায় রাখেননি তিনি। সিরিয়াল, সিনেমা যেমন করেছেন তেমনি যাত্রা নিয়ে নির্দ্ধিয়ায় পৌঁছে গেছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এখন সিরিয়ালেই বেশি সময় দেন, তবে প্রত্যাশা রইলো ভারতীয় বাংলা সিনেমার এই সুবর্ণ সময়ে নিজেকে আরো পরিক্ষীত করতে চলচ্চিত্রের পর্দাতেই বেশি মনোযোগী হবেন।

আজ তাঁর জন্মদিন, শুভকামনা রইলো। শুভ জন্মদিন, ইন্দ্রানী হালদার। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা