জিতু ভাইয়া: 'কোটা ফ্যাক্টরি'র তুমুল জনপ্রিয় যে চরিত্র বাস্তব থেকে অনুপ্রাণিত!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

মজার বিষয়, সিরিজের যে 'জিতু ভাইয়া' চরিত্রটিকে আমরা দেখেছি কোচিং সেন্টারে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে, সে চরিত্র কিন্তু অতটাও কল্প-চরিত্র না। এই চরিত্রের অনুপ্রেরণা যিনি, তিনি বাস্তব জীবনে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াতেন ছেলেমেয়েদের। সেই মানুষটি নিজেও ছিলেন 'কোটা'র শিক্ষার্থী!
'কোটা ফ্যাক্টরি', 'টিভিএফ পিচার্স' কিংবা 'পঞ্চায়েত'খ্যাত জিতেন্দ্র কুমার'কে চেনে না, এরকম মানুষ খুব কমই আছে। বিশেষ করে যারা ওটিটি কন্টেন্টের নিয়মিত ও একনিষ্ঠ সমর্থক, তাদের কাছে জিতেন্দ্র কুমার খুব কাছের একজন মানুষও। ছিপছিপে গড়নের দুবলা-পাতলা এ যুবক তার স্বল্পদৈর্ঘ্যের ক্যারিয়ারে জন্ম দিয়েছে মনে রাখার মতন কিছু চরিত্রেরও। সেরকম এক চরিত্রের নাম- জিতু ভাইয়া।
টিভিএফ এর বহুল জনপ্রিয় সিরিজ 'কোটা ফ্যাক্টরি' দেখেছেন অথচ 'জিতু ভাইয়া' চরিত্রটিকে ভালো লাগেনি, এরকম মানুষ খুঁজে বের করতে গেলে নেহায়েতই পণ্ডশ্রম হবে। প্রডিজি কোচিং সেন্টারের পদার্থবিজ্ঞানের জনপ্রিয় শিক্ষক 'জিতু ভাইয়া' শুধু একজন শিক্ষকই না, তিনি ছাত্রছাত্রীদের মেন্টর, বন্ধু এবং অভিভাবকও। এই সিরিজের নির্মাতারা এই চরিত্রকে এতটাই যত্ন নিয়ে বানিয়েছেন যে, 'কোটা ফ্যাক্টরি'র প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার বহুদিন পরেও চরিত্রটি নিয়ে কারো মুগ্ধতার রেশ কাটে না৷ একটা কল্প-চরিত্রের সামগ্রিক সার্থকতা বোধহয় এটাই; দর্শকদের মধ্যে অমরত্ব প্রাপ্তিতে!

তবে মজার বিষয়, সিরিজের যে 'জিতু ভাইয়া' চরিত্রটিকে আমরা দেখেছি কোচিং সেন্টারে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে, সে চরিত্র কিন্তু অতটাও কল্প-চরিত্র না। এই চরিত্রের রূপদানকারী জিতেন্দ্র কুমার বাস্তব জীবনেও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াতেন ছেলেমেয়েদের। যারা জিতেন্দ্র কুমার নিয়ে মোটামুটি ঘাঁটাঘাটি করেছেন, তারা জানেন- তিনি আইআইটি খড়গপুর থেকে পড়াশোনা শেষ করেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু এই 'সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং' বিষয়ে তার কোনো আগ্রহ ছিলো না। ছোট থেকেই তার শখ ছিলো, তিনি অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। কিন্তু যখন কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন না আইআইটি'তে, ঠিক তখন থেকেই পড়াশোনার উপর থেকে মন উঠে গেলো তার।

এরমধ্যেই তিনি আবার যুক্ত হয়েছেন আইআইটি'র হিন্দি ড্রামা ক্লাবের সাথে। সখ্যতা হয়েছে 'টিভিএফ' এর অন্যতম লেখক- বিশ্বপতি সরকারের সাথেও! অদ্ভুত সময় তখন। সুয়োরাণী ও দুয়োরোণী... অর্থাৎ অভিনয় আর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ঘরসংসার তার। এই দুই বিপরীতমুখী ফেনিল ঢেউয়ের দ্বৈতসংঘর্ষে ভাসতে ভাসতে একসময়ে শেষ হলো তার পড়াশোনা। জিতেন্দ্র কুমার পেয়ে গেলেন এক চাকরীও। কিন্তু ততদিনে তার মাথায় চেপে বসেছে অভিনয়ের জগদ্দল সিন্দাবাদের ভূত। অভিনয়ে সিরিয়াস হওয়ার জন্যে নিশ্চিত বেতনের চাকরিটা তিনি ছেড়ে দিলেন একদিন। নামলেন বিপর্যয়ের অকূল পাথারে। কপর্দকশূণ্য জীবন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, পরিবারের নিরন্তর উৎকন্ঠা; এক জটিল ত্রিশঙ্কু দশাতেই যেন পড়লেন জিতেন্দ্র। বিক্ষুদ্ধ টালমাটাল সময়ে আচমকাই তার মাথায় এলো, তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি ভালো বোঝেন এবং সবাইকে বোঝাতেও পারেন। সুতরাং এই বিষয়ে ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে টাকাপয়সা আয় করাই যায়!
যা ভাবা তাই কাজ। তিনি শুরু করলেন পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে টিউশনি। টিউশনির গুটিকয়েক টাকায় কায়ক্লেশে জীবন চললো বহুদিন। এভাবে চলতে চলতে একদিন মুক্তি পেলো টিভিএফ এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্মাণ 'টিভিএফ পিচার্স।' 'টিভিএফ পিচার্স' মুক্তি পাওয়ার পরেই রাতারাতি ভোজবাজির মতন পালটে যায় জিতেন্দ্র কুমারের জীবন। আর্থিক অনটন ম্লান হওয়ার পাশাপাশি জিতেন্দ্র কুমার পেয়ে যান পাদপ্রদীপের আলোও। এই টিভি সিরিজের পরে ক্রমে ক্রমে মুক্তি পায় 'কোটা ফ্যাক্টরি' এবং 'পঞ্চায়েত', যারা হয়ে থাকে জিতেন্দ্র কুমারের ক্যারিয়ারেরই অন্যতম মাইলফলক! তিনি ক্রমশই রূপান্তরিত হতে থাকেন 'ওটিটি স্টার' এ। জিতেন্দ্র কুমারের জীবন পাল্টায় চিরদিনের মতন।

যে 'কোটা ফ্যাক্টরি'র 'জিতু ভাইয়া' চরিত্রটির আমরা গুনমুগ্ধ ভক্ত, সেই 'জিতু ভাইয়া' অর্থাৎ জিতেন্দ্র কুমার কিন্তু বাস্তবেই ছিলেন কোটার শিক্ষার্থী! আবার তিনি এই কোটা'তেই আইআইটি'তে ভর্তি-ইচ্ছুক ছেলেমেয়েদের পদার্থবিজ্ঞান পড়িয়েছেন বহুদিন। সুতরাং এই চরিত্রে যখন অভিনয় করেছেন জিতেন্দ্র কুমার, বাস্তব জীবনের অনেক অভিজ্ঞতাই তিনি এনেছেন অভিনয়ে। ফলাফল-জ্যান্ত হয়ে উঠেছে চরিত্রটি! জীবন থেকে নেয়া এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ যখন বাস্তবের মানুষটিকেই দেয়া হয়েছে, সাধিত হয়েছে অসাধারণত্ব। অভিনয়ের জাদুতে বশ হয়েছে আপামর দর্শক। সে সাথে 'জিতু ভাইয়া'ও ক্রমশ পর্দা ভেদ করে স্থায়ী আসন গেড়েছেন আমাদের হৃদয়ে, মস্তিষ্কে। অমরত্ব পাওয়া এ চরিত্র যেন এভাবেই বাস্তবের জিতেন্দ্র কুমারের জীবন-সংগ্রাম'কে খানিকটা ট্রিবিউটও দিয়ে গিয়েছে শেষমেশ!