আজ ছাব্বিশ বছর পূর্ণ করলো এই বিখ্যাত অনুষ্ঠানটি। যে অনুষ্ঠান নিয়ে এখনো শ্রোতাদের আগ্রহ অনেক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ইউটিউব- সব জায়গাতেই জলসা নিয়ে অনেকে যেমন স্মৃতিকাতর হন, তেমনই পরবর্তী প্রজন্মও দেখেছে বিস্ময়চোখে, মুগ্ধ হয়েছে। ছাব্বিশ বছর পর পেছনে তাকিয়ে দেখা যাক, সাড়া জাগানো সেই অনুষ্ঠানের তারকারা কোথায় আছেন, কেমন আছেন!

২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫। বিটিভিতে প্রচারিত হলো এক ব্যতিক্রমী সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠান। আমাদের আবহমান বাংলা গানে যুক্ত হওয়া ব্যান্ড সংগীতের তখন স্বর্ণযুগ। তরুণদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা কিংবা দেশের বিজ্ঞজনেরা তখন কিভাবে দেখছেন এই ব্যান্ড সংগীতকে, কিংবা ব্যান্ড সঙ্গীতই বা বাংলা গানকে কতটা সমৃদ্ধ করেছে- এই নিয়ে প্রচারিত হয় 'জলসা'। 

আজ দুই যুগ পেরিয়ে ছাব্বিশ বছর পূর্ণ করলো এই বিখ্যাত অনুষ্ঠানটি। যে অনুষ্ঠান নিয়ে এখনো শ্রোতাদের আগ্রহ অনেক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ইউটিউব সব জায়গাতেই জলসা নিয়ে অনেকে যেমন স্মৃতিকাতর, তেমনই পরবর্তী প্রজন্মও দেখেছে বিস্ময়চোখে, মুগ্ধ হয়েছে। আজ ২৬ বছর পর পেছনে তাকিয়ে দেখা যাক, সাড়া জাগানো সেই অনুষ্ঠানের তারকারা কেমন আছেন! 

আনিসুল হক

ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন, দায়িত্ব পালন করেছেন এফবিসিসিআই এর চেয়ারম্যান হিসেবেও। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন স্বনামধন্য উপস্থাপক। বিটিভিতে তার উপস্থাপনায় অনেক অনুষ্ঠান বিখ্যাত হয়ে আছে, তেমনই একটি হচ্ছে এই 'জলসা' অনুষ্ঠান। পুরোটা সময় উনার চৌকস উপস্থাপনায় জমিয়ে রেখেছিলেন। ব্যান্ড তারকাদের প্রতি প্রশ্নগুলো ছিল ভীষণ রকমের প্রাসঙ্গিক। 

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছিলেন আনিসুল হক, তার পেছনে নকীব খান

খান আতাউর রহমান

বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সব শাখায় ছিল তার উজ্জ্বল বিচরণ। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে যারা বিজ্ঞজন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে উনিই একমাত্র ব্যান্ড গানের পক্ষে ছিলেন এবং তার কথাগুলোই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। প্রচারের দুই বছরের মাথায় এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সবার আগে তিনি মারা যান, ১৯৯৭ সালে। 

কলিম শরাফী

বাংলাদেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও গবেষক। সিনেমাও বানিয়েছিলেন একটি। রবীন্দ্রসংগীতে অগ্রজ এই মানুষ অনুষ্ঠানে চুপচাপই ছিলেন। ভীষণ মিষ্টভাষী এই অনুষ্ঠানে শেষে রেঁনেসার যুগান্তকারী গান 'আজ যে শিশু' গেয়েছিলেন। যেন মনে হয়েছিল যেন উনারই গান। 

নীলুফার ইয়াসমিন

বাংলাদেশের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী, যার কন্ঠে অনেক গান বিখ্যাত হয়ে আছে। প্রয়াত হন ২০০৩ সালে। রেঁনেসা ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান 'হৃদয় কাঁদামাটির কোনো মূর্তি নয়' গেয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। সম্পূর্ণ ভিন্নধারার হয়েও তিনি দারুণ ভাবে গেয়েছিলেন। মেধা, প্রতিভার প্রমাণ বুঝি একেই বলে। 

জলসা অনুষ্ঠানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

সুবীর নন্দী

সঙ্গীত জগতের জনপ্রিয়তম গায়ক, যার সুনির্বাচনীয়তার দক্ষতায় বেশিরভাগ গানই পেয়েছে শ্রোতাপ্রিয়তা। ফিডব্যাকের জনপ্রিয় গান 'ধন্যবাদ হে ভালোবাসা' গেয়েছিলেন, অনুষ্ঠানে তার স্ত্রীও এসেছিলেন। কিংবদন্তী এই গায়ক ২০১৯ সালে পরলোকগমন করেছেন। 

মুস্তাফা মনোয়ার

কিংবদন্তী চিত্রশিল্পী এই অনুষ্ঠানে  তখনকার ব্যান্ড তারকাদের গানের যে উচ্ছৃঙ্খলতা দেখানো হতো, সেটার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি শুদ্ধ গানের পক্ষে ছিলেন, শুনতে বেশি আগ্রহী, দেখতে নয়। ব্যান্ড গান দৃশ্যমান ভাবেন, এটা নিয়ে আপত্তি ছিল।

আব্দুল্লাহ আল সায়ীদ

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, বরণ্যে শিক্ষাবিদ। এই অনুষ্ঠানে ব্যান্ড গানের বিপক্ষে মোটামুটি সবচেয়ে বেশি তীর্যকপূর্ণ অবস্থানে তিনিই ছিলেন। তবে তার কথাগুলোও একেবারে অমূলক ছিল না, উনার প্রাঞ্জল বক্তব্য সব সময় শুনতে প্রশান্তিদায়ক। 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

বাংলাদেশের রবীন্দ্র সঙ্গীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা। এই অনুষ্ঠানে একক গান/সবার গান মিলিয়ে ফেললেও সোলসের অত্যন্ত জনপ্রিয় গান 'এই মুখরিত জীবনে চলার বাঁকে' গেয়েছিলেন। তার কণ্ঠে এই গানটি এতটাই আলোচিত হয়েছিল, পরে আরো ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান গেয়েছেন, যার সূচনা এই জলসায়। 

সাদিয়া আফরিন মল্লিক

দেশের এই বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী গেয়েছিলেন মাইলসের জনপ্রিয় গান 'প্রথম প্রেমের মতো'। মাইলস বাদেও অন্য কারো কন্ঠে বিশেষ করে কোনো গায়িকার কন্ঠে এই গান দারুণ ভাবে মানিয়ে যাবে, তা ভাবেননি অনেকেই। উনার কন্ঠে গানটা দারুণ লাগে। 

শাকিলা জাফর

জনপ্রিয় এই কন্ঠতারকা আধুনিক গানের জন্য আলোচিত, তবে এই অনুষ্ঠানে গেয়েছেন নজরুল গীতি। তিনি যেহেতু একজন প্রতিভাবান গায়িকা, নজরুল গীতিও ভালো গেয়েছিলেন।

সোলস

বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকাদের প্রথম ব্যান্ড। তবে ততদিনে তারা ছেড়ে আসেন এই দলকে। ছিলেন পার্থ বড়ুয়া, তবে নাসিম আলী খান উপস্থিত ছিলেন না। সোলসের আয়োজনে তাদের সদস্য পার্থ বড়ুয়ার কন্ঠে শচীন দেব বর্মনের বিখ্যাত গান 'বাঁশি শুনে আর কাজ নাই' গেয়ে রীতিমত চমকে দিয়েছিলেন। বহুদিন পর্যন্ত তখনকার শিশুরা ভাবত এটা তারই গান, এখনো এই ব্যাপারটা বেশ আলোচিত৷ 

সোলসের হয়ে গান গেয়েছিলেন পার্থ বড়ুয়া

রেঁনেসা

রবীন্দ্রসংগীত 'ভালোবেসে সখী নিভৃতে দুজনে' গেয়ে অনুষ্ঠান সূচনা করেছিলেন এই স্বনামধন্য ব্যান্ড দল। নকীব খানের কন্ঠ এমনিতেই সমাদৃত, গানের চর্চা রাখায় এই গানটিও বেশ ভালো গেয়েছিলেন। তবে রেঁনেসা ভাঙেনি, তখনকার সদস্যরাই এখনো আছেন তাদের প্রিয় এই দলে। 

মাইলস

দেশের অন্যান্য জনপ্রিয় ব্যান্ড দল। তাদের তখনকার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শাফিন আহমেদ গেয়েছিলেন তাদের বাবা কমল দাশগুপ্তের গাওয়া একটি গান 'কন্ঠে তোমার নিশিদিন'। অনুষ্ঠানে মাইলসের সদস্যদের স্ত্রীরাও ছিলেন। হামিন আহমেদ বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছিলেন। তবে মাইলস থেকে বেরিয়ে শাফিন আহমেদ বেশ মতবিরোধের পর কিছু অভিযোগ এনে ছেড়ে দিয়েছিলেন ব্যান্ড দল। তবে আবার ফিরে এসেছেন নিজের এই দলে।

ফিডব্যাক

এই ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা বলতে পারবে যারা নব্বইয়ের দশকে বেড়ে উঠেছিল। ব্যান্ড গানের পক্ষে মাকসুদ বেশ কথা বলেছিলেন, তারা গেয়েছিলেন লোকগান 'আমার জনম গেলো দুঃখে'। এর কিছুদিন পরেই ফিডব্যাক থেকে বেরিয়ে আসেন মাকসুদ, নতুন দল গঠন করেন।

নওয়াজেশ আলী খান

বিটিভির একজন স্বনামধন্য প্রযোজক, যিনি অনেক বিখ্যাত অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। এই 'জলসা'র প্রযোজক ছিলেন, অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিলেন তিনি। বিটিভি থেকে অবসরের পর একুশে টিভি, এটিএন বাংলাতেও কর্মরত ছিলেন। এখন খুব সম্ভবত দেশের বাইরে থাকেন।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা