পদ্মাবত, তাণ্ডব, ফ্যামিলি ম্যান, পৃথ্বীরাজ: ফ্যানাটিকদের এই উন্মত্ততার শেষ কোথায়?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সাম্প্রতিক সময়ে এই ফ্যানাটিকদের হিংস্রতা ক্রমশই বাড়ছে৷ টিভি সিরিজ 'ফ্যামিলি ম্যান' এর সেকেন্ড সিজনের কয়েক সেকেন্ডের টিজার দেখেই সিরিজ নিয়ে আপত্তি তুললো তামিল সেনারা৷ এই একই মানুষেরা আপত্তি তুলেছিলো '800' সিনেমায় বিজয় সেথুপাতির অভিনয় নিয়েও। দেবের 'কমান্ডো' নিয়েও কম হয়নি জলঘোলা...
ইয়াশ রাজ ফিল্মস এর ব্যানারে অক্ষয় কুমারের 'পৃথ্বীরাজ' সিনেমা আসতে চলেছে সামনে। যদিও সিনেমাটি আসার কথা ছিলো গত দিওয়ালিতেই। কথা কিন্তু করোনাজনিত কারণে মুক্তির তারিখ খানিকটা পিছিয়ে যায়৷ তবে এ বছরেই যে মুক্তি পাচ্ছে 'পৃথ্বীরাজ', তা মোটামুটি নিশ্চিত। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম মানবিক ও দাপুটে শাসক পৃথ্বীরাজ চৌহানের জীবনকে উপজীব্য করে অক্ষয় কুমারের প্রথম হিস্টোরিক্যাল ফিল্ম বলে কথা, একটু দেরী হলেও সমস্যা নেই। আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছিলাম। এরইমধ্যে এলো বিতর্কিত করণি সেনাদের হুমকি।
এদের বিতর্কিত বলছি, কারণ এরা বিগত অতীতেও একাধিক নির্মাণ নিয়ে এরকম হুমকিধামকি দিয়ে এসেছে। সঞ্জয় লীলা বানশালি'র 'পদ্মাবত' সিনেমার সময়ে রীতিমতো সেটে গিয়ে গায়ে হাত তুলেছে পরিচালকের। সিনেমার আর্টিস্টদের একাধিকবার মৃত্যুর হুমকি দিয়েছে। সাইফ আলী খানের 'তাণ্ডব' এর সময়েও এরা দিয়েছে হুমকি। এরপর অক্ষয় কুমারের এই সিনেমার বেলাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করলাম। এদের দাবীও যথেষ্ট হাস্যকর। তিনটি দাবীর মধ্যে একটি উল্লেখ করছি। এরা দাবী করছে- টাইটেলে শুধু 'পৃথ্বীরাজ' লেখা সম্রাটের জন্যে অপমানজনক৷ লিখতে হবে নাকি- 'বীর যোদ্ধা সম্রাট পৃথ্বীরাজ চৌহান।' কী অদ্ভুত!
সাম্প্রতিক সময়ে এরকম ফ্যানাটিকদের পাগলামি ক্রমশই বাড়ছে৷ বহুল আলোচিত টিভি সিরিজ 'ফ্যামিলি ম্যান' এর সেকেন্ড সিজনের কয়েক সেকেন্ডের টিজার দেখেই যেমন সিরিজ নিয়ে আপত্তি তুললো তামিল সেনারা৷ এই একই মানুষেরা আপত্তি তুলেছিলো মুত্তিয়াহ মুরালীধরণের বায়োপিক '800' সিনেমায় বিজয় সেথুপাতির অভিনয় নিয়ে। শেষপর্যন্ত বিজয় সেথুপাতিকে তো সরেই দাঁড়াতে হলো। দেবের 'কমান্ডো' সিনেমার টিজার দেখেও যেমন একদল মানুষজন জোর দাবী তুললো, ইসলাম ধর্মকে বাজেভাবে দেখানো হয়েছে এখানে। তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠলো সেখানেও। বিতর্ক উঠেছিলো 'মনিকর্ণিকা' সিনেমার সময়েও।
হ্যাঁ, এটা ঠিক, কোনো সিনেমা-সিরিজে ভুল জিনিস এলে সেটা নিয়ে অবশ্যই প্রতিবাদের জায়গা আছে। যেমন- ভারতের 'গুন্ডে' সিনেমায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার পরে অনেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন। যেটা খুবই যথার্থ এক কাজ। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের টিজার দেখে, শুটিং এর সময়ে সেটে গিয়ে, শুধুমাত্র সিনেমার টাইটেল দেখেই আগ্রাসী হয়ে কামড় বসাতে যাওয়া... এ কেমন অদ্ভুত ব্যবহার! একটু সহনশীলতা মানুষের কবে হবে?
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি'র ক্ষেত্রে একটু পান থেকে চুন খসলেই নানা ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে বসে থাকে একশ্রেণির লোকজন৷ তাদের উপদ্রব নাহয় মানা গেলো। বিশাল বড় জাঁতাকল নিয়ে বসে থাকে 'সেন্সরবোর্ড' নামের প্রহসন। তাদেরও নাহয় মানা গেলো। কিন্তু এই দাঁতালো বুরবাকদের হিংস্র ব্যবহার কাহাতক মানা যায়? সিনেমা-টিনেমা'র ধার না ধেরে এদের সাম্প্রদায়িক, আগ্রাসী ও রক্ষণশীল আচরণে ভালো কাজগুলোই মানুষের কাজে আসতে গিয়ে ক্রমশ প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। অবশ্য এই মানুষগুলোর উদ্দেশ্যও বোধহয় তাই। ভালো কাজগুলোকে যেকোনোভাবে পণ্ড করেই বোধহয় সুখের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় এরা। এবং যতই সময় গড়াচ্ছে, এদের দৌরাত্ম ততই বেড়ে যাচ্ছে। সামনের সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের দমন করাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত শিল্পীসমাজের। নাহয়, ঘোর দুর্দিন সমাচ্ছন্ন।