দুই পর্বের 'কেজিএফ' এবং এক ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

এই সিনেমা মুক্তির আগে 'কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি'কে ঠিক অতটা গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করতোনা কেউই। কিন্তু 'কেজিএফ: চ্যাপ্টার ওয়ান' মুক্তির পরেই চমকে যান সবাই। কন্নড় ফিল্ম নিয়ে আলাদা উন্মাদনা তৈরী হয়। এখন তো এই সিনেমা মুক্তির পরেই গোটা ভারতের দর্শকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন সিনেমাহলগুলোতে...
বলা হয়ে থাকে, সিনেমার মতন সিনেমা বানালে সে সিনেমা একাই টেনে নিয়ে যেতে পারে পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে। এই কথার স্বপক্ষে জ্বলজ্বলে এক উদাহরণ- 'কেজিএফ- চ্যাপ্টার ওয়ান।' ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর যে সিনেমা একাই 'কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি'কে নিয়ে গিয়েছে অন্য উচ্চতায়৷ মাত্র ৮০ কোটি রূপিতে নির্মিত এ সিনেমা বক্সঅফিসে কয়েকগুণ বেশি ব্যবসা করেছিলো, প্যান-ইন্ডিয়ান সিনেমা হিসেবে অন্যান্য প্রদেশেও তুলেছিলো হুলস্থুল ঝড়। হলিউডি মাস্টারপিস- 'দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যাণ্ড দ্য আগলি' কিংবা 'ফর আ ফিউ ডলারস মোর'এর মতন সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত এ সিনেমায় অ্যাকশন, সাসপেন্স, থ্রিলের যে যুগপৎ, স্বকীয় মোড়ক আমরা পাই, সে মোড়ক অনেকদিন ধরেই ব্রাত্য ছিলো ভারতীয় সিনেমাতে।
এই সিনেমার চমৎকারিত্ব নিয়ে আলাদাভাবে যদি বলতে হয়, তাহলে কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা বিশেষভাবে করতে হবে। প্রথমত- এই সিনেমা মুক্তির আগে 'কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি'কে ঠিক অতটা গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করতোনা কেউই। কিন্তু 'কেজিএফ-চ্যাপ্টার ওয়ান' মুক্তির পরেই চমকে যান সবাই। কন্নড় ফিল্ম নিয়ে আলাদা উন্মাদনা তৈরী হয়। এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ২০১৮ সালের পর থেকে যেকোনো কান্নাডা সিনেমা মুক্তির পরেই সে সিনেমা ভারতের অন্যান্য প্রদেশে দ্রুতবেগে সরবরাহের জন্যে সংশ্লিষ্ট মহলের নিয়মিত চাপ আসার এক সংস্কৃতি শুরু হয়। দ্বিতীয়ত- কন্নড় সিনেমার প্রযোজকেরা সবসময়েই রিজিওনাল কনসেপ্টের সিনেমাগুলোতে অর্থলগ্নি করতে চাইতেন। কিন্তু 'কেজিএফ- চ্যাপ্টার ওয়ান' দেখিয়ে দেয়, চাইলে প্যান-ইন্ডিয়ান কনসেপ্টের সিনেমা করেও রীতিমতো উড়িয়ে দেয়া যেতে পারে যাপিত রেকর্ড়-পরিসংখ্যান-নথি-দস্তাবেজের খাতা। এ বিষয়টি টনক নড়িয়ে দেয় প্রযোজকদের। এই সিনেমার পরপরই তাই প্যান-ইন্ডিয়ান সিনেমাগুলোতে অর্থলগ্নি শুরু হয় নতুন করে।

কন্নড় সিনেমাগুলো আগে অতটা ডাবও হতো না। এখন নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পেলেই ডাবের জন্যে হাপিত্যেশ করে বসে থাকে বহু দর্শক। বলিউড থেকে শুরু করে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট কুশীলব-নির্মাতা-প্রযোজকেরা এখন অনেকটাই সমীহের চোখে দেখেন একসময়ের অবহেলিত এই ইন্ডাস্ট্রিকে। এই অসাধ্যসাধনের মূল কৃতিত্ব যে কার, তা অবশ্য বলাই বাহুল্য।
'কলার গোল্ড ফিল্ডস' এর খনিশ্রমিক রকি, যে কি না জীবনের নানা পর্যায়ে বহু বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে, সে একসময়ে হয়ে ওঠে প্রতিবাদী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে শুরু করে অসম লড়াই...'কেজিএফ- চ্যাপ্টার ওয়ান' এর মোদ্দা গল্প এটাই। তবে দুর্দান্ত সব অ্যাকশন কোরিওগ্রাফি, ইয়াশের বোল্ড অভিনয় আর ন্যারেশন স্টাইলের অভিনবত্ব; সব মিলিয়ে এই সিনেমাই হয়ে যায় একখণ্ড ইতিহাস; কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবেধন নীলমনি! যে ইতিহাসের দ্বিতীয় খণ্ড মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো জুলাইয়ে। যদিও জুলাইয়ে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সিনেমা। কারণ, ভারতে করোনার প্রকোপ বাড়ার কারণে সব প্রদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলি খোলা সম্ভব হয় নি। ঠিক এ কারণেই পিছিয়েছে এই সিনেমার মুক্তির তারিখ। বলা হচ্ছে, আগামী বছরের চৌদ্দ এপ্রিলে সম্ভবত মুক্তি পাবে সিনেমাটি। তবে এই দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা আছে আরেকটি সিনেমার। প্রভাস অভিনীত 'সালার' সিনেমাও মুক্তি পাওয়ার কথা সেদিন। সুতরাং, খানিকটা যে সংঘর্ষ হতে পারে এই দুই সিনেমার মধ্যে, তা বলাই বাহুল্য!
'কেজিএফ' এর প্রথম কিস্তির শেষ দৃশ্যে সামান্য সময়ের জন্যে পর্দায় এসেছিলেন আধিরা। যেন আভাস দিয়েছিলেন অশুভ ভবিষ্যতের। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের পর্বে 'আধিরা'রূপী সঞ্জয় দত্ত হবেন অ্যান্টাগনিস্ট ক্যারেক্টার! অনেকটা 'অ্যাভেঞ্জারস' এর 'থানোস' এর মতই দুর্জেয় হবে এই চরিত্রটি! রকির সাথে আধিরার দ্বৈরথই সম্ভবত এই সিনেমার মূল উপজীব্য। সাথে রকির ইমোশনাল ব্যাকস্টোরি এবং খনিশ্রমিকদের বিষাদগ্রস্ত মেঘময় জীবনের গল্পও আসবে ক্ষণেক্ষণে। আট মাস আগে মুক্তি পাওয়া টিজারেও যেমন সেরকমই আভাস পাচ্ছিলাম আমরা। আধিরার থমথমে আবির্ভাব, কলার গোল্ড ফিল্ডসের পাণ্ডুরং, ইয়াশের অ্যাকশন, রাভিনা টেন্ডন ও শ্রীনিধি শেঠির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে উপস্থিতি...আশা করা যাচ্ছে, প্রথম সিনেমার জনপ্রিয়তাকেও ছাপিয়ে যাবে এই পর্ব। যে জনপ্রিয়তার ইংগিত পাওয়া গিয়েছে মুক্তিপ্রায় টিজারেও। টিজারটি এরই মধ্যে দেখে ফেলেছেন দুইশো মিলিয়ন মানুষ! 'কেজিএফ- চ্যাপ্টার ওয়ান' এর মতন এই সিনেমাও মুক্তি পাবে কন্নড়, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম ভাষায়।

সবমিলিয়ে আরেকটা জমজমাট অ্যাকশন এপিক যে আসছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। এখন শুধু সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা। প্রেক্ষাগৃহে দানবদের ঢুকে পড়ার অপেক্ষা। প্রলয় ঘনাচ্ছে। তবে ঠিক কবে আঘাত হানবে এই ঘনঘোর প্রলয়, প্রশ্ন সেখানেই। সেজন্যেই থমথমে হাপিত্যেশ। দিন গোনা।