"আমরা যে কয়জন বন্ধুত্বের এই গল্পে কাজ করার জন্য লোকেশনে যাই, তারা প্রত্যকেই কাজ করার সময়ে কখন যে নিজেরাই ভালো বন্ধু হয়ে গেছি সেটা নিজেরাই জানিনা। কাজ শেষ হয়েছে, এমনকি ফিল্মটা রিলিজও হয়ে গেছে তবে আমরা কিন্তু বাস্তব জীবনেও ভালো বন্ধু রয়ে গেছি..."

সম্প্রতি দেশীয় কনটেন্ট ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ নিয়ে বেশ ভালোই আলোচনা, প্রশংসা এবং আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাধারন দর্শক থেকে শুরু করে তারকারাও প্রশংসার জোয়ারে ভাসাচ্ছেন তারুন্য, বন্ধুত্ব এবং প্রেম নিয়ে সমসাময়িক সময়ের আলোকে নির্মিত এই ওয়েবফিল্মকে। 

টেলিভিশনের জনপ্রিয় নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান প্রথমবার নির্মান করলেন ওয়েবফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। এই ফিল্মে আরো বেশকিছু নবীন কিন্তু সম্ভাবনাময় অভিনেতা এবং অভিনেত্রীর সাথে দেখা গেছে এই সময়ের অন্যতম আলোচিত এবং প্রতিভাবান অভিনেতা খায়রুল বাসারকে। গত ১৯শে আগষ্ট মুক্তিপ্রাপ্ত এই ওয়েবফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে আবারো আলোচনা এবং প্রশংসায় তিনি। 

ট্রেলার, টিজার বা গান তো ছিলোই এখন রিলিজের পর বিনোদন প্রেমী প্রায় সকল দর্শকদেরই জানা যে, চারজন বন্ধু এবং তাদের ব্যক্তিগত নানা সম্পর্কের সমীকরন নিয়েই গড়ে উঠেছে ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ এর গল্প। চার বন্ধুর মাঝে অন্যতম একজন হলেন মুন্না। গান গায়, গান ভালোবাসে, নতুন সুরের খোজে বন্ধুদের সাথে নিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে চায় এবং যাত্রাপথেই তার জীবনে ধরা দেয় অন্যরকম এক প্রেম। এমনই একটি চরিত্র মুন্না হিসেবে নিজের সেরাটাই উপহার দিলেন এই সময়ের এই আলোচিত অভিনেতা খায়রুল বাসার। ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ রিলিজের পর প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য এটাই তার প্রাপ্তি। 

'মুন্না' চরিত্রে অভিনয় করেছেন খায়রুল বাসার

তবে খায়রুল বাসার জানান, আসলে এতো প্রশংসা বা পজেটিভ মন্তব্য নিয়ে আমার অনুভূতিটা কিন্তু মিশ্র। কারন প্রশংসা তো অবশ্যই আনন্দের তবে সাথে সাথে এতো ভালো ভালো মন্তব্য পাচ্ছি যেটা আনন্দের পাশাপাশি চোখে পানিও এনে দিচ্ছে, শ্যুটিং এর সময়কার পুরো জার্নিটাই এখন চোখের সামনে। হাসি, আনন্দ, কষ্ট, পরিশ্রম সব মিলিয়ে এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। 

মিজানুর রহমান আরিয়ানের চীফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সাধনের একটি ফোনকলের মাধ্যমেই নেটওয়ার্কের বাইরে তে কাজের অফার পান খায়রুল। সেই ফোনকলে বলা হয়েছিলো, আরিয়ান একটা গল্প নিয়ে বসতে চান খায়রুল বাসার এবং বাকিদের সাথে। সেই বসাতেই গল্প এবং ক্যারেক্টর সম্পর্কে শুনে কাজটি করতে আগ্রহী হন খায়রুল বাসার। কারণ তারুণ্য এবং বন্ধুত্ব নিয়ে এমন কাজ করার একটা সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। 

খায়রুল বাসার আরো জানালেন, "কাজ করতে গিয়ে প্রধান যে অভিজ্ঞতা পাওয়া গেলো সেটাও অনেক মজার এবং আজীবনের অভিজ্ঞতাই বলা যায়। আমরা যে কয়জন বন্ধুত্বের এই গল্পে কাজ করার জন্য লোকেশনে যাই তারা প্রত্যকেই কাজ করার সময়ে কখন যে নিজেরাই ভালো বন্ধু হয়ে গেছি সেটা নিজেরাই জানিনা। কাজ শেষ হয়েছে, এমনকি ফিল্মটা রিলিজও হয়ে গেছে তবে আমরা কিন্তু বাস্তব জীবনেও ভালো বন্ধু রয়ে গেছি। আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনে আমরা অনেকগুলো দিন ধরেই পুরো কাজটি সম্পূর্ণ করেছি এই অভিজ্ঞতাটাই তো আমার বা আমাদের কাছে অনেক বড় একটা ব্যাপার।"

নির্মাতা হিসেবে মিজানুর রহমান আরিয়ানের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অভিনেতা খায়রুল বাসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘আরিয়ান ভাইয়ের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা বলতে গেলে এককথায় বলতে হয় যে-  অসাধারণ! কারন একজন নির্মাতা হচ্ছেন ক্যাপ্টেন অব দ্যা শীপ। আর আরিয়ান ভাই আসলেই আমাদের ক্যাপ্টেন ছিলেন। উনি ভালোভাবেই জানেন কোন শট কিভাবে দেখানো হবে। ঠিক কতোটুকু তিনি চান প্রতিটি শিল্পীর কাছ থেকে, সেট, লাইটিং, ব্যাকগ্রাউন্ড প্রতিটা সেক্টরেই উনি পারফেক্ট এবং নিজের কাজ খুব ভালোভাবে জানা একজন মানুষ তিনি। তার সাথে আমি কয়েকটা কাজই কপ্রেছি। এবং প্রতিটা কাজেই তার ডেডিকেশন এবং পরিশ্রম আসলে আমাদেরই অনুপ্রেরণা যোগায়।' 

সহশিল্পীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? এই প্রশ্নের জবাবে খায়রুল বলেন- ‘শুরুটা স্বাভবিকভাবেই অপরিচিত কারো সাথে পরিচয়ের মতোন হলেও কাজটা যখন শেষ হয় তখন আমাদের দেখে যে কারো মনে হবে আমরা স্কুল, কলেজের বন্ধু ছিলাম বরাবরই। আমাদের সবার মধ্যেই পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বের একটা টান তৈরী হয়ে গিয়েছে ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ তে কাজ করতে যেয়ে। 

তবে শুধু রাজ, ইয়াশ বা জুনায়েদ এই তিনজনই নয়, সাথে তাসনুভা তিশা, তাসনিয়া ফারিন, অর্ষা, তুষি এবং পরিচালক আরিয়ান ভাই সহ পুরো ইউনিটের সবাই যথেষ্ঠ হেল্পফুল তো ছিলোই সাথে অনুপ্রেরণাও দিয়েছে কাজটা সহজ এবং স্বাভাবিক ভাবে করার জন্য। সবাই মিলে মজা করেই পুরো কাজটা শেষ হয়েছে। তবে এমন সুন্দর এবং পারফেক্ট একটা টিমের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা তো একটা অসাধারণ স্মৃতি হয়ে থাকবে আমার কাছে।’ 

‘নেটওয়ার্কের বাইরে’র মুন্না প্রেমে পড়েন নিজের থেকে ৫ বছরের বড় এক নারীর। অসম প্রেমের এই অংশটুকু দর্শকদের ছুয়ে গেছে বেশ ভালোভাবেই। খায়রুলের লাভ ইন্টারেস্ট হিসেবে পর্দায় দেখা গেছে অর্ষাকে। তাদের কেমিস্ট্রি এবং বেশ কিছু সংলাপ প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

প্রশংসা কুড়িয়েছে বাসার-অর্ষার জুটি

বাস্তব জীবনে খায়রুল বাসার অসম বয়সী প্রেম নিয়ে আসলে কি ভাবেন প্রশ্নটা করা হয়েছিল তার কাছে। বাসার বললেন, ‘আসলে প্রেম তো সব সময়ই সুন্দর। দুইজন মানুষ সততা, বিশ্বাস আর সম্মান রেখে একে অন্যকে ভালোবাসবে, হয়তো ক্ষেত্রবিশেষে দুজন দুজনকে সাপোর্ট দিবে এটাতে খারাপ কিছু নেই। এখানে সমবয়সী, অসম বয়সী বা অন্যকিছু বলে তো কথা থাকা উচিত নয়। সত্যিকারের প্রেম হলে বয়স কোনো ফ্যাক্টর না বলেই আমার মনে হয়।’

আরেকটা মজার বিষয় যেটা পুরোই কাকতালীয় সেটা হচ্ছে খায়রুল বাসার অভিনীত চরিত্রগুলোতে ইদানীং এমন কিছু সংলাপ বা শব্দ আমরা পাই যেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মূহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় যেমন মহানগর সিরিজের ‘গ্যাষ্ট্রিকের ঔষুধ’ আবার যত্ন নাটকের ‘প্যাড’ এবং নেটওয়ার্কের বাইরে তে ‘কিশমিস’... এটা কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না পুরোই কাকতালীয়?

খায়রুল বাসার হাসি চাপতে চাপতে জানান, আসলে এটা তো শ্যুটিংয়ের সময়েও খেয়াল করা হয়নি কোনোদিন। পুরোটাই কাকতালীয় তবে মজার বিষয় হচ্ছে দর্শকেরা এটা ক্যাচ করতে পারছে এবং পজিটিভ ভাবেই এটা নিয়ে আলোচনা বা ভাইরাল ট্রেন্ড হয়ে যাচ্ছে। হয়তো সেই হিসেবে এটাও একটা ভাগ্যের বিষয় কারন অনেক সংলাপের মাঝে আমার সংলাপ গুলোও তারা মনে রাখছেন। তবে এর কৃতিত্ব কিন্তু সংলাপ রচয়িতা এবং নির্মাতার।

চরের মাষ্টার, মহানগর, ডার্ক সাইড অব ঢাকা, নট আউট, যত্ন এবং নেটওয়ার্কের বাইরে একের পর এক ভিন্নধর্মী কনটেন্ট এবং ব্যতিক্রমী চরিত্রে খায়রুল বাসারের উপস্থিতি সুন্দর এক আগামীর জানান দেয়। সামনের দিনগুলোতে শক্তিশালী অভিনয়, দক্ষতা এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে তিনি এগিয়ে যাবেন অনেকদূর সেই প্রত্যাশা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা