বাবা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই অজস্র সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তবুও এরমধ্যে দাগ কাটার মতন সিনেমাগুলোর অধিকাংশ এসেছে কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে...

'বাবা'রা হয়তো নারকেল। উপরে শক্ত আবরণের প্রাচীর। ভেতরে কোমল। আমরা অনেকেই উপরের প্রাচীরটুকু ভেদ করি নি বা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। বাবারা তাই আজীবনই আমাদের কাছে হয়ে থেকেছেন পাটিগণিতের সেই অধ্যায়, যে অধ্যায়ের দুর্বোধ্য অঙ্ক আমরা সমাধানের চেষ্টাও করিনি কোনোদিন। তবু বাবারা মেনে নিয়েছেন সব। বিশাল আকাশ বুক পেতে ঠেকিয়ে দিয়েছেন, যাতে আমাদের গায়ে আকাশ ভেঙ্গে না আসে। বাবা'দের নিয়ে দিবস তাই একটু বিশেষ, একটু আলাদা, একটু গাঢ়। 

বাবা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই অজস্র সিনেমা হয়েছে। তবুও এরমধ্যে দাগ কাটার মতন সিনেমাগুলোর অধিকাংশ এসেছে কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে৷ সেখান থেকে বাছাই করা তিন সিনেমাই আজকের উপজীব্য, যে সিনেমাগুলোতে সব ছাপিয়ে প্রকট হয়েছে বাবা-সন্তানের অপার্থিব রসায়ন। অপত্যস্নেহ। ভালোবাসা। 

1. Miracle in Cell No. Seven

এই সিনেমা দেখেছেন আর শেষের দিকে এসে মন খারাপ করেননি, এমন মানুষ আছে বলে বিশ্বাস করি না। গল্পটাও বিষণ্ণ। মানসিকভাবে অসুস্থ এক বাবা আর তার ছোট্ট এক মেয়ে...এরাই সিনেমার প্রোটাগনিস্ট। একদিন বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ধর্ষণ ও হত্যার মিথ্যে অভিযোগে। বাবা বুঝে উঠতে পারে না, কী করবে। তার ইচ্ছে কারাগারের এই গরাদের বাইরে একদিন মেয়ের সাথে দেখা হবে। ছোট্ট মেয়েও আশা করে, বাবা একদিন ফিরে আসবে তাদের ছোট্ট নীড়ে৷ এই দুই প্রাণীর আশা পূরণ হবে কী না, হলেও কিভাবে হবে, তা নিয়েই এগোয় গল্প। বাবা-মেয়ের অপাপবিদ্ধ ভালোবাসার এ আখ্যান দেখলে মন কেমন করে উঠবেই। দলা পাকিয়ে উঠবে কান্নাও। এবং সেখানেই এ সিনেমা সার্থক। 

মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেন! 

2. Ode To My Father 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু সময় পরেই জাপান আক্রমণ চালায় কোরিয়ার উপরে। দক্ষযজ্ঞ চালাতে থাকে তারা। কোরিয়ার ভেতরে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের ডামাডোলে এক পরিবারের গল্পই দেখি আমরা সিনেমায়। যেখানে যুদ্ধে যাওয়ার আগে বাবা ছেলেকে একটি নির্দিষ্ট জায়গা দেখিয়ে বলে যায়, সেখান থেকে না যেতে। যুদ্ধ শেষ হলে সে এখানেই ফিরবে। ছেলে বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায় হাপিত্যেশ করে বসে থাকে সেই নির্দিষ্ট জায়গায়৷ যুদ্ধ শেষ হয়। বছরের পর বছর কেটে যায়। বাবা আর ফেরে না। ছেলেও যায় না কোথাও। সে জানে, সে বিশ্বাস করে, তার বাবা একদিন না একদিন ফিরবেই।  আসলেই কী ফিরবে? অপেক্ষার প্রহর আসলে কতটুকু বিস্তৃত হলে মানুষ আশা হারায়? বাবার জন্যে সন্তানের ভালোবাসা কতটুকু তীব্র হতে পারে? সব প্রশ্নেরই উত্তর আমরা পাবো এ সিনেমায়।

ওড টু মাই ফাদার! 

3. Hope 

আট বছরের এক বাচ্চা মেয়ে স্কুলে যাওয়ার সময়ে কিডন্যাপড হয়। তারপর এই ছোট্ট মেয়েটিকে ধর্ষণ করে মানসিকভাবে অসুস্থ এক লোক। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মেয়েটিকে। এরপর মেয়েটির মা-বাবা শুরু করে মেয়েটিকে সুস্থ করার লড়াই। তবে সব ছাপিয়ে বাবার লড়াইটা এখানে প্রচণ্ড তীব্র হয়ে ধরা দেয়। ছোট্ট বাচ্চা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এদিকে বাবা হাসপাতালের বিশাল অঙ্কের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সে সাথে সে খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই দোপেয়ে দানবকে, যার জন্যে তার আদরের সন্তানের আজ এই দশা। বাবা-মেয়ের এই গল্প খুবই সাফোকেটিং। সে সাথে মেলানকোলিকও। তবে হতাশার এতসব ধূসর উপাদান থাকা সত্বেও বাবা-মেয়ের এ গল্পে আছে দারূন সব চমকও৷ সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমা তাই ভেতরে কোথায় যেন গভীর দাগ কেটে যায়। চাইলেও মুছে ফেলা যায় না যে দাগ৷  

হোপ!

বাবারা আসলে ফানুশ। আগুন বুকে নিয়ে সুন্দর উড়ে চলে৷ আমরা উত্তাপ টের পাই না। আমরা শুধু ফানুশের জ্বলজ্বলে অবয়বটাই দেখি। বটবৃক্ষ এই মানুষগুলোকে নিয়ে তাই আলাদা করে যে দিন, সে দিনের তাৎপর্য বলে, লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। উপলব্ধির বিষয় পুরোটাই।

সবাইকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা। পৃথিবীর সব বাবা ভালো থাকুক। সন্তুষ্টিতে থাকুক। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা