কোটা ফ্যাক্টরি সিজন টু: সাদাকালো জীবনের গল্প কি রঙিন হবে এবার?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

জিতু ভাইয়া নানাবিধ অংকের অর্থের প্রলোভন পাবার পরেও, সবকিছুকে উপেক্ষা করে 'প্রডিজি' ছেড়েছেন। তিনি এখন নিজের প্রতিষ্ঠান খোলার স্বপ্নে বিভোর। তার খোলা প্রতিষ্ঠান কী টেক্কা দিতে পারবে প্রডিজি কিংবা মহেশ্বরী ইন্সটিটিউটকে? জিতু ভাইয়ার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরাও কী সামিল হবে তার এই উদ্যোগে? গত বছরের জিতু ভাইয়া কী এবারেও সমান জনপ্রিয় থাকবেন?
ভারতে 'ওয়েব কন্টেন্ট' এর এখন দারুণ সময় চলছে। একের পর এক দুর্দান্ত কাজ আসছে। সেগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে। গুনগত মানেও উতরে যাচ্ছে। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, সনি লিভ, জিফাইভে দারুণ দারুণ সব কন্টেন্ট এলেও সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে আবার টিভিএফ (দ্য ভাইরাল ফিভার)। অবশ্য, তারা ভালো করবে, এটাই প্রাসঙ্গিক। ভারতে ওয়েব কন্টেন্টের এই মাতামাতি শুরু যারা করেছে, তারাই এগিয়ে থাকবে, এটাই উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সময়ের ব্যবধানে তাদের কন্টেন্টের মান কমেনি মোটেও, বরং কাজগুলো তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে, চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে, সমালোচকদের স্নেহদৃষ্টি পেয়েছে। এখনও আইএমডিবিতে কেউ খুঁজতে চাইলে লক্ষ্য করবেন, ভারতের শীর্ষ দশটি ওয়েব সিরিজের মধ্যে ছয়টিই দখল করে রেখেছে টিভিএফ। এতটাই আগ্রাসীভাবে তারা দখল করে রেখেছে তাদের সুনাম!
টিভিএফ এর অরিজিনাল কন্টেন্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, তা নিয়ে গবেষণা করতে বসলে গলদঘর্ম হতেই হবে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ত্রয়ী অর্থাৎ টিভিএফ পিচার্স, কোটা ফ্যাক্টরি এবং অ্যাসপির্যান্টস এর মধ্যে। তবে একটু ব্যবধানে হলেও হয়তো এখানে এগিয়ে থাকবে কোটা ফ্যাক্টরি। কেন? সেটাই খুলে বলি বরং।
'কোটা ফ্যাক্টরি' তে মোটাদাগে আমরা পেয়েছিলাম একদল ছেলেমেয়ের গল্প, যারা আইআইটি'তে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্যে মরিয়া। 'কোটা' নামের এক শহরে বনবাসী হয়ে তারা ভর্তিপরীক্ষার দক্ষ যোদ্ধা হওয়ার সমরে আদা-জল খেয়ে নামে। সংকীর্ণ কামরা, বইয়ের স্তুপ, পরিবারবিহীন বিষণ্ণ সময় এবং সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে ইঁদুরদৌড়...ভর্তিপরীক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত মুখাবয়ব এবং নাজুক ত্রস্ত পদক্ষেপে গিজগিজ করে কোটার পরিসর-অপরিসর রাস্তা। 'কোটা' ক্রমশ রপান্তরিত হয় শহর থেকে ফ্যাক্টরিতে, যে ফ্যাক্টরিতে তৈরী করা হচ্ছে কিছু পণ্য, সেসব পণ্য যদি মানোত্তীর্ণ হয়, তাহলে তারা সুযোগ পাবে আইআইটি নামক বানিজ্যালয়ে। আর যদি না হয়, তবে নাম উঠবে বাতিলের দস্তাবেজে।

বৈভব পাণ্ডে এরকমই এক তরুণ। যে মানোত্তীর্ণ ঝকমকে পণ্যে রূপান্তরিত হতে চায়। সে কাঁচামাল হয়ে আসে 'কোটা ফ্যাক্টরি'র অন্দরে। পরিচয় হয় কিছু মানুষের সাথে। জিতু ভাইয়া, ভার্তিকা, মিনা, উদয়...সবার সাথে দেখা, কথা, সখ্যতা। সেখান থেকেই গল্পে আসে নানারকম মোড়, অপ্রত্যাশিত মোচড়... ইত্যাদি।

'কোটা ফ্যাক্টরি'র আগে আমরা সিনেমা-সিরিজে আকছার দেখেছি, যারা পড়াশোনা করে না, যারা কলেজে ড্রপআউট হয়, যারা লাফাংগামি করে...তারাই হিরো। তারাই বিদ্রোহী। তারাই আদর্শ। ঠিক এখানে এসে 'কোটা ফ্যাক্টরি' খুব রূঢ়ভাবে বুঝিয়ে দেয়, জীবন এরকম না। জীবন আসলে সেটাই, যেটা কোটা ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরে গড়পড়তা ছেলেমেয়েরা করে। 'কোটা ফ্যাক্টরি' সাদা-কালো তে করার পেছনে হয়তো এটাও কারণ, বোঝানো, জীবন এরকমই; ধূসর, সাদা-কালো। ঠিক এভাবেই দুর্দান্ত এই ওয়েব সিরিজ অনেক আঙ্গিকে, অনেক রকমে, অনেক মেটাফোরের আদলে টনক নড়িয়েছিলো। দুর্দান্ত কনসেপ্ট, দারুণ সিনেম্যাটোগ্রাফী এবং রিয়েলিস্টিক ক্যারেক্টার এবং ডায়লগ...'কোটা ফ্যাক্টরি' মুগ্ধ করেছেও বিস্তর।
তবে যে অংশে গিয়ে ঠিক যেভাবে শেষ হয়েছিলো 'কোটা ফ্যাক্টরি', তা খানিকটা অপ্রত্যাশিতই ছিলো। এটা ঠিক, গল্প নানাভাবে শেষ হতে পারে। তবে এ গল্প ঠিক কোনো দিকেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে দেয় নি। রবীন্দ্রনাথের 'শেষ হইয়াও হইলো না শেষ'কে হ্যাশট্যাগ বানিয়ে যেভাবে শেষ হয় 'কোটা ফ্যাক্টরি', তা হতাশার। সেখান থেকে যখন জানা গেলো, 'কোটা ফ্যাক্টরি টু' আসবে, স্বস্তির নিশ্বাসই ফেলেছি।
নেটফ্লিক্সে আগামী সেপ্টেম্বরে আসবে 'কোটা ফ্যাক্টরি'র দ্বিতীয় কিস্তি। কী হতে পারে সেখানে? সেগুলো নিয়ে সাতপাঁচ ভাবতে গিয়ে প্রথমেই মগজে আসে সিরিজের শেষ কিছু সময়। অতীতে গিয়ে দেখতে পাই, প্রোটাগনিস্ট বৈভব পাণ্ডে প্রডিজির কোচিং, প্রেমিকা, বন্ধু, জিতু ভাইয়াকে ছেড়ে চলে এসেছে 'মহেশ্বেরী ইন্সটিটিউট' এ। প্রশ্ন রয়ে যায়, এই সিজনেও সে কী সেখানেই থাকবে? নতুন বন্ধু, নতুন স্বপ্ন জুটিয়ে নেবে? নাকি সে ফিরে আসবে প্রডিজি তে? আবার শুরু থেকে শুরু হবে সব?
বৈভবের বান্ধবী ভার্তিকার কী এখনও মন খারাপ হয় বৈভবের জন্যে? যদি বৈভব ফিরে আসে আবার, তাহলে কি সে আবারও মেনে নেবে বৈভবকে? নাকি, এতদিনে সেও গুছিয়ে নিয়েছে নিজেকে? পেয়ে গিয়েছে অন্য কাউকে? নাকি, সম্পর্কে জড়ানোর চেয়েও নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করাই এখন তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এখানেও বিস্তর প্রশ্ন।
জিতু ভাইয়া নানাবিধ অংকের অর্থের প্রলোভন পাবার পরেও, সবকিছুকে উপেক্ষা করে 'প্রডিজি' ছেড়েছেন। তিনি এখন নিজের প্রতিষ্ঠান খুলবেন। তার খোলা প্রতিষ্ঠান কী টেক্কা দিতে পারবে প্রডিজি কিংবা মহেশ্বরী ইন্সটিটিউট কে? জিতু ভাইয়ার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরাও কী সামিল হবে তার এই উদ্যোগে? গত বছরের জিতু ভাইয়া কী এবারেও জনপ্রিয় থাকবেন?

মিনা এবং উদয়ের কী হবে? 'কোটা ফ্যাক্টরি'র প্রাণ এই দুই মানুষের জীবনে নতুন কী কী ঘটনা ঘটবে? তারা কি বৈভবের সহচর হয়েই থাকবে? নাকি সফল হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা ধরবে? নতুন কোনো চরিত্র কি যুক্ত হবে এবারের সিজনে? যে চরিত্র দাগ কাটবে, যার অভিনয়ের রেশ মুছবে না সহজে?
অনেক প্রশ্ন। সেগুলোর উত্তর মিলবে মাসখানেকের মাথায়। তবে যেটাই হোক না কেন, 'কোটা ফ্যাক্টরি' যে আবার ফিরছে, সেটাই স্বস্তির। অনেকগুলো প্রশ্ন করার পরেও লেখার একেবারে শেষে এসে তাই শেষ প্রশ্ন করেই ফেলি।

'কোটা ফ্যাক্টরি' এবারেও কী সাদা-কালোই থাকবে? নাকি রঙের বাটি থেকে খানিকটা রঙ ছলকে উঠবে চরিত্রগুলোর মানচিত্রে?