প্রথম সিনেমাতেই সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, অসামান্য এক অর্জন ছিল সেটা। দারুণ প্রতিভাবান এক অভিনেত্রী তিনি, যে কোন ধরণের চরিত্রের জন্য মানানসই, অথচ তার সেই মেধাকে সেভাবে ব্যবহারই করা যায়নি সিনেমায়...

তৌকীরের পরিচালনায় দারুচিনি দ্বীপ ছিল জাকিয়া বারী মম'র প্রথম সিনেমা। সেখানে তার চরিত্রটা ছিল বান্ধবীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ-সরল টাইপের। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এক তরুণী, বাবা-মায়ের সঙ্গে যাকে থাকতে হয় চাচার আশ্রয়ে, চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিতে যে কীনা বাধ্য হয়, একজনকে ভালোবাসলেও সেটা প্রকাশ করতে পারে না, বান্ধবীদের আড্ডায় ১৮+ কথাবার্তা শুনে যে মেয়েটা কানে আঙুল দেয়, যার চলনে-বলনে-কথায় আভিজাত্য নেই, কিন্ত আছে পরিপাট্যের ছাপ। সমবয়সী তো বটেই, বান্ধবীর বাবার সঙ্গেও যে বন্ধুর মতো মিশতে পারে, যার হৃদয়টা মায়া আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। জরি চরিত্রে অভিনয় করে ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা দিয়েই সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন মম। 

এরপর পদ্মা-মেঘনা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নবীন অভিনেত্রী থেকে সময়ের সাথে সাথে মম নিজেকে শাণিত করেছেন, প্রমাণ দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যের। পাশের বাড়ির মেয়ে টাইপের চরিত্রে তিনি যেমন মানানসই, গর্জিয়াস এবং বোল্ড চরিত্রেও তিনি কম কিছু নন। বাংলা নাটক তার অভিনয়প্রতিভার স্বাক্ষর দেখেছে, কিন্ত বঞ্চিত হয়েছে সিনেমা। ছুঁয়ে দিলে মন সিনেমার জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী হয়েছিলেন তিনি। আলতাবানু সিনেমায় দারুণ অভিনয় করেছেন, কিন্ত প্রচারণার অভাবে সেটা দেখারই সুযোগ পাননি বেশিরভাগ দর্শক। এই দুটোকে একপাশে রাখলে, দারুচিনি দ্বীপের পর মম'র অভিনয় নিয়ে তুমুল আলোচনা কখনোই হয়নি। দহনে তার অভিনীত সাংবাদিকের চরিত্রটি আলোচিত হতে পারতো, কিন্ত স্ক্রিনটাইম কম থাকায় আড়ালেই থেকে গেছে সেই পারফরম্যান্সও। 

দারুচিনি দ্বীপ সিনেমায় মম

তেরো বছরের বিরতি দিয়ে আবার তৌকীরের সিনেমায় কামব্যাক করছেন মম। মাঝের এই সময়টায় তৌকীরের পরিচালনায় নাটকে অভিনয় করেছেন, কিন্ত সিনেমায় কাজ করা হয়নি। তৌকীরের নতুন সিনেমা স্ফুলিঙ্গ-তে মম যে চরিত্রে অভিনয় করছেন, সেটার নাম আইরিন। দারুচিনি দ্বীপের জরির একদম বিপরীত একটা চরিত্র এটি। বন্ধনহীন এক উচ্চবিত্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা, যথেষ্ট আবেগী চরিত্র, গান আর পার্টি নিয়ে যার উদ্দাম জীবনযাত্রা। স্টাইলিশ, এবং বোল্ড একটা ইমেজে হাজির হচ্ছেন মম, তাতে কোন সন্দেহ নেই। 

আইরিনের চরিত্রে আত্মকেন্দ্রিকতা আছে, একই সঙ্গে আছে ভালোবাসাও। নিজের অপ্রাপ্তি এবং হতাশার যন্ত্রণার পাশাপাশি আছে ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে চাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সময়ের সাথে সাথে তার মধ্যে তৈরি হয় দেশ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও। সিনেমার প্রথম গান 'তোমার নামে' মুক্তি পেয়েছে ইতিমধ্যেই, তাতে মম'র বোল্ড এন্ড বিউটি লুক আলাদা করে নজর কেড়েছে সবার। 

স্ফুলিঙ্গ-তে মম'র চরিত্রের নাম আইরিন

নাটকের মম'র সঙ্গে সিনেমার মমকে মেলালে হয়তো একটু আক্ষেপ হবে যে কারো। দারুণ প্রতিভাবান এক অভিনেত্রী তিনি, যে কোন ধরণের চরিত্রের জন্য মানানসই, অথচ তার সেই মেধাকে সেভাবে ব্যবহারই করা যায়নি সিনেমায়। কিছু ক্ষেত্রে চিত্রনাট্য বাছাইয়ে তারও হয়তো অসাবধানতা ছিল। কিন্ত মম টেস্ট খেলতে এসেছেন, টি-২০ নয়। তিনি ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী, ওপরে উঠতে চান একটা একটা করে সিঁড়ি ভেঙে। আর সেভাবে হেঁটেই জয় করতে চান সবকিছু। 

স্ফুলিঙ্গ'র আইরিন চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট খেটেছেন মম, প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। তোউকীর আহমেদ খুব কম সময়ে তার সিনেমার শুটিং শেষ করেন, স্ফুলিঙ্গ'র শুটিং সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২৩ দিনে। এই চ্যালেঞ্জেও উতরে গেছেন মম, পাল্লা দিয়েছেন পরিচালকের চাহিদার সাথে। তৌকীরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে মম'র উঠে আসা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতা, সেই তৌকীরের সিনেমা দিয়েই আরেকটা প্রত্যাবর্তনের গল্প তিনি লিখতে পারবেন কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা