আজেবাজে কাজ হলে আমরা বেশিরভাগই তো ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করি। এই ধরনের কাজগুলো দেখলে অন্তত যেন একটু প্রশংসা করি, একটু হলেও বিশ্লেষণ করি। আপনার অল্প একটু ইন্সপিরেশন এই ১৪ জনকে ভবিষ্যতে হয়ত এত বেশি শক্তি দেবে, যে শক্তিতে বলিয়ান হয়ে তারা আমাদেরকে আরও ভিন্ন স্বাদের কন্টেন্ট উপহার দেবে...
এই ঈদে নীরবে যদি কেউ ভাল আর অন্যরকম কাজ উপহার দিয়ে যায়, তারা হল অভিনেতা মনোজ কুমারের ১৪ জন শিক্ষার্থী। মনোজ কুমার তার ১৪ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে শর্টফিল্ম বানাচ্ছেন, এই তথ্য অনেক আগেই দিয়েছিলাম। কম বাজেটে, কম সময়ে, কম আয়োজনে এতসব চমৎকার গল্প বলার চেষ্টা- দেখলেই অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে। শত নিরাশার মাঝে আশা দেখায়।
ঈদের পাঁচ দিন ইতিমধ্যে শেষ। প্রতিদিন দুটো করে ইতিমধ্যে ১০টি গল্প দেখানো শেষ। আমি আলাদা করে দুটো গল্পের কথা বলতে চাই- বিড়াল তপস্যা আর জুজু।
বিড়াল তপস্যার গল্প খুব সাধারণভাবে শুরু হয়, কিন্তু শেষটা এত বেশি চমক জাগানিয়া যে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। ৯৯% সময় বাবা চরিত্রে অভিনয় করে ফখরুল বাশার মাসুমকে কেউ এর আগে এই ধরনের ক্যারেক্টরে দেখেন নাই, গ্যারান্টেড।
জুজু গল্পটাও খুবই কম বাজেটে বানানো একটা হরর শর্টফিল্ম। আমাদের দেশে হরর কাজ সবচেয়ে কম হয় আর যা হয় তা বেশিরভাগ দেখেই ভয় পাওয়া হয় না। কিছু ব্যতিক্রম আছে যেমন তানিম রহমান অংশুর কাজ। জুজু হাতেগোনা সেই কাজের একটা যা আপনাকে ভয় পাওয়াবে। আর আপনি আরেকবার দর্শক হিসেবে বুঝবেন, বাজেট তেমন কোন বিষয়ই না যদি আপনার মাথা থাকে।
এত ভাল আলাপের পরেও, খারাপ লাগাটা অন্য জায়গায়। সবগুলো শর্টফিল্ম দীপ্ত টিভিতে প্রতিদিন রাত ১১.৩০ এ আর আরেকটা ১১.৫০ এ দেখানো হচ্ছে। সবগুলো শর্টফিল্ম বায়োস্কোপে আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটাও আসেনি।
ঈদের কাজ যদি ঈদের সময়ে না আসে, তাহলে সেটা দেখার জন্য মানুষের আগ্রহ যে কমে যায়, এটা আমাদের নীতি নির্ধারকেরা কবে বুঝবেন আমার জানা নেই। তার উপরে বায়োস্কোপ অ্যাপের যা অবস্থা, ছোট্ট একটা শর্টফিল্ম দেখার জন্য হলেও প্রচন্ড কষ্ট করা লাগে, বারবার বাফারিং হয়। এরপর আবার কন্টেন্ট আসতে এত দেরি!
এতকিছুর পরেও যে দর্শক এখনও এসব দেখেন আর দেখার জন্য আগ্রহ দেখান- তারচেয়ে বড় ব্যাপার আর কীইবা হতে পারে? ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় এই সমস্ত শর্টফিল্মগুলো সরাসরি ইউটিউবে চলে এলে সবচেয়ে ভালো হতো। অন্তত লার্জার একটা অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারতো।
আপনারা পারলে শর্টফিল্মগুলো দেখার চেষ্টা করবেন টিভিতে, দীপ্ত টিভিতে বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণাও কম। বিড়াল তপস্যা বানানো পরিচালক মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন, জুজুর পরিচালক এর আগে কিছু বানান নি বলে জানি। অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই। আমাদের সো কল্ড অনেক ডিরেক্টরের চেয়ে এদের কাজ অনেক ম্যাচিউরড।
আজেবাজে কাজ হলে আমরা বেশিরভাগই তো ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করি। এই ধরনের কাজগুলো দেখলে অন্তত যেন একটু প্রশংসা করি, একটু হলেও বিশ্লেষণ করি। আপনার অল্প একটু ইন্সপিরেশন এই ১৪ জনকে ভবিষ্যতে হয়ত এত বেশি শক্তি দেবে, যে শক্তিতে বলিয়ান হয়ে তারা আমাদেরকে আরও ভিন্ন স্বাদের কন্টেন্ট উপহার দেবে।
সবার শেষে অভিনেতা মনোজ কুমারকে আবারও বিশেষ ধন্যবাদ এরকম একটা উদ্যোগের জন্য।