যদি সবকিছু ভালো হয়, মাসুদ মুন্সিও ‘আমাদের মুন্সিদা’ হয়ে উঠতে পারেন!

থ্রিলারের জগতে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে নতুন নতুন নিরীক্ষা হয়েছে এবং আমরা বেশকিছু ভালো থ্রিলার পেয়েছি। সেখানকার কোনো কোনো থ্রিলার এমনকি সিরিজও হয়েছে। আমাদের প্রিয় হয়ে উঠেছে জেফরি বেগ, নূরে ছফার মতো চরিত্ররা। অনেক আগে থেকে যদিও মাসুদ রানা বাংলাদেশের পাঠকের কাছে প্রবাদপ্রতিম চরিত্র, কিন্তু দুঃখের বিষয় তাকে আমরা এখনও সেভাবে সিনেমায় কিংবা সিরিজে পাইনি; যেমনটা পেয়েছি ‘ফেলুদা’, ‘ব্যোমকেশ’ কিংবা কিংবদন্তি 'শার্লক হোমস'কে। আমাদের ভিজুয়াল কন্টেন্টের জগতে, বিশেষত এই ধরণের চরিত্রকে তুলে ধরতে যে রকম বাজেট এবং প্ল্যাটফর্ম দরকার তার অভাব, এই না পাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্মের যুগে সেই অভাব কিছুটা হলেও ঘুঁচতে যাচ্ছে এবং সম্ভবত আমরা আমাদের একজন গোয়েন্দাকে নিয়ে একটি ওয়েব সিরিজ পেতে চলেছি। ‘মুন্সিগিরি’র মাসুদ মুন্সির সেই ‘আমাদের গোয়েন্দা’ হয়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন জগতের জনপ্রিয় ও দক্ষ নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী ইতোমধ্যেই ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে বাজিমাত করেছেন। সেই সিনেমাতেই অভিনয় করে দর্শকের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। সেই অমিতাভ-চঞ্চল জুটিই ‘চরকি’র ব্যানারে ‘মুন্সিগিরি’ উপহার দিতে চলেছেন। নির্মাতা জানিয়েছেন ‘মৃতেরাও কথা বলে’ শিরোনামে মাসুদ মুন্সির প্রথম তদন্তের গল্পটি একটি ওয়েব সিনেমা হিসেবে আসতে চলেছে এবং তিনি পরবর্তীতে এই চরিত্রকে নিয়ে আরও কাজ করতে আগ্রহী। উল্লেখ করা প্রয়োজন মাসুদ মুন্সি চরিত্রের স্রষ্টা শিবব্রত বর্মণ, যার গল্প থেকে তৈরি অ্যান্থলজি ‘ঊনলৌকিক’ প্রায় সকল শ্রেণীর দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

শিবব্রত বর্মণের রচনা বলে মাসুদ মুন্সির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং ভরসা জাগায় যে আমরা একটি উপযুক্ত গোয়েন্দা চরিত্র পেতে চলেছি। কেননা শিবব্রত নিজে একজন অনুসন্ধানী ব্যক্তি। তার প্রতিটি গল্পে সেই অনুসন্ধিৎসার ছাপ পাওয়া যায়। তারচেয়ে বড় কথা রহস্য নিয়ে খেলা শিবব্রত বর্মণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ‘উনলৌকিক’ যারা দেখেছেন, তারা জানেন প্রতিটি গল্পই কী অসাধারণ রহস্যে মোড়া! দ্বিতীয়ত অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘আয়নাবাজি’কে থ্রিলার না বললেও মূলত এটিও সে ঘরানারই সিনেমা। আবার তার ওয়েব সিরিজ ‘ঢাকা মেট্রো’তেও আমরা রহস্য পাই। 'মুন্সিগিরি' নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন তার প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা। সুতরাং ধরে নেওয়া যায়, লেখক এবং নির্মাতা চমৎকার একটি রহস্য সাজাবেন যা ভেদ করবেন মাসুদ মুন্সি নামধারী চঞ্চল চৌধুরী।

ঊনলৌকিক অ্যান্থোলজি ফিল্মের মিস প্রহেলিকায় চঞ্চল

কোনান ডয়েলের লেখায় শার্লক হোমস, সত্যজিতের ফেলুদা কিংবা শরদিন্দুর ব্যোমকেশ গল্পের চরিত্র হিসেবে যতোটা জনপ্রিয় ছিল, সিনেমা-সিরিজ হয়ে সেই জনপ্রিয়তা বহুগুণ বেড়েছে। তাই এখন শার্লক বললে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র; ফেলুদা বললে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী; ব্যোমকেশ বললে আবীর কিংবা অনির্বাণের চেহারা ভেসে ওঠে। অর্থাৎ, গল্প লেখকের কিংবা সিনেমা পরিচালকের পাশাপাশি অভিনেতার ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। চঞ্চল চৌধুরী সে গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার মতোই দক্ষ অভিনেতা। তিনি ইতোমধ্যে মিসির আলী চরিত্রে একজন অনুসন্ধিৎসুর (প্রায় গোয়েন্দা) অভিনয় করেছেন। ‘তাকদীর’-এ তদন্ত না করলেও তিনি রহস্যের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন, আবার ‘মিসেস প্রহেলিকা’তে আমরা যুক্তিবাদী চরিত্রে তাকে দেখেছি। অর্থাৎ, অন্য অনেক চরিত্রের পাশাপাশি একজন গোয়েন্দা হিসেবে অভিনয়ের জন্যেও চঞ্চল চৌধুরী তৈরি।

সবকিছু মিলিয়ে তাই আশা করা যায়, গাই রিচি বা বিবিসি-র শার্লক না হোক, ব্যোমকেশ কিংবা ফেলুদার সিনেমা/সিরিজের মতো আমরাও একটি মানসম্মত গোয়েন্দা সিরিজ পেতে চলেছি। যদি সবকিছু ভালো হয়, মাসুদ মুন্সিও ‘আমাদের মুন্সিদা’ হয়ে উঠতে পারেন।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা