মানি হাইস্ট: 'ফ্লপ' শো থেকে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ওয়েব সিরিজ হলো যারা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

'লা কাসা দে পাপেল' এর সিজন ফিনালে উপলক্ষ্যে বিশ্বের নামজাদা ব্রাণ্ডগুলোও পাল্লা দিয়ে কোলাবোরেশনে নেমেছে এই সিরিজের সাথে। মজার ঘটনা ঘটেছে ভারতের জয়পুরেও। জয়পুরের Verve Logic নামের একটি সংস্থা ৩ সেপ্টেম্বর তাদের কর্মীদের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে...
শেষ কবে কোন ওয়েব সিরিজ দেখে বিশ্বব্যাপী মানুষজন এরকম একজোট হয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছে, তা ভাবতে গেলে বেগ পেতে হবে। 'লা কাসা দে পাপেল' কিংবা যাকে আমরা 'মানি হাইস্ট' নামে চিনি, সেই ওয়েব সিরিজ ২০১৭ সালে স্পেনে মুক্তির পরে প্রাথমিক যে ধাক্কা খায়, তারপর এতদূর আসবে তারা, এরকম হাইপ তৈরী করবে, তা ভাবনারও অতীত ছিলো। এই সিরিজের প্রথম সিজনের প্রথম পর্ব দেখার পরে মানুষজন বেশ মুগ্ধ হয়। ক্রমাগত জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে সিরিজটির। কিন্তু পরবর্তী পর্বগুলোতে এসে প্রাথমিক মুগ্ধতার জোয়ার ক্রমশই ক্ষীণ হতে থাকে। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, পুরো সিজন শেষ হওয়ার পরে মানুষজনের চোখে এই সিরিজ আরেকটি গড়পড়তা 'ফ্লপ' সিরিজ হিসেবেই আখ্যায়িত হয়।
কিন্তু গল্প বাকি ছিলো তখনও। স্ট্রিমিং সাইট 'নেটফ্লিক্স' এর চোখে পড়ে সিরিজটি। তারা কিনে নেয় এই সিরিজের মালিকানা। বাদবাকি পুরোটা হয়ে থাকে দিগ্বিজয়ী এক আখ্যান। সিজনের পরে সিজনে পাল্লা দিয়ে বাজেট বেড়েছে, দর্শকের মুগ্ধতা বেড়েছে। মানুষজনের উন্মাদনা বেড়েছে। 'লা কাসা দে পাপেল' নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা টিভি সিরিজ না৷ কিন্তু কন্টেন্টের মহোৎসবের এই যুগে এসেও নির্দিষ্ট এক শো নিয়ে এত মাতামাতি, এত আলোচনা-সমালোচনা, তা নিঃসন্দেহে ভাবনা উদ্রেগকারী। সেখানেই সেই বিশেষ শো'টির মহিমা আলাদাভাবে প্রকাশিত।

বিশ্বের এমন কোনো নামজাদা নিউজপেপার নেই, যারা এই টিভি সিরিজ এর গুনমুগ্ধ প্রশংসা করেন নি। ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়র থেকে শুরু করে বলিউডের শাহরুখ খান...প্রত্যেকেই এই সিরিজের গুনমুগ্ধ ফ্যান। নেটফ্লিক্স এ আসার পর থেকে 'লা কাসা দে পাপেল' ক্রমশ হয়েছে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার টপ রেটেড ওয়েব সিরিজ৷ এই সিরিজের প্রোটাগনিস্ট চরিত্রেরা হয়েছে অজস্র মানুষের রোল মডেল। সিরিজের তিন এলিমেন্টস- দালি মাস্ক, রেড জাম্পস্যুট কিংবা বেলা চাও... রূপান্তরিত হয়েছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ক্রেজে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়েছে এই সিরিজের থিম প্রোডাক্টসে। সিরিজের চরিত্রগুলোর নামে আর্জেন্টিনা, ইতালিতে সন্তানদের নাম রাখার মতন ঘটনা ঘটেছে। এই সিরিজের ডাকাতিকে অনুপ্রেরণা মেনে কোথাও কোথাও ডাকাতির মতন ঘটনাও ঘটেছে!

'লা কাসা দে পাপেল' এর কেন এত জনপ্রিয়তা, তা নিয়ে বহু মুনির বহু মত। কেউ কেউ বলেন, বৈষম্য, বঞ্চনা, সিস্টেমের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এসেছে এই শো। দালি মাস্ক, রেড জাম্পস্যুট কিংবা বেলা চাও'কে এনে যেভাবে ইতিহাস আর থ্রিলার কানেক্টেড করা হলো, তাও অনেকের মুগ্ধতার কারণ। ফুল প্যাক অ্যাকশনের পাশাপাশি ভালোবাসা, স্নেহ, অভিমানের যে গল্প বলে এ শো, সেটাও অনেকের কাছে এই টিভি সিরিজের অভিনবত্ব। এসব কারণের যুগপৎ মিশেলেই হয়তো নেটফ্লিক্সের 'নন-ইংলিশ' ওয়েব সিরিজের মধ্যে টপে আছে এই ওয়েব সিরিজ। তাও বহুদিন ধরে। এই ওয়েব সিরিজের যেকোনো একটি সিজন মুক্তির সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ দেখে ফেলে তা৷ তাদের প্রত্যেক সিজনের বাজেট এতটাই বেশি, যার ত্রিসীমানাতেও নেই স্পেনের অন্য কোনো কন্টেন্ট!
যেই ওয়েব সিরিজ নিয়ে এত মাতামাতি, তার শেষটা নিয়েও যে মানুষজনের উন্মাদনা লক্ষ্য করবো, তাতে আর আশ্চর্য কী! আগামী অক্টোবরেই যেমন হবে 'লা কাসা দে পাপেল' এর ফ্যানদের ভার্চুয়াল গেট টুগেদার। যার জন্যে এরমধ্যেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা শুরু করেছে বহু মানুষজন। 'লা কাসা দে পাপেল' এর সিজন ফিনালে উপলক্ষ্যে বিশ্বের নামজাদা ব্রাণ্ডগুলোও পাল্লা দিয়ে কোলাবোরেশনে নেমেছে এই সিরিজের সাথে। মজার ঘটনা ঘটেছে ভারতের জয়পুরেও। জয়পুরের Verve Logic নামের একটি সংস্থা ৩ সেপ্টেম্বর এই সংস্থার কর্মীদের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। তারা জানাচ্ছে-
যেহেতু 'মানি হাইস্ট' এর শেষ সিজন মুক্তি পাচ্ছে এ দিন, তাই এখানের কর্মীদের জন্যে এই ছুটি আমাদের পক্ষ থেকে উপহার।

এই ঘোষণা ভাইরাল হয়েছে অন্তর্জালে। সে সাথে প্রমাণিত হয়েছে আরেকটি বিষয়ও; 'লা কাসা দে পাপেল' এর উন্মাদনা৷ গত পাঁচ বছর ধরে বিতর্কের টেবিলের মধ্যমনি হয়ে থাকা ওয়েব সিরিজটির যবনিকাপাতের প্রথমার্ধের দৃশ্যায়ন হবে কালকেই। সে দৃশ্যায়নের সাত-সতেরো নিয়ে ভাবনা আর মানুষের উত্তেজনা এমনিতেই তুঙ্গে আছে। এখন শেষটা যদি শেষের মতন হয়, তাহলেই তৃপ্তি। তাহলেই সবার এ পাগলামি, উন্মাদনা, পাগলামি সার্থক!