বেশ কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া 'মিশন এক্সট্রিম' এর টিজার দর্শকের প্রত্যাশাকে আরেকটু বেশি উচ্চতাতেই নিয়ে গেছে যেন। পাখির চোখে সদরঘাট, লঞ্চে অ্যাকশন সিকোয়েন্স, ড্রোনশটে রাতের ঢাকা,  দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) এর বিশেষ কভার্ট অপারেশন, অথবা আচমকাই দেশ ছেড়ে বিদেশ, লাল বালুর মরুভূমি, কিছু আরব শেখ, মাঝখানে থমথমে অস্বস্তি, বেপরোয়া উগ্রপন্থী মানুষ- অনেক কিছুই দুর্দান্তভাবে এসেছে দেড় মিনিটের এই টিজারে!

২০১৭ সালের অক্টোবর মাস। শীত ক্রমশই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ভোরবেলায় কুয়াশার পুরো সর। জমাট বাতাস। বাতাসে গুড়ো গুড়ো কুয়াশা। শীতের আলস্যি।  আলমারি খুলে ন্যাপথালিন মাখানো শীতের পোশাক নামাচ্ছি। আসন্ন শীত মোকাবেলার ইউনিফর্ম- মাংকিটুপি, জ্যাকেট, জাম্পার, চাদর। সব নিয়ে প্রস্তুত সবাই। শীত নিয়ে এরকম আয়োজন করছি, এরইমধ্যে সিনেমাহলগুলোতে চলে এলো এক সিনেমা- ঢাকা অ্যাটাক। মনে আছে, ভার্সিটির ক্লাস বাদ দিয়ে চলে গিয়েছিলাম সিনেমা দেখতে। সেদিন আবার শৈত্যপ্রবাহ। শীতে জবুথবু দশা। এরইমধ্যে কোনোরকমে সিনেমাহলে গিয়ে বসলাম। সিনেমা শুরু হতে না হতেই অ্যাকশন, সাসপেন্স, থ্রিল। গা গরম হতে লাগলো। বেশি করে পেঁয়াজ-মরিচ-আদা ছিটোনো খাসির পায়ার গরম সুরুয়ায় চুমুক দিলে যেমন উত্তাপবোধ লাগে, তেমনটি হলো। বাংলাদেশের সিনেমায় এত দারুণ প্রযুক্তির ব্যবহার, টেকনিক্যালি সাউন্ড একটা স্টোরি, মাল্টিপল লোকেশনের দুর্দান্ত ব্যবহার...শেষ কবে দেখেছিলাম? ভাবতে গিয়ে বিভ্রান্ত হলাম। সিনেমা শেষে কাছে, দূরের, যাকে যেভাবে পেরেছি, দায়িত্ব নিয়ে এই সিনেমা রেকোমেন্ড করলাম। বাংলা সিনেমা দেখার জন্যে সবাইকেই বলা যায়। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে রেকোমেন্ড করার জন্যে সে সিনেমার বিশেষ কিছু গুণ থাকতে হয়। 'ঢাকা অ্যাটাক' সে গুনগতমানেই উতরে গিয়েছিলো সেবার।

'দেখতে দেখতে আবার আরেক শীত। অক্টোবর। শীতের পোশাক নামাবো নামাবো করছি, কাকতালীয়ভাবে 'ঢাকা অ্যাটাক' ফিরে এলো আবার। 'ঢাকা অ্যাটাক' এর কাহিনী ও মূলভাবনায় যিনি ছিলেন অর্থাৎ সানি সারোয়ার, তিনি এবং ফয়সাল আহমেদ পার্টনারশিপ গড়ে এবার ফিরছেন আরেক সিনেমা 'মিশন এক্সট্রিম' নিয়ে। যে সিনেমাও হয়তো হাবেভাবে মনে করাবে ঢাকা অ্যাটাককেই। 'ঢাকা অ্যাটাক' এর মতনই এ সিনেমাতেও প্রযুক্তির প্রবল আধিপত্য। দুর্দান্ত অভিনেতা আরেফিন শুভ, তাসকিনের উপস্থিতি। আশা করা যায়, গল্পেও থাকবে যারপরনাই চমক। থাকবে একাধিক লোকেশনে শুটিং। থাকবে ক্যামেরার চমকপ্রদ ব্যবহার। প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। 

চলচ্চিত্রে দেশের পাশাপাশি এলো বিদেশও! 

বেশ কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া  'মিশন এক্সট্রিম' এর টিজার সে প্রত্যাশাকে আরেকটু বেশি উচ্চতাতেই নিয়ে গেলো যেন। পাখির চোখে সদরঘাট, লঞ্চে অ্যাকশন সিকোয়েন্স, ড্রোনশটে রাতের ঢাকা,  দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) এর বিশেষ কভার্ট অপারেশন, অথবা আচমকাই দেশ ছেড়ে বিদেশ, লাল বালুর মরুভূমি, কিছু আরব শেখ, মাঝখানে থমথমে অস্বস্তি, বেপরোয়া উগ্রপন্থী মানুষ...অনেক কিছুই এলো দেড় মিনিটের এ টিজারে। এবং সবচেয়ে বড় কথা- টিজারের স্মার্টনেস বজায় রইলো শুরু থেকে শেষতক। সাধারণত আমরা আশেপাশে যেসব টিজার বা ট্রেলার দেখি, পুরো গল্প প্রায় অনেকক্ষেত্রেই বলা দেয়া হয় সেখানে। এই টিজারের ক্ষেত্রে সেটা ব্যতিক্রম। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুক করে রাখার এবং শেষে এসে ক্লিফহ্যাঙ্গারে শেষ করার ব্যাকরণ...বেশ ভালোমতোই বজায় রইলো। ফলাফল- মানুষের আগ্রহ মনুমেন্টের চূড়ায়। সুন্দর!

ঝকঝকে ট্রেলারে এলো অনেককিছুই! 

'মিশন এক্সট্রিম' টিম 'টিজার অব ট্রেলার' নামেও ত্রিশ সেকেন্ডের এক ভিডিও ক্লিপ ছেড়েছে। কন্টেন্টের প্রচারণার জন্যে বিদেশে এই বিষয় আকছারই হয়। মূল ট্রেলার ছাড়ার আগে অডিয়েন্সকে হুক করার জন্যে টিজার, টিজার অব ট্রেলার, মিনি ট্রেলার, মাইক্রো ট্রেলার, বিহাইন্ড দ্য সিনস, বিহাউন্ড দ্য ট্রেলার... বহুকিছু ছাড়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে 'টিজার অব ট্রেলার' বিষয়টা এই প্রথম দেখলাম। বিষয়টা ইতিবাচক। বিশ্বমানের কাজ হচ্ছে, প্রমোশনটাও বিশ্বমানের হোক। ক্ষতি নেই। যদিও ত্রিশ সেকেন্ডের এই টিজার থেকে আহামরি কিছুই পাইনি। তবে আশা করি, ২৪শে অক্টোবরে আসা ট্রেলার থেকে গল্পের খানিকটা হলেও সুলুকসন্ধান পাবো। সেজন্যেই অপেক্ষা। 

বর্ষীয়ান অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদও আছেন এই নির্মাণে! 

বলা হচ্ছে, পুলিশ অ্যাকশন থ্রিলার হবে 'মিশন এক্সট্রিম।'  তবে প্রযুক্তির ঝনঝনানি যতই থাকুক, গল্পটা যেন হয় খোলতাই। গেম অব থ্রোন্সে যেমন আমরা শুনেছি, টিরিয়ন ল্যানিস্টার বলেছেন-

বিশাল আর্মি, সোনাদানা, বিস্তীর্ণ ক্যানভাস কিছুই না, শুধুমাত্র গল্পই আমাদের একত্রিত করে।

তাই বেশ দুর্দান্ত এক গল্পের উপস্থিতি কাম্য। গল্পের বিন্যাস যদি ঠিক থাকে, প্রযুক্তির ব্যবহার যদি হয় প্রাসঙ্গিক এবং কুশীলবদের অভিনয় যদি হয় খোলতাই , তাহলে আশা করাই যায়, 'মিশন এক্সট্রিম' এর প্রত্যেক শো হাউজফুল হবে। যেমনটি হয়েছিলো 'ঢাকা অ্যাটাক' কিংবা 'আয়নাবাজি'র সময়ে। আপাতত তাই ডিসেম্বর তিনের অপেক্ষা। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির একবিন্দুতে মেলার অপেক্ষা। শুভকামনা রইলো।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা