আর হ্যাঁ, একটা কথা। যা দেখছো তা না, তার পেছনেও রহস্য আছে!

মহানগর! 

এক রাতের গল্প, মহানগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ থানায় ঘটে যাওয়া এক রাতের গল্প। যেখানে জীবনের নানা দিকের স্রোত এসে মিশেছে। শহরের বড় ব্যবসায়ী পুত্র থেকে ছিঁচকে চোর, কিংবা সাধারণ মানুষ, যাদের জীবনের একটা অধ্যায় কেটে গেলো এই থানায়। আছে পুলিশ চরিত্রের নানান রুপ। পুরো গল্প যেন নাগরিক  জীবনের দর্পণ। দিনশেষে সব কিছুরই যে দুটো দিক থাকে, তাই দেখানো হয়েছে মহানগরে। 

গল্পের মুখ্য চরিত্র ওসি হারুণ মোটামুটি দুর্নীতিবাজ অফিসার, তবে তার সঙ্গে থাকা এস আই মলয় বেশ সৎ। শহরের বড় ব্যবসায়ী পুত্র আফনানের এক এক্সিডেন্টে মারা যায় এক নিরীহ পথচারী, তাকে বাঁচানোর ফন্দি আঁটেন ওসি হারুন, যার দরুণ ফাঁসিয়ে দিতে চান গল্পের আরেক চরিত্র আবির হাসানকে, যে নিতান্তই সাধারণ মানুষ। বিশেষ আকর্ষণের ফাঁদে পড়ে তাকেও আসতে হয় থানায়, সেখানে দেখে মেলে আরেক ছিঁচকে চোরের। 

এই ঘটনার তদন্ত করতে মাঝ রাতে এসে হাজির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। তারপর নানা ঘটনাপ্রবাহ, ঘুরে যায় গল্পের মোড়। ওসি হারুণ ও মলয়ের দুইজনের দুরকমভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সঙ্গে নির্দোষ আবিরের আকুতি, বদমেজাজী আফনান, কঠোর পুলিশ, ছিঁচকে চোরের রসিক জীবনবোধ; সঙ্গে আরো কিছু আনুষঙ্গিক চরিত্র। দেখা মিলেছে বাস্তবতার, যা হরহামেশাই হয়। শেষের দিকে এসে উঠে এসেছে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া এক আলোচিত ঘটনার প্রায় অনুরূপ গল্প, যা কেউ হয়তো আশা করেনি। আর এই কারণেই মহানগর হয়ে উঠেছে সময়ের সাহসী কাজ। 

অভিনয়ে ওসি হারুণের চরিত্রে মোশাররফ করিম সব সময়ই দুর্দান্ত, এখানেও তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার চরিত্রের অভিনয় দেখে শরীরে রাগ ফুঁসে উঠেছে, এতটাই জীবন্ত ছিলেন তিনি। আশফাক নিপুণ বেশ ভেবেচিন্তেই এই চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন। এই সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা খায়রুল বাসার অভিনয় করেছেন আবির হাসানের চরিত্রে, গল্প যত এগিয়েছে তার অভিনয়ের ফুলের সুবাস আরো বেড়েছে, বেশ ভালো করেছেন। ছিঁচকে চোরের চরিত্রে নাসির উদ্দিন খানের মূল গল্পে না থেকেও যেন হয়ে উঠলেন এই গল্পের বিশাল অনুষঙ্গ, চরিত্রটি বড় পাওনা। আফনান চরিত্রে শ্যামল মাওলা যথাযথ। ভালো অভিনয় করেছেন জাকিয়া বারী মমও, তবে অমন দুর্দান্ত শুরুর পর শেষটায় আরেকটু বোধহয় প্রত্যাশা ছিল। সবশেষে বলতে হয় এস আই মলয় চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের কথা। চরিত্রটা তিনি এত ভালোভাবে লালন করেছেন, যেন মনে হয় সত্যিই এস আই। মোশাররফ করিমের সামনা সামনি তো বটে, পুরো সময় জুড়ে তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছি। আরো আছেন রুকাইয়া চমক, নিশাত প্রিয়ম, জীবন রায়, শাহেদ আলী, সৈয়দ নাজমুস সাকিব। লুৎফর রহমান জর্জ গুরুগম্ভীর চরিত্র এখন নিয়মিত অভিনেতা, নওশাবা খুবই স্বল্প সময়ে ছিলেন।

আবহ সংগীতের জন্য জাহিদ নীরব আলাদা করে বাহবা পাবেন, চিত্রগ্রাহক বরকত উল্লাহ পলাশের কাজ ও প্রশংসাযোগ্য, সম্পাদনার মতো কঠিন কাজে দারুণ ঝুঁকি নিয়েছেন এইচ এম সোহেল৷ তবে মনে হয়েছে থানাটা আরো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারতো, পুলিশি কার্যক্রম নিয়ে আরো বিস্তারিত ভাবা যেত। কিছু প্রশ্ন ঘোলাটে, তবে দ্বিতীয় সিজন যেহেতু আসবে সেটার জন্য তোলা রইলো। 

শেষে বলতে হয় আশফাক নিপুণের কথা, নির্মাতা হিসেবে তিনি আরেকবার প্রমাণ করলেন নিজেকে, যে তিনি কতটা দক্ষ নির্মাতা, তার চেয়েও এগিয়ে থাকবেন রচয়িতা ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে। এমন এমন গল্প বুনেন, সেটা হয়ে উঠে আমাদের জীবনের অংশ, হয়তো রুপক অর্থে দেখাচ্ছেন। ওসি হারুণের চরিত্রে এমন অর্থবহ সংলাপ দিয়েছেন, যার জন্য করতালি পেতেই পারেন। 

আর হ্যাঁ একটা কথা 'যা দেখছো তা না, তার পেছনেও রহস্য আছে', যার জন্য দেখতে হবে পুরো মহানগর সিরিজ। দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষায়।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা