হুমায়ূন আহমেদের নাটক দিয়ে তার আগমন, কিন্ত সেরাটা দিয়েছেন ছবিয়ালের সঙ্গে। 'স্পার্টাকাস ৭১' এবং 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি' টেলিসিনেমায় তার দুর্দান্ত অভিনয় কি চাইলেও ভোলা সম্ভব?

টিভি নাটকে হুমায়ূন আহমেদের ধারা থেকে ছবিয়ালের ধারা বেশ আলাদা। দুই ধারাতেই মূল অভিনয়শিল্পীদের বাইরে বিশেষ কিছু অভিনয়শিল্পী ছিলেন, যারা নাটকগুলোতে আরো আকর্ষনীয় করে তুলতেন। তিনি তাদেরই একজন, পাশাপাশি দুই ধারাতেই অভিনয় প্রতিভায় সাবলীল ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতেন। হুমায়ূন আহমেদের 'বুয়া বিলাস' থেকে মুস্তফা সরোয়ার ফারুকীর 'এমন দেশটি কোথাও পাবে নাকো তুমি'- দুটিতেই তিনি অসামান্য অভিনয় করেছেন। হাউজফুলের 'মা' চরিত্র পেরিয়ে আলোচিত ফ্যামিলি ক্রাইসিসের 'শেফালী খালা' নামে, তিনি টিভি নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা অন্যতম সেরা অভিনেত্রী 'মনিরা মিঠু'।

হুমায়ূন আহমেদের আবিষ্কার তিনি, প্রথম নাটক 'ওপেন টি বায়োস্কোপ'। অকাল প্রয়াত অভিনেতা চ্যালেঞ্জার এর আপন বোন তিনি, সেই সুবাদেই অভিনয় জগতে আসেন। প্রথমদিকে স্বল্প চরিত্রে থাকলেও অভিনয় প্রতিভায় ঠিকই আলো কেড়ে নিতেন। একটা সময় পর তাকে মুখ্য চরিত্রে রেখেই হুমায়ূন আহমেদ বানিয়েছিলেন 'বুয়া বিলাস'। 'বৃক্ষমানব' তার আরেকটি প্রশংসিত কাজ। এছাড়া যমুনার জল দেখতে কালো নাটকে নায়িকার মা থেকে বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলে কাজের বুয়ার চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন। 

অভিনয় জীবনের সেরা চরিত্র পেয়েছেন ফারুকীর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিরিজ 'স্প্যাকাটাস ৭১' ও 'এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি' নামক দুটি ফিকশনে। প্রথম পর্বে মুক্তিযুদ্ধ কালীন এক মধ্যবয়সী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যে একে একে স্বামী, সন্তান হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যায় এক রাজাকারের চক্রান্তে। দ্বিতীয় অংশ আরো করুণ, সব হারিয়ে যিনি আশ্রয় পেতেছেম সেই রাজাকারের বাড়িতে, যে তার সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। সেই রাজাকার তখন দেশের মন্ত্রী, গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে। 

এক সময় রাজাকারের বিচারের দাবিতে দেশ ফুঁসে উঠে,তাকে সাক্ষী দিতে হবে। সেকি সাক্ষী দেবে, নাকি রাজাকারের ভয়ে মিথ্যে বলবে। দুইটি অংশেই এত ভালো অভিনয় করেছেন তিনি, যা শুধু মুগ্ধতা ছড়ায়। শেষ দৃশ্যে তাঁর কান্নার অভিনয়ে অজান্তেই চোখ অশ্রুসজল হয়ে আসে। তখনকার সেরা অভিনেত্রীদের ভালো অভিনয় ছাপিয়ে তিনি সমালোচকদের রায়ে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে। 

ততদিনে হুমায়ূন আহমেদের নাটক কমতে থাকে, বাড়তে থাকে ছবিয়ালের নাটকের সংখ্যা। রেদোয়ান রনি-ফাহমি জুটির 'হাউজফুল' এ মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে নিজের জনপ্রিয়তা আরো দ্বিগুণ করেন, এরপর থেকে নিয়মিত মায়ের চরিত্রে হয়ে উঠেন দর্শকদের প্রিয় মুখ। মোস্তফা কামাল রাজের গ্র‍্যাজুয়েট, চাঁদের নিজের কোন আলো নেই, ইফতেখার আহমেদ ফাহমির 'ফিফটি ফিফটি' দিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছেই। টিভি নাটকের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়া দিলারা জামান, শর্মেলী আহমেদ, ডলি জহুরদের যোগ্য উত্তরসূরী হয়েছেন। সাগর জাহানের 'আরমান ভাই' সিরিজেও ছিলেন। 

বেশিরভাগ নাটকেই একটু রগচটা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতেন, তবে সুমন আনোয়ারের জীবনসঙ্গী, স্বপ্নকুহক, বান্নাহ র 'আমাদের গল্পটাও এমন হতে পারতো', কিবরিয়া ফারুকীর 'আব্দুল্লাহ' নাটকে কোমল মায়ের চরিত্রেও দারুণ ছিলেন। 'ফ্যামিলি ক্রাইসিস' ধারাবাহিকে তার চরিত্রটিই বেশি আলো কেড়েছে। প্রথম সিনেমা হুমায়ূন আহমেদের 'চন্দ্রকথা', 'আমার আছে জল' তেও ছিলেন, এরপর পোড়ামন, ভাইজান এলো রে, দহন, বিশ্বসুন্দরী করেছেন। সামনেই মুক্তি পাবে আদম। 

সময়ের প্রবাহে ছবিয়ালের একনিষ্ঠ নির্মাতারা অনিয়মিত হয়ে গিয়েছেন, তাদেরকে অনুকরণ করে নির্মিত হতে থাকে একের পর এক নাটক। কিন্তু সেই জৌলুস থাকে না, বরঞ্চ সমালোচিত হতে থাকে। অভিনয়শিল্পীরা পড়েন বিপাকে। হাউজফুলের মায়ের চরিত্রকে অনুকরণ করে একের পর নাটকে অভিনয় করেন তিনি, উচ্চকিত অভিনয়টা যেন একটা সময় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য। অথচ আগে তিনি সাবলীল অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করতেন, এখনো বিশ্বাস  ভালো নির্মাতা ও চরিত্র পেলে সেরাটা দিয়েই অভিনয় করবেন, যেমনটা করেছেন মা আই মিস ইউ নাটকে। তাই যারা ভালো নাটক বানিয়ে পরীক্ষীত, তারা উনাকে ভালো চরিত্র দিন। আশা করি, তিনি নিজেও সচেতন হবেন। 

শুভ জন্মদিন, মনিরা মিঠু!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা