তথাকথিত আকর্ষণীয় চেহারা নেই, পেটানো শরীর নেই, উচ্চতাতেও মার খেয়ে গেছেন, মাঝেমধ্যে হালকা একটা ভুঁড়ি উঁকিঝুঁকি দেয়, গায়ের চামড়ার রংও ধবধবে সাদা না- এরপরেও এই মানুষটা স্ক্রিনে থাকলে তার অসাধারণ অভিনয় থেকে চোখ ফেরানো যায় না...

প্রথম বিস্ময়ের কারণ বলি। এই মানুষটার তথাকথিত আকর্ষণীয় চেহারা নেই, পেটানো শরীর নেই, উচ্চতাতেও মার খেয়ে গেছেন, মাঝেমধ্যে হালকা একটা ভুঁড়ি উঁকিঝুঁকি দেয়, গায়ের চামড়ার রংও ধবধবে সাদা না- এরপরেও এই মানুষটা স্ক্রিনে থাকলে তার অসাধারণ অভিনয় থেকে চোখ ফেরানো যায় না। তথাকথিত হিরোর সংজ্ঞায় না থেকেও তিনি হিরো।

দ্বিতীয় বিস্ময়ের কারণ হচ্ছে- 'শুধু' নাটকে কাজ করে একটা মানুষের এত ভয়ংকর লেভেলের জনপ্রিয়তা। কলকাতা তো বাদই দিলাম, মালেশিয়ার মত দেশে তার ফ্যানক্লাব আছে যেখানে তার ভক্তের অভাব নাই। কয়েকদিন আগে মোশাররফ করিম নীরব আর ইমনের সাথে লাইভে এসেছিলেন। কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, সিংগাপুরের বাঙালিরা সেখানে একের পর এক কমেন্ট করেই যাচ্ছে। মোশাররফ করিম সিনেমা করেছেন হাতেগোনা কয়েকটি, যদিও সেখানে তাকে সেভাবে পাইনি যেভাবে চেয়েছি। সেক্ষেত্রে শুধু ছোটপর্দায় কাজ করে এই লেভেলের জনপ্রিয়তা ঈর্ষা জাগায় বটে। 

মোস্তফা সরওয়ার ফারুকির "থার্ড পার্সন সিংগুলার নাম্বার" সিনেমাতে মোশাররফকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে খুব জটিল একটা চরিত্রে দেখেছিলাম। খুবই দক্ষতার সাথে সামলেছিলেন তিনি চরিত্রটা। এছাড়া জালালের গল্প সিনেমাতে তার স্বল্প সময়ের অভিনয় আমার দারুণ লেগেছিল। পর্তুগালের একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। 

মোশাররফ করিমের প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস আছে। টেলিভিশন সিনেমার শুটিং এর সময় নোয়াখালীতে দুই বস্তা বই নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগের লাইভেও দেখলাম তার পেছনে শুধু বই আর বই। বই পড়ে তিনি কী পরিমাণ মনে রাখতে পারেন, সেটার প্রমাণও তার বেশ কিছু নাটকে পেয়েছি। হাউজফুল নাটকে ক থেকে ক্ষ পর্যন্ত প্রতিটা অক্ষর দিয়ে একের পর এক ছড়া বলা, দেড়ের ঘরের নামতা পড়া- বিস্ময়ের সীমা নাই! 

ভক্তদের সেলফির আবদার মেটাচ্ছেন মোশাররফ করিম

মাঝে বেশ অভিমান ছিল তার উপরে। না, শুধু সিরিয়াস নাটক করলেই অভিনয় আর কমেডি করলে সস্তা- এমন ধারণা নেই আমার মাঝে। তবে একটা নূন্যতম মান না থাকলে খুব হতাশা কাজ করে, বিশেষ করে তার মত ক্যাপেবল এক্টরের ক্ষেত্রে। এরপরেও তাকে দেখতাম। জমজ সিরিজটা আমার খুব একটা পছন্দের না, তবে অবাক হই একজন মানুষ কীভাবে তিনটা আলাদা বয়সের, আলাদা ধরনের ক্যারেক্টর একই নাটকে করেন, তাও দিনের পর দিন? কসকো সাবানের মত মনে হয় আমার মোশাররফ করিমকে মাঝে মাঝে। কসকো সাবানে সবাই হাত ধুলেও সেই সাবান যেমন অক্ষয় থাকে, মোশাররফ করিমও ঠিক তেমনি। এত এত এত কাজ করেন, এরপরেও তিনি তিনিই! 

হাউজফুল নাটকে যখন মুনিরা মিঠু জানতে পারেন মোশাররফ করিম বিদেশ চলে যাবেন, তিনি কাঁদতে শুরু করেন আর বলেন- তুই যাস না! বিদেশে গেলে আর কেউ ফিরে আসে না। তুইও আসবি না। জবাবে মোশাররফ করিম বলেন- "আমি ফিরে আসব। তিন বছর পরেই ফিরে আসব। ফিরে এসে এখানে সিনেমা বানাবো।" 

মোশাররফ করিম ফিরে আসেছেন তার প্রমাণ হচ্ছে গতবারের ঈদ। বোধ, যে শহরে টাকা ওড়ে, ব্যঞ্জনবর্ণ, গিরগিটি দিয়ে মোশাররফ করিম বুঝিয়ে দিয়েছেন- কসকো সাবানের এখনও অনেক কিছু দেখানোর বাকি আছে। আর মোশাররফ করিম যে ফিরে এসেছেন, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হইচইয়ের ওয়েব সিরিজ 'মহানগর'। ওসি হারুন হয়ে কি দাপুটে প্রত্যাবর্তনটাই না তিনি ঘটালেন! 

ফিরে আসার ওয়াদা তো পূরণ করলেন, সিনেমা না বানালেও- একটা সিনেমাতে একদম দাপিয়ে বেড়াবেন- এরকম একটা সিনেমা করার চাহিদা কি তিনি পূরণ করবেন? ফ্যান হিসেবে এবার সিনেমাতে তাকে দেখতে চাই। বয়স হচ্ছে, মাঝে একবার কাজের প্রেসারে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। এই কারণেই চাই, যতদিন বেঁচে আছেন, সিনেমাতে যেন নিজেকে এক্সপ্লোর করেন। অন্তত প্রতিবছর একটা করে হলেও!

দুর্দান্ত এই অভিনেতার জন্মদিন আজ, জন্মদিনের শুভেচ্ছা, প্রিয় অভিনেতা!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা