
সেন্সর বোর্ড সম্প্রতি নিষিদ্ধ করেছে 'সাহস' সিনেমাটিকে। এই বিষয়েই আলাপ শুরু হলো সিনেমাটির অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের সাথে। সেই আলাপ ছড়িয়ে গেল মহানগর থেকে আকাশ ভরা তারায়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিস্তার থেকে অভিনেতার গুণ আর দোষেও।
সিনেগল্প- গালিগালাজ থাকার অজুহাতে 'সাহস' সিনেমাটিকে সেন্সর বোর্ড নিষিদ্ধ করেছে। এই সিদ্ধান্তটি কি যুক্তিযুক্ত?
ইমরান- একদমই না। 'সাহস' এর মাধ্যমে এক নতুন জনরার সিনেমার সাথে দর্শকের পরিচয় হতে পারতো। এই গল্পটা আমাদের সবার সাহসী হয়ে ওঠার গল্প। সাহস- এ আমরা আন্তর্জাতিক বাজার ও গুণগত মান মাথায় রেখে আমাদের মৌলিক গল্প বলেছি। সেন্সরে জমা দেওয়ার কারণ ছবিটা দেশের সবাইকে দেখানো উচিত মনে করেছি। এটা অন্যায় এর প্রতিবাদ করার গল্প, স্বাধীনতার গল্প, মুক্তির জন্য যুদ্ধের গল্প। কিন্তু সেন্সর এই ছবিটা বুঝতে পারেনি। তারা এটাকে অশ্লীল বলেছে। কারণ গালিগালাজ আছে। সত্য কথাকে অশ্লীল সংলাপ বলেছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করাকে সহিংসতা বলেছে। তারা তাদের মূর্খতা দেখিয়েছে। তাদের সিনেমা সম্পর্কে যে নূন্যতম জ্ঞান নেই সেটা তো বারবার প্রমাণিত।
তবে এভাবেই আমরা কষ্ট করে সিনেমা বানাই আর তারা সেটাকে আটকে দেয়। ভালো কাজ তাদের বোধগম্য না। দেশ যে স্বাধীন না, তা আবার প্রমাণিত। তাদের ১৯৬৩ সালের আইনে আমাদের সিনেমা বানাতে হবে কেন। তাদের জন্য আমরা সিনেমা বানাই না। তারা দর্শককে বিচার করতে না দিয়েই নিজেদের ক্ষমতা দেখায়। সেন্সর বোর্ড আর এফডিসির হাতে সিনেমা জিম্মি হয়ে আছে। ইন্ডাস্ট্রি গ্লোবালি আগাবে না এভাবে। আমাদের সিনেমা অশ্লীল নয়। বাস্তবধর্মী সিনেমা।
সিনেগল্প- সেন্সর বোর্ড বলছে, সাহস ছবিতে প্রচুর অশ্লীল সংলাপ রয়েছে। এ কারণে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইমরান- তাহলে তো রাম গোপাল ভার্মা, অনুরাগ কাশ্যপ, এমনকি মার্টিন স্করসিজির সিনেমাও আমাদের সেন্সর বোর্ড এর কাছে প্রদর্শন অযোগ্য বিবেচিত হবে। সিনেমা নয়, বরং সেন্সর বোর্ডই বাতিল হোক- সেটাই আমার প্রত্যাশা। আমরা কোন খারাপ ছবি বানাইনি। আমাদের ছবিতে খারাপ কিছু নেই। বাস্তবতা ও সত্যই বলেছি এই ছবিতে। সেন্সর বোর্ড মিথ্যাচার করে আমাদের সাহস-কে দাবায়ে রাখার চেষ্টা করছে।

সিনেগল্প- এখন আপনাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে?
ইমরান- আমরা আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর তাদের মিথ্যার কারণে এবং শব্দ ব্যবহারের জটিলতার কারণে আমাদের অপমানিত হতে হয়েছে। কারণ আমাদের অধিকাংশ পাবলিক না বুঝে হুজুগে কথা বলতে অভ্যস্ত এবং অন্যকে অপমান করতে পারলে তারা আনন্দিত। চেষ্টা করছি। দেখি কি হয়।
সিনেগল্প- আশফাক নিপুণের 'মহানগর' ওয়েব সিরিজে আপনাকে দেখা যাবে। মোশাররফ করিমের মতো অভিনেতার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ইমরান- মহানগর আশফাক নিপুণের সাথে প্রথম কাজ। দুর্দান্ত এক্সপেরিয়েন্স। খুব ভালো। মোশাররফ ভাইয়ের মতো কিংবদন্তী অভিনেতার সাথে কাজ করা অনেক কিছু শিখেছি। অনেক অনেক ভালো এক্সপেরিয়েন্স।
সিনেগল্প- মহানগরে আপনাকে দেখা যাবে পুলিশের চরিত্রে। একটা ইউনিফর্মড রোলে অভিনয়ের অনুভূতিটা কেমন ছিল?
ইমরান- ইউনিফর্ম পরে কাজ করা ইউনিফর্মটা লিভ করা অন্যরকম অনুভূতি। বলে বোঝানো যাবে না। ২৫ তারিখ হইচই-তে দেখেন সেটা, দেখলেই আশা করি বুঝতে পারবেন।
সিনেগল্প- শর্টফিল্ম আকাশ ভরা তারার স্ক্রিপ্ট শোনার পরে আপনার প্রথম রিয়্যাকশনটা কী ছিল?
ইমরান- 'আকাশ ভরা তারা'র গল্পটা প্রথম শুনেই ভালো লেগেছিল। ক্যারেক্টরটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল এবং 'শাফায়েত মনসুর রানা' যখন ডিরেক্টর, তখন আর দ্বিমত রইলো না।
সিনেগল্প- শাফায়েত মনসুর রানার সাথে এটা আপনার প্রথম কাজ ছিল। তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? আপনাদের দুজনের চেহারায় মিলও আছে, তার সাথে কেমিস্ট্রিটা কেমন জমেছিল?
ইমরান- দেখতে একইরকম যেমন আমাদের কেমিস্ট্রিও আমার ভালোই মনে হয়েছে। থটস এর মিল রয়েছে। উনার চাওয়াটা ভালোভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। আমিও চেষ্টা করেছি তার চাওয়াটাকে বুঝে সেটা পোর্ট্রে করার জন্য।
সিনেগল্প- আমাদের দেশে বেশিরভাগ অভিনেতাই সিনেমা করলে আর ছোটপর্দায় আসতে চান না। কিন্তু আপনি যেমন আলফা'র মতো সিনেমা করেছেন, তেমনই ওয়েব সিরিজও করছেন, শর্টফিল্মেও আপনাকে দেখা যাচ্ছে। সিনেমা করলে আর কিছু করা যাবে না- এই ধারণায় কি আপনি বিশ্বাসী নন?
ইমরান- ভালো গল্প এবং চ্যালেঞ্জিং চরিত্র করে যেতে চাই আমৃত্যু। প্ল্যাটফর্ম ম্যাটার করে না। কাজ ম্যাটার করে। তবে একই কাজ বা একই চরিত্রের রিপিটেশন করতে চাই না।

সিনেগল্প- 'আমরা একটি সিনেমা বানাব' সিনেমাটির খবর কি? এটি কি আলোর মুখ দেখবে?
ইমরান- এই সিনেমার কোন খবর আমি জানি না। এই সিনেমার জন্য জীবনের অনেক বড় একটা সময় দিয়েছি। আমার কাছে এখন এটা একটা ফিল্ম ওয়ার্কশপ হিসেবেই বেঁচে আছে। তবে খুব ভালো সময় ছিলো এই কাজের থ্রু টাইমটা। অনেক কিছু শিখেছি।
সিনেগল্প- বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিকশিত হবার সম্ভাবনা কতটা?
ইমরান- ওটিটি তো ফিউচার। আমি তো আশা করি নেটফ্লিক্স বাংলাদেশে আমাদের চমৎকার ভালো ভালো কন্টেন্ট থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের কাজ নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সময় আসছে। দেশের ওটিটিগুলো মান না খোয়ালেই হয়।
সিনেগল্প- আপনার কি মনে হয়, ওটিটি কি কখনও সিনেমার বিকল্প একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়াতে পারে?
ইমরান- ওটিটি সিনেমার জন্য হুমকি হবে বলে মনে হয় না। ভালো অভিনেতাদের ভালোভাবে ব্যবহার করতে জানতে হবে। ভালোভাবে নিজেদের গল্পটা বলতে শিখতে হবে। স্ক্রিনপ্লে ভালো হতে হবে। স্বাধীনতা থাকতে হবে কাজের।
সিনেগল্প- শেষ প্রশ্ন। একজন ভালো অভিনেতার মধ্যে কোন তিনটি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে? আর কোন তিনটি ব্যাপার থাকা চলবে না?
ইমরান- প্রফেশনালিজম, ইজ, বিলিভ এই তিনটা অভিনেতার থাকতে হবে। ডিজঅনেস্টি, ইরেসপনসিবলিটি, ইমপ্যাশেন্স অভিনেতার থাকা যাবে না। সর্বোপরি ফিল ইট, বিলিভ ইট অ্যান্ড দেন ডু ইট। এটাই অভিনেতার মেথড বলে আমার মনে হয়।
(সিনেগল্পের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সৈয়দ নাজমুস সাকিব)