'অভিনয় কোন ভাগ্যের বিষয় না, এটা লটারিতে জেতা যায় না'
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

আমার মা দরজা খুলে আমাকে চিনতে পারেন নাই। কয়েক সেকেন্ডের জন্য অবাক হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন- আপনি কে? জন্মদাত্রী মা যখন আমাকে চিনতে পারেন নাই, তখন বুঝেছিলাম- আমি এক্টিংটা মন্দ করি না। আমার পড়াশোনা, পরিশ্রম বৃথা যায় নি।
"কোন যুবক বা যুবতী যদি অভিনয় শিখতে চায়, তাকে প্রথমেই যা মাথায় রাখতে হবে, তা হল- এটা কোন ভাগ্যের বিষয় না। এটা কোন তকদীরের বিষয় না। এটা কোন লটারি না যে 'দেখি তো আমি লটারি জিতি কিনা' বলে আপনি ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এটা ভুল চিন্তাভাবনা।
আরেকটা জিনিস দেখলে আমার খুবই আফসোস হয়। বেশ কিছু বাবা মায়েরা নিজেদের সন্তানকে আমার কাছে এনে বলেন- আমার সন্তান কিছু করে না তেমন, কোন কিছুতে মনোযোগ নাই। আপনি একে অভিনেতা বানায়া দেন।
আমার এত রাগ উঠে এসব শুনলে, মানে এত রাগ উঠে! রাগে শরীর কাঁপে আমার! আমি মুখের উপরে বলে দেই- আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনার সন্তানকে অভিনেতা বানানোর। এইটা আমার দায়িত্ব না। আর আপনারা ভাবেন কীভাবে যে এক্টিং এর জন্য কোন পড়াশোনা লাগে না?
যেকোনো তরুণকে আমি বলব- আগে পড়াশোনা ভাল করে শেষ করবে, এরপরে এক্টিং। একজন শিক্ষিত অভিনেতা আর আরেকজন অশিক্ষিত অভিনেতার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকে।
কেউ এক্টিং পারে, কেউ পারে না, আল্লাহ ওরে জন্ম থেকেই এক্টর বানায়া পাঠিয়েছে দুনিয়ায়- আমি এই ধরনের আলাপে একদম বিশ্বাস করি না। এক্টিং একটা স্কিল, এটা আপনাকে শিখতে হবে আর পার্ফেক্ট বানানোর চেষ্টা করতে হবে। কার্পেন্টার যেমন কাজ করে, কুমার যেভাবে মাটির পাত্র বানায়- এগুলোর জন্য যেমন টেকনিক্যাল নলেজ দরকার, এক্টিং এর জন্যও ঠিক সেরকম জ্ঞান দরকার।

আমাদের সমাজের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, কাউকে আপনি বলবেন যে আপনি এক্টর হতে চান- শুরুতেই হাসবে। এরপরে আপনাকে নিয়ে মজা নেবে। এরপরে আপনাকে নিরুৎসাহিত করবে। এটা করার কারণ, আমার কাছে মনে হয়- দুনিয়ায় সবাই কমবেশি এক্টর হতে চায় বা চেয়েছে জীবনের কোন না কোন সময়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবারের জন্য হলেও অমিতাভ বা শাহরুখের মত চুল আঁচড়াতে চেয়েছে। যখন নিজে কিছুই করতে পারেনি, তখন একই রাস্তায় আরেকজন হাঁটতে চাইলেই সে মজা নিয়েছে।
অভিনেতাদের দিয়ে যে কেউ মজা নিতে পারে। দুনিয়ার সবাই এক্টিং বুঝে, সব বিশেষজ্ঞ একেকজন! ফটোগ্রাফি নিয়ে আলাপ করবে না, স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলাপ করবে না, এডিটিং কেমন হয়েছে- একটা বর্ণ বলবে না। কিন্তু সে এক্টিং বুঝে বসে আছে। নিজের মনমতো না হইলেই এক্টিং হয় নাই। সাটল এক্টিং করলে সে বলে- এক্টিং হয় নাই। যেখানেই আসলেই চিৎকার করে কান্না দরকার, সেটা করলে সে বলে- ধুর! ওভারএক্টিং হয়েছে!
ডায়লগ ডেলিভারি, ভয়েস, বডি ল্যাংগুয়েজ, উচ্চারণ নিয়ে আলাপ করবে না। কিন্তু তারা এক্টিং এর পণ্ডিত। দুই মিনিটে সব বাতিল করে দিতে পারে।
একজন এক্টরের প্রিপারেশন কখনও শেষ হয় না। আমার বয়স এখন ৭০, এই বয়সে এসে আমি নতুন করে উর্দু শিখছি। মীর্জা গালিবের ক্যারেক্টর প্লে করার পরেও আমার এই বয়সে এসে মনে হচ্ছে, উর্দুটা আরও ভাল করে শেখা উচিত আমার।
NSD তে পড়াশোনা করার সময় একবার অনেকদিন পর বাড়িয়ে গিয়েছিলাম। মাথার সব চুল ফেলে দিয়েছিলাম আর দাড়ি লম্বা করেছিলাম। হাঁটাও চেঞ্জ করে ফেলেছিলাম কিছুটা। আমার মা দরজা খুলে আমাকে চিনতে পারেন নাই। কয়েক সেকেন্ডের জন্য অবাক হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন- আপনি কে?
জন্মদাত্রী মা যখন আমাকে চিনতে পারেন নাই, তখন বুঝেছিলাম- আমি এক্টিংটা মন্দ করি না। আমার পড়াশোনা, পরিশ্রম বৃথা যায় নি।
আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি পরিশ্রম কখনও বৃথা যায় না। জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে আপনি এর ফল পাবেনই"
-নাসিরউদ্দিন শাহ