যদি কোনো উৎসুক সিনেমাপ্রেমী একটু ভালো করে খেয়াল করেন, দেখবেন, 'ওটিটি'র এই বিস্তীর্ণ গণ্ডিতেও এমন কিছু সিনেমা অনুপস্থিত, যেসব সিনেমার থাকা দরকার ছিলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের একেবারে সম্মুখসারিতেই। সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে এই নির্মাণগুলো সহজলভ্য হওয়াও ছিলো প্রয়োজন। বৈধ সড়কে তাদের প্রদর্শনী হওয়াও ছিলো দরকার!

খানিকটা পেছনে ফিরে তাকাই। ভিসিডি'র যুগ। ভালো একটা সিনেমার ক্যাসেট জোগাড় করতে কায়ক্লেশের শ্রম, সিডির কোনো অংশে সিনেমা আটকানোর আক্ষেপ কিংবা এক মোড়কের সিডিতে অন্য সিনেমা থাকার হতাশা.... এসব আখ্যান এই নেটফ্লিক্স-অ্যামাজনের যুগে খানিকটা 'দূরবর্তী পৃথিবীর গল্প'র মতই শোনাবে। 'ওটিটি'র এ সময়টাই এমন, এখন সিনেমা দেখা কিংবা সিনেমা-সমুদ্রে ডুবে যাওয়া অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বহুগুণে সহজ-সরল-সাবলীল। অজস্র সব দুর্দান্ত সিনেমা হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে স্থির। নির্দিষ্ট। মুঠোফোনেই সিনেমাহল। পৃথিবীর কালজয়ী সব নির্মাণ। সিনেমা দেখার ঝক্কি? সে আবার কোন বস্তু! 

তবে 'ওটিটি'র এই রমরমা পৃথিবীতেও খানিকটা খামতি আছে। যদি কোনো উৎসুক সিনেমাপ্রেমী একটু ভালো করে খেয়াল করেন, দেখবেন, 'ওটিটি'র এই বিস্তীর্ণ গণ্ডিতেও এমন কিছু সিনেমা অনুপস্থিত, যেসব সিনেমার থাকা দরকার ছিলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সম্মুখসারিতে।  সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে এই নির্মাণগুলো সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন ছিলো। বৈধ সড়কে তাদের প্রদর্শনী হওয়াও ছিলো দরকার। সেরকমই কিছু দুর্দান্ত সিনেমা, যাদেরকে ওটিটি'তে খুব দ্রুত আনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, তাদেরকে মূল আকর্ষণে রেখেই শুরু করা যাক আজ। 

১. শহীদ 

হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট এবং আইনজীবী শহীদ আজমী'র জীবনী অবলম্বনে নির্মিত 'শহীদ' সিনেমায় নির্মাতা হানশাল মেহতা এবং অভিনেতা রাজকুমার রাও এর যে ডুয়ো, পাশাপাশি এ সিনেমার শুরু থেকে শেষতক যে অনবদ্য বিন্যাস, এ সিনেমা যে কারো জন্যেই মাস্টওয়াচ। বোধের জন্যে। উপলব্ধির জন্যে। 

শহীদ! 

২. হাসিল

'ছাত্র রাজনীতি'কে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে নির্মিত এ ক্রাইম-ড্রামায় বৈপরীত্যের যে রসায়ন ইরফান খান ও জিমি শেরগিলের, পাশাপাশি তিগমাংশু ধুলিয়ার অভিষেক সিনেমাতেই যে বৈপরীত্য... এই সিনেমা নিয়ে যতটা কথা হওয়া দরকার, কেন যেন তার সিকিভাগও কখনো হয়না৷ আশা করা যায়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এলে হয়তো এ সিনেমা নিয়ে কথাবার্তার সম্ভাবনা তৈরী হবে আবার।

হাসিল! 

৩. সুলেমানি কিডা

নির্মাতা অমিত মাসুরকরের 'নিউটন' কিংবা সাম্প্রতিক 'শেরনি' নিয়ে যত কথা হয়, তার সিকিভাগও হয়না 'সুলেমানি কিডা' নিয়ে। অথচ, ব্রো-মান্টিক কমেডি এই সিনেমা গুণে-মানে-ভাবনায় একই নির্মাতার আলোচিত অন্যান্য সিনেমাগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম না মোটেও। 

সুলেমানি কিডা! 

৪. সিটিলাইটস

শহর 'মুম্বাই' এর আলো-ঝলমলে অভ্যর্থনার আড়ালে যে কতটা খেদ, বিষাদ কিংবা আঁধার, সেটার গল্পই বলে 'সিটিলাইটস।' হানশাল মেহতা ও রাজকুমার রাওয়ের এই সিনেমায় যাপিত বিড়ম্বনার আড়ালে ক্রমশ উঠে আসে যেন অন্য এক শহরের আখ্যানও। বারবার দেখার মতই এক নির্মাণ 'সিটিলাইটস।' 

সিটিলাইটস!

৫. মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার

যখন আঁধার ঘনায়, তখন যাপিত মানব অনুভূতির কী হয়? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই হয়তো অপর্ণা সেন বানিয়েছিলেন 'মিস্টার অ্যাণ্ড মিসেস আইয়ার।' কঙ্কনা সেনশর্মা এবং রাহুল বোস অভিনীত এই অনবদ্য সিনেমায় যেভাবে নানাবিধ মনুষ্যত্বের বহুরূপী আলো-আঁধার ফুটে উঠেছে, তা বিস্মিত করার মতন। চমকে দেয়ার মতন। যদিও কেন এ সিনেমা 'ওটিটি'তে বহুদিন থেকেই ব্রাত্য, তা জানা নেই কারোরই। 

মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার!

৬. গুলাল

অনুরাগ কাশ্যপের এই সিনেমা অনেকটুকুই জটিল, গভীর। ছাত্র রাজনীতি, ক্ষমতালিপ্সা, বিপ্লব কিংবা বিক্ষোভ... 'গুলাল' এর পরতে পরতে এসবেরই রগরগে কিংবা দগদগে গল্প। পাশাপাশি, সিনেমার শুরু থেকে শেষতক যে টানটান আখ্যান, সে বিবেচনায় এ সিনেমাও অনায়াসে স্ট্রিমিং সাইটে স্থান পাওয়ার যোগ্য।

গুলাল! 

৭. ১৯৭১

যুদ্ধ-পরবর্তী ভয়াবহতা এবং যুদ্ধবন্দীদের মানবিক গল্পের অদ্ভুত সুন্দর এক আখ্যান '১৯৭১।' মনোজ বাজপেয়ী, রবি কিষাণ, দীপক দোবরিয়াল সহ বাকিদের দুর্দান্ত অভিনয় আর মানবিক এক সত্য ঘটনা অবলম্বনে অমৃত সাগরের এই নির্মাণ...  দুর্দান্ত! 

১৯৭১! 

৮. পেডলারস

ভাসান বালার তার অভিষেক সিনেমা 'পেডলারস'এই বুঝিয়েছিলেন, কেন তিনি গল্পকে খানিকটা অন্যরকম ভাবে উল্টেপাল্টে দেখেন, অন্য চোখে দেখেন। দুইজন বাউণ্ডুলে কিভাবে পাকেচক্রে জড়িয়ে পড়লো মুম্বাইয়ের মাদক ব্যবসার সাথে, এবং তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কিভাবে দেখানো হলো অভূতপূর্ব এক মুম্বাইকে, তা নিয়েই যেন অভিষেকে ছক্কা হাঁকালেন নির্মাতা ভাসান বালা।

পেডলারস! 

৯. গালি গুলেইয়ান

মনোজ বাজপেয়ী এবং সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার যদি একসাথে আসে, ধরে নিতেই হবে- সে নির্মাণ হতাশ করবেনা একবিন্দু। এই সিনেমাও তেমন। ভারতের অন্যতম তুখোড় সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের কথা বললে, অনায়াসেই এই সিনেমার কথা আসবে৷ এবং মনোজ বাজপেয়ীর যে অভিনয়... অনবদ্য!।

গালি গুলেইয়ান! 

১০. ফিফটিন পার্ক অ্যাভিনিউ

সিজোফ্রেনিয়ার এক রোগীকে কেন্দ্র করে নির্মিত এ গল্পে ক্রমশই যেভাবে উঠে আসে মানসিক স্বাস্থ্যের নানা সুলুকসন্ধান, এবং সেখানে যেভাবে মিশে থাকে নির্মেদ বর্ণনার চমৎকারিত্ব, অপর্ণা সেনের 'ফিফটিন পার্ক অ্যাভিনিউ' সেখানেই করে হৃদয়জয়। অসাধারণ এই সিনেমা যেকোনো সিনেমাপ্রেমীর জন্যেই খুব প্রিয় এক নির্মাণ।

ফিফটিন পার্ক অ্যাভেনিউ! 

'ওটিটি প্ল্যাটফর্ম' এমনিতেও অজস্র কালজয়ী সিনেমা নিয়ে নিয়মিতই কাজ করছে। আশা করা যায়, এই বলিউডি অনবদ্য নির্মাণগুলো নিয়েও কোনো না কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম খুব তাড়াতাড়ি উদ্যোগী হবে। ফলাফলে, এই সিনেমাগুলোর সন্ধানে সিনেমাপ্রেমীদেরও ঝক্কি কমবে। এবং সেটা হওয়াটাই হবে প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা