প্রতীক গান্ধী: পর্দায় ভালো একটি রোলের জন্যে বিশ বছরের সংগ্রাম যার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

টানা বিশ বছর হন্যে হয়ে লড়েছেন ভালো একটি চরিত্রের জন্যে। দেখেছেন স্ত্রী'র ব্রেন টিউমার কিংবা বাবার ক্যান্সার। মুম্বাইয়ের এক কামরার ঘরে পাঁচজন মিলে কাটিয়েছেন বহুদিন। প্রতীক গান্ধীর আজকের এ সাফল্যের পেছনে মেহনত কি কম হয়েছে মোটেও?
যেকোনো সিনেমা-সিরিজ প্রবল জনপ্রিয় হয়ে গেলে, সে জনপ্রিয়তার স্পর্শে রাতারাতি পালটে যায় সংশ্লিষ্ট নির্মাণের সাথে যুক্ত শিল্পীদের জীবনও। যার জ্বলজ্যান্ততম দৃষ্টান্ত- স্কুইড গেম। 'স্কুইড গেম' জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে এই ওয়েব সিরিজের চরিত্রগুলোও হয়ে গিয়েছে ভাইরাল। চরিত্রগুলো নিমেষেই পৌঁছে গিয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের কাছে। চোখের নিমেষেই তারা অবস্থান নিয়েছে মানুষের মাতামাতির কেন্দ্রবিন্দুতে। ঠিক এমনটি দেখেছিলাম প্রতীক গান্ধীর ক্ষেত্রেও। গত বছরে ভারত কাঁপানো ওয়েব সিরিজ 'স্ক্যাম ১৯৯২' এর প্রোটাগনিস্ট এই মানুষটি জনপ্রিয় হয়ে যান সিরিজ মুক্তির অল্প কিছুদিনে মধ্যেই৷ দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে হয়ে যান অজস্র মানুষের প্রিয় অভিনেতা। তখন বলা হচ্ছিলো, রাতারাতি সাফল্য পেয়ে গিয়েছেন প্রতীক গান্ধী। আসলেই কী তাই? তিনি কী রাতারাতিই পেয়েছিলেন খ্যাতি-যশ-সুনাম?
গুজরাটের ছেলে প্রতীক গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর প্রথমে একাই আসেন মুম্বাই৷ টানা চার বছর ধরে অ্যাক্টিং এর এক প্রজেক্টে কাজ করেন তিনি। এই প্রজেক্ট থেকে মাসে মাসে কিছু টাকাপয়সা দিতো তাকে। আবার এমনও মাস যেতো, যে মাসে কোনো টাকাপয়সাই তিনি পেতেন না হাতে। এই সময়গুলো ছিলো বড্ড কায়ক্লেশের। জীবিকার তাগিদে তখন টিভি টাওয়ার লাগানো কিংবা লোকাল প্রোগ্রামের উপস্থাপনার মতন কাজগুলো করতেন তিনি।

এরপর একসময়ে গোটা সংসার নিয়ে থিতু হলেন মুম্বাইয়ে। এক রুমের এক ঘর ভাড়া নিলেন। সেখানেই জীবনের আয়োজন সাজিয়ে বসলেন। অপরিসর এক কামরার ঘরে সবমিলিয়ে সদস্য চার জন! ঠেসাঠেসি করে জীবন কাটছিলো। এসবের মধ্যেই বিয়ে করেন। ঘরের সদস্য হয়ে দাঁড়ায় পাঁচ! হন্যে হয়ে চাকরী খুঁজছেন তিনি তখন। খুঁজতে খুঁজতে চাকরী পেয়েও গেলেন। চাকরীর আগের দুই ঘন্টা এবং পরের দুই ঘন্টা বজায় রাখলেন অভিনয়ের রিহার্সালের জন্যে। বাকি সময় জীবিকার কলম-পেষণ। এভাবে কাটলো ছয় বছর!
অফিসের চাকরীর পাশাপাশি গুজরাটি এক সিনেমায় অভিনয় করলেন। 'বে ইয়ার' নামের সে সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে আরো কিছু কিছু অভিনয়ের অফার আসতে লাগলো তার কাছে। প্রতীক গান্ধী তখন করলেন জীবনের সবচেয়ে সাহসের কাজ। নিশ্চিত বেতনের নিরাপদ চাকরী ছেড়ে দিলেন আচমকা। পূর্ন মনোযোগ দিলেন অভিনয়ে। এদিকে 'নুন আনতে পান্তা ফুরোয়' জীবনে বড় বড় দুর্বিপাক আসছে তখন। স্ত্রী'র ব্রেন টিউমার হয়েছে। বাবার হয়েছে ক্যান্সার। এসবের সাথে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। মাঝখান দিয়ে বহু বছরের আশ্রয় মুম্বাইয়ের বাড়িটিও ছেড়ে দিতে হলো অর্থাভাবে। প্রতীক গান্ধী পুরো পরিবার নিয়ে এসে দাঁড়ালেন খোলা আকাশের নীচে।
এরকম এক সময়েই তিনি হাতে পেলেন হানশাল মেহতার 'স্ক্যাম ১৯৯২' এর কাজের অফার। অফারটা লুফে নিলেন তিনি। জানপ্রাণ দিয়ে অভিনয় করলেন। বাকিটা ইতিহাস। ' স্ক্যাম ১৯৯২' মুক্তির পরে ভোজবাজির মতন পালটে গেলো সব। প্রতীক গান্ধীর জীবন ঘুরে গেলো পুরোপুরি। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হলো না।

অনেকেই এই সিরিজ এর পরে বলেছেন, খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়েছেন প্রতীক গান্ধী। এই কথার উত্তরে মুচকি হেসে এই অভিনেতা বলেছেন-
আমি ১৫-২০ বছর ধরে মুম্বাই থিয়েটারে কাজ করছি। একটা ভালো চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে হাজার মানুষের দরজায় ঘুরেছি। এবং জনপ্রিয়তার এই যে লাইমলাইট, এটা পেতে আমার সময় লেগেছে বিশ বছরেরও বেশি। বিশ বছর! একে তাই রাতারাতি সাফল্য বলা ঠিক হবে না। বরং বিশ বছর ধরে লক্ষ্যের পেছনে লেগে থাকা...এটা বলাই হবে প্রাসঙ্গিক।
চতুর্থ শ্রেনিতে পড়ার সময়েই প্রথমবার স্টেজে ওঠেন প্রতীক। খুব ছোট এক রোলে অভিনয় করেন। ছোট রোল হলে কী হবে, দর্শক বেশ পছন্দ করে তার অভিনয়। মুহুর্মুহু হাততালি আসতে থাকে গ্যালারি থেকে। ছোট্ট প্রতীক অভিনয়ে ঠিক তখনই মজে যান। মধ্যবিত্ত পরিবারে 'অভিনয়' এর শখ পাপেরই সমার্থক, তবু বাস্তবতা-স্বপ্ন-প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিকে মিলিয়ে মিশিয়ে পথ চলা শুরু হয় তার।
বাস্তবের প্রতীক গান্ধী ধীর মেজাজের মানুষ। বিপদে পড়লে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে একটা না একটা রাস্তা ঠিকই বের করেন তিনি। ঠিক এভাবেই জীবনের যাপিত সব প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করে আজকের এ অবস্থানে তার আসা। আমরা আশা করি, প্রতীক গান্ধী ঠিক এভাবেই জীবনের নানা বৈপরীত্যকে হটিয়ে এগোবেন সামনে। দুর্দান্ত অভিনয়ে আদায় করে নেবেন দর্শকের ভালোবাসা। কষ্টার্জিত এ পাদপ্রদীপের আলোতেই থাকবেন নিয়মিত। হারাবেন না।
শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।