নব্বইয়ের শেষ ভাগ। বাংলা চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে এক স্বপ্ন সুন্দরীর, যার মোহিনী হাসিতে আলোকিত হয় এই ভূবন, বহু তরুণ যার রুপে মুগ্ধ হয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ফেলেন, অভিনয়ে তিনি সুভাষিণী। মেঘের পরে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়ে গেলেও তিনি আজও অনন্যা। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সুন্দরী নায়িকা- পূর্ণিমা।

অভিনয় জগতে প্রবেশ শিশু শিল্পী হিসেবে, এরপর সালাউদ্দিন লাভলুর নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলিং করে নজরে পড়েন পরিচালকদের। নায়িকা হিসেবে আবির্ভাব ঘটার কথা ছিল শহিদুল ইসলাম খোকনের ভন্ড সিনেমা দিয়ে, সেই সিনেমা ফিরিয়ে দিয়ে জাকির হোসেন রাজুর 'এই জীবন তোমার আমার' দিয়ে নায়িকা হিসেবে প্রথম দর্শকদের সামনে আসেন। প্রথম ছবিতেই কাজ করেন কিংবদন্তী ফারুক-ববিতাদের সঙ্গে, নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সেই সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল নায়ক রিয়াজকে।

দারুণ আয়োজন, প্রচারনা সত্ত্বেও ছবিটা সেই নিজের ফিরিয়ে দেয়া ছবির সাথে যুদ্ধ করে হেরে যায়। প্রথম ছবি বাণিজ্যিকভাবে সফল হলো না, কিন্তু নায়িকা হিসেবে ঠিকই আলো ছড়িয়েছিলেন।

সাদায় শুভ্র পূর্ণিমা

এরপর একে একে করতে থাকেন মধু পূর্ণিমা, সন্তান যখন শত্রু, প্রেমের নাম বেদনা, যোদ্ধা, সুলতান, তুমি যে আমার, মেঘলা আকাশ, নায়ক- এর মতো আলোচিত সিনেমা। নি:শ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি ও স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধতে মহাতারকাদের সাথে অভিনয় করেও নিজেকে ঠিকই প্রতিষ্ঠা করাতে পেরেছিলেন। অনেক ছবি করা হলো ঠিকই, কিন্তু নায়িকা পূর্ণিমা যেন পরিপূর্ণভাবে আলো ছড়াতে পারছিলেন না। 

অবশেষে এলো সে মহেন্দ্রক্ষণ। মতিউর রহমান পানুর যৌথ প্রযোজনার ছবি 'মনের মাঝে তুমি' দিয়ে যেন সেই আলোটা ছড়িয়ে পড়লো।দারুণ ব্যবসা করলো এই রোমান্টিক ছবিটি। পূর্ণিমার সেই আলো পরিপূর্ণতা পেলো এস এ হক অলিকের 'হৃদয়ের কথা' দিয়ে। এই ছবিটি দুটি শ্রুতিমধুর গানের কল্যানে বাংলা সিনেমার গান আবার প্রবেশ করলো মধ্যবিত্তদের অন্দরমহলে। দর্শকদের 'আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা'য় নায়ক রিয়াজের সঙ্গে বাঁধা জুটিটা পরিণত হলো বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় রোমান্টিক জুটি হিসেবে। গত দুই যুগে জনপ্রিয় সিনেমার নাম নিলে, এই ছবিগুলোর নাম চলে আসে নিঃসন্দেহে।

এছাড়া টাকা, বাধা, সাথী তুমি কার, মনের সাথে যুদ্ধ, কে আমি, পিতা মাতার আমানত, মাটির ঠিকানা দিয়ে শুধু বাণিজ্যিক ছবির জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে শুধু নয়, বাংলা চলচ্চিত্রে রবি ঠাকুরের প্রথম নায়িকাও হন তিনি। চাষী নজরুল ইসলামের 'শাস্তি'তে দেখা মিলল এই এক অন্য পূর্ণিমার। অভিনয়ের জাদুতে দর্শকদের বিমোহিত করে দর্শকদের আরো উপহার দিলেন মেঘের পরে মেঘ, সুভা, রাক্ষুসীর মতো প্রশংসিত চলচ্চিত্র।

'হৃদয়ের কথা' চলচ্চিত্রে রিয়াজের সাথে জুটি গড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন

এত চমৎকার সব সিনেমা করার পরও কিন্তু জাতীয় পুরস্কার অধরাই থেকে গিয়েছিল তার, অবশেষে কাজী হায়াতের 'ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না'- তে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন করে নেন আকাঙ্ক্ষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মডেলিং ও টিভি নাটকেও নিজের প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন 'ইত্যাদি' তেও নিজেকে মেলে ধরেছেন বহুবার, উপস্থাপনায়ও নিজেকে করেছেন আলোচিত। নিজের সেন্স অব হিউমারের জন্য বেশ প্রশংসিত, ইদানিং অন্য তারকাদের মিমিক্রি করার জন্য হয়েছেন আলোচিত, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানে দেখা মিলেছে তার এই দুর্দান্ত প্রতিভার। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ছায়াছবির মতো অধীর অপেক্ষমান ছবি।

চিত্রনায়ক রিয়াজ এই অপ্সরীকে গানে গানে ভালোবাসার আহ্বান জানান, মান্নার কাছে তিনি নাটোরের বনলতা সেন, জাহিদ হাসান তাকে লাল-নীল-বেগুনী ভালোবাসার রঙে ভরিয়ে রাখেন। ফেরদৌসের কাছে তিনি মিষ্টি মেয়ে, শাকিব খান তাঁর জন্য ভালোবাসার লাল গোলাপ উপহার নিয়ে আসেন। কিংবদন্তি ইলিয়াস কাঞ্চন আফসোস করেন, কেন তিনি পূর্ণিমার নায়ক হলেন না!

সেই সময়ের মহাতারকার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে অর্জন করে নিয়েছিলেন তিনটি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার। চলচ্চিত্র তারকা হয়েও মনোনয়ন পেয়েছিলেন নাটক ও মডেলিং জগতে, যেটা নায়িকাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই পেয়েছেন। বাচসাস পুরস্কারও অর্জন করেছেন তিনি।

মিমিক্রিতেও তিনি অনন্য

ব্যক্তিজীবনে ২০০৭ সালে ঘর বেঁধেছেন চট্টগ্রামের ছেলে ফাহাদের সাথে, সংসারে রয়েছে একটি কন্যা সন্তান। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন, তবে তার মতো প্রতিভাবান নায়িকার আরো অনেক কিছু দেয়ার আছে চলচ্চিত্রজগতকে। তিনি ফিরে আসবেন নিজের প্রিয় ময়দানে, ব্যক্তিজীবন ও চলচ্চিত্রজীবন- দুই মাধ্যমেই নিজেকে বর্ণিল করবেন, এই প্রত্যাশাই রাখি।

১৯৮১ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করা এই প্রিয় অভিনেত্রী আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৩৯টি বছর, শুভকামনা রইল। শুভ জন্মদিন.....পূর্ণিমা।

ফিচার্ড ছবি কৃতজ্ঞতা- ইন্সটাগ্রাম

আরও পড়ুন-


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা