পূর্ণিমা: ছোট কিংবা বড়পর্দা, সব মাধ্যমেই যিনি সমান উজ্জ্বল
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

অসাধারন সৌন্দর্য্য, সহজাত অভিনয় দক্ষতা ও গ্ল্যামারস লুক, ব্যতিক্রমী বাচনভঙ্গি দিয়ে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম, অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তাকে নন্দিত অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে ইন্ডাস্ট্রিতে...
কারো কারো নামের অর্থ বা নামের সাথে যোগ হওয়া বিশেষন কখনো কখনো এতোটাই সত্য এবং সুন্দর হয়ে আমাদের সামনে আসে যে অবাক না হয়ে উপায় থাকেনা। তেমনিই একটি নাম পূর্নিমা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির এই আলোচিত এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী তার নামের মতো করেই পূর্নিমার আলো ছড়াচ্ছেন প্রায় দুই দশক ধরেই৷ নিজের অসাধারন সৌন্দর্য্য, সহজাত অভিনয় দক্ষতা ও গ্ল্যামারস লুক, ব্যতিক্রমী বাচনভঙ্গি দিয়ে সাধারন দর্শক থেকে শুরু করে সবার কাছেই আলাদা একটা স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম, অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তাকে নন্দিত অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। জীবনের ৪০ টি বসন্ত পার করলেন ঢালিউডের এই এভারগ্রীন অ্যাক্ট্রেস। আজ তার জন্মদিন।
পুরো নাম দিলারা হানিফ রীতা হলেও সবার কাছে তিনি পূর্ণিমা নামেই পরিচিত ও জনপ্রিয়। ১৯৮১ সালের এই দিনটিতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জন্মগ্রহণ করা পূর্ণিমার শৈশবকাল সেখানে কাটলেও কৈশোরেই পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে নাম লেখান চলচ্চিত্রে। ‘শত্রু ঘায়েল’ নামের একটি সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি।
পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পরিচালক জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রধান নায়িকা হিসেবে ঢালিউডে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি সেই সাফল্যগাথা অবিরাম চলছে এখনো। সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে বয়স বাড়লেও তার রূপ, লাবন্য এখনো যেকারো হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারে। পুরোদস্তুর নায়িকা হিসেবে ব্যস্ত থাকাকালীন সময়ে তরুণ বয়সে যেভাবে রূপে-গুনে দর্শকদের মাতিয়ে রাখতেন এই ২০২১ সালে এসেও তার সৌন্দর্য্য যেনো আরো বেশি বিকশিত হচ্ছে দিনকে দিন। সময় যতই যাচ্ছে পূর্নিমা যেনো ততো বেশি আলো ছড়াচ্ছেন।

ছোটবেলায় নাচের নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন পূর্নিমা। তারপর খুব কম বয়সেই চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। তবে বড় পর্দার নায়িকা হিসেবে ব্যস্ত সময় পার করলেও ছোট পর্দায়ও তাকে দেখা গেছে অনেকগুলো জনপ্রিয় নাটক এবং টেলিফিল্মে। এছাড়া বেশকিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন পূর্নিমা। বিনোদনের সব মাধ্যমেই নিজের দক্ষতা দিয়ে আলাদা একটা ছাপ রেখেছেন তিনি। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ তে শিল্পী আকবরের জনপ্রিয় গান ‘হাত পাখার বাতাসে’র মিউজিক ভিডিওর কল্যানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন পূর্ণিমা।
এটিএন বাংলায় প্রচারিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘লাল নীল বেগুনী’তে তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে এখনো ভালোবাসি, নীলিমার প্রান্তে, শঙ্খচিল, ল্যাবরেটরি, দুর্ঘট, জলে ভাসা পদ্ম, অমানিশা, হলুদ রঙের বায়না, ঘরের খবর পরের খবর, প্রোর্টেট, ১০১ লাভ ইমার্জেন্সি, দুঃস্বপ্নের রাতদিন, ম্যানিকুইন সহ বেশকিছু দর্শকনন্দিত নাটকে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছে আমাদেরকে।
দুই দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে অসংখ্য ব্যবসা সফল সিনেমাতে অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- 'আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা', 'নিশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি', 'হৃদয়ের কথা', 'সুভা', 'শশুর জামাই' 'টক ঝাল মিষ্টি' 'যোদ্ধা', স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ', 'সুলতান' 'মেঘের পরে মেঘ', 'হিংসার পতন', 'মা আমার স্বর্গ', 'সন্তান যখন শত্রু', 'প্রেমের নাম বেদনা', 'ছায়াছবি', 'বিপদজনক', 'বলো না ভালোবাসি', 'লাল দরিয়া', 'টাকা', 'বাধা', 'জমিদার' সহ আরো বেশ কিছু সিনেমা।
কাজী হায়াতের 'ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না' (২০১০) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও পূর্ণিমা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন দুইবার। মনের মাঝে তুমি (২০০৩), হৃদয়ের কথা (২০০৬) সিনেমা দিয়ে। বাণিজ্যিক, সাহিত্যনির্ভর দুই ধারায় সিনেমাতেই তিনি দেখিয়েছেন অসাধারণ অভিনয় প্রতিভা। রিয়াজ, মান্না, ফেরদৌস, আমিন খান, শাকিল খান থেকে শুরু করে শাকিব খানের সঙ্গেও জুটি বেঁধে কাজ করে সফল হয়েছেন। তবে রিয়াজ-পূর্ণিমা ঢালিউডের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় জুটি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সিনেমা, নাটকের পাশাপাশি আমাদের বিজ্ঞাপন জগতেও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি। মেরিল বেবি লোশন, সানক্রেস্ট কোলা, গ্রামীণফোন, রাঙাপরী মেহেদি, কোহিনূর ডিটারজেন্ট, সিটিসেল, বার্জার, ঝিলিক সহ আরো কিছু বিজ্ঞাপনেও তাকে দেখা গেছে৷ সেখানেও পেয়েছেন অসম্ভব জনপ্রিয়তা।
ব্যক্তিজীবনে ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পূর্ণিমা। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁর কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান আরশিয়া উমাইজা। তুলনামূলক ভাবে কাজ কমিয়ে দিয়ে স্বামী সংসার নিয়ে বেশ আনন্দেই দিন কাটাচ্ছেন পূর্ণিমা।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনো সুপারহিট আবার কখনো ফ্লপ সিনেমাও উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে তার অভিনয়, নিজেকে উপস্থাপন, গ্ল্যামারাস লুকের কারণে সবসবই তিনি ছিলেন পরিচালক ও দর্শকের চাহিদার অঅন্যতম নাম। এর কিছুটা আচ এখনো পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক বা ইন্সট্রাগ্রামে তার নিজের অ্যাকাউন্টে ছবি বা ভিডিও আপলোড করলেই মূহুর্তের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
মাঝের বেশ কিছু সময় চলচ্চিত্রে না থাকলেও ছোট পর্দায় তাকে পাওয়া গেছে নিয়মিত। কখনো উপস্থাপনায়, কখনো নাটকে। মেরিল প্রথম আলো তারকা জরিপ পুরস্কারে তার উপস্থাপনা নতুন করে নজর কেড়েছে সকলের। সাথে পুরানো এবং সমসাময়িক তারকাদের নিয়ে তার করা মিমিক্রিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বর্তমানে সিনেমায় খুব একটা নিয়মিত নন তিনি। মুক্তির অপেক্ষায় ‘জ্যাম‘ ও ‘গাঙচিল’ নামের দুইটি সিনেমা রয়েছে। দুটি সিনেমাই পরিচালনা করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। বহুল আলোচিত অমিতাভ রেজার ওয়েব ফিল্ম ‘মুন্সিগিরি’ তেও তাকে দেখা যাবে শিগগিরই। তবে মানসম্মত যেকোন কাজের প্রতিই তার বেশ আগ্রহ। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বারবার বলেছেন যে, মনের মত গল্প না পেলে প্রস্তাবে সাড়া দিবেন না তিনি। প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা থেকে পূর্নিমা জানান 'শুধু আমি কেন, দর্শকরাও এখন ভালো গল্প চান। ভালো গল্প হলে দর্শকরা অবশ্যই প্রেক্ষগৃহ ও টিভির সামনে বসবেন। যেসব সিনেমার গল্প স্ট্রং সেসব সিনেমা দেখতে এখনও দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেন।
আজ শনিবার জীবনে ৪১তম বছরে পা দিলেন পূর্ণিমা। মধ্যরাত থেকেই জনপ্রিয় নায়িকার জন্মদিন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা বার্তা জানাচ্ছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। জন্মদিনের মতো করেই সবার ভালোবাসা, আন্তরিকতা আর দোয়ার মাঝে সুখে শান্তিতে কাটুক তার জীবনের প্রতিটি দিন। তবে অভিনয়ে সময় বেশি দিয়ে তিনি উপহার দিয়ে যাবেন আরো অনেক সুন্দর সুন্দর কাজ যা পূর্নিমার চাঁদের মতোই আলো ছড়িয়ে যাবে অনন্তকাল এই কামনা রইলো।