রাত জাগা ফুল' কতটা নিজে জাগতে পারবে এবং জাগাতে পারবে দর্শককে, সেটা নির্ভর করবে, গল্প কতটুকু খোলতাই হবে, তার উপরে। মীর সাব্বির কতটুকু কী গল্প সাজালেন, কতটুকু কী বৈচিত্র‍্য আনলেন নির্মাণে, সেটাই দিনশেষে গড়ে দেবে তফাত৷ ট্রেলারে প্রত্যাশা বেড়েছে। এখন অধীর আগ্রহে তাই মূল নির্মাণের অপেক্ষা...

মীর সাব্বির আমার বেশ পছন্দের একজন মানুষ। বরিশালের মানুষ হিসেবে স্থানগত এক সম্পর্ক তো আছেই, পাশাপাশি তাকে যেসব নাটকে দেখেছি, সেসবের কোনোটাতেই তার অভিনয়ে জবরজঙ কৃত্রিমতা পাইনি। একজন অভিনেতার এটা খুব বড়সড় গুণ, স্বাভাবিক-সাবলীল অভিনয়ের গুণ। যদিও একই চরিত্রে তিনি কেন বারবার অভিনয় করছেন, তা নিয়ে খানিকটা আক্ষেপও আছে। যদিও তা ভিন্ন প্রসঙ্গ। মূল প্রসঙ্গে ফিরি। প্রিয় মীর সাব্বির যখন সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন থেকেই বেশ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সিনেমাটির জন্যে।  চিলির বিখ্যাত কবি 'পাবলো নেরুদা' বলতেন- প্রথম সবকিছুই বিশেষ। সে হিসেবে মীর সাব্বিরের অভিষেক নির্মাণ 'রাত জাগা ফুল' কেমন হবে, তা নিয়েও তৈরী হয়েছিলো বিস্তর কৌতূহল। 

'রাত জাগা ফুল' নিয়ে মীর সাব্বিরের একটা সাক্ষাৎকার দেখছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন- আনকোরা গ্রামীণ প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধই হবে তার নির্মাণের প্রধানতম উপজীব্য। গ্রামকে চালকের আসনে রেখে সেখানে প্রণয়, বিচ্ছেদ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস উঠে আসবে শাখাপ্রশাখায়। লতায়-পাতায়। এই সিনেমা বানানোর আদর্শ হিসেবে তিনি নিয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিমের তুমুল জনপ্রিয় 'মনপুরা' সিনেমাকে। 'মনপুরা' যেভাবে অদ্ভুত সুন্দর এক গল্প শুনিয়েছিলো গ্রামীণ সারল্যের মোড়কে, নিজের সিনেমা নিয়েও সেরকমই ইচ্ছে মীর সাব্বিরের।

'রাত জাগা ফুল' এ খ্যাপাটে মীর সাব্বির! 

'রাত জাগা ফুল' এর সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ট্রেলারেও বজায় রইলো প্রাথমিক সেই কথার পুরোটাই। কোনো এক গ্রাম, সে গ্রামে বসবাসকারী বেশ কিছু চরিত্র নিয়ে গল্প। সেখানে খ্যাপাটে এক যুবক আছে, প্রভাবশালী নেতা আছেন, আদর্শবান শিক্ষক আছেন, আর কিছু যুবক-যুবতী আছেন, যাদের প্রণয়ের উষ্মতা আর বিচ্ছেদের শীতলতাও ক্রমশ অন্তরীণ রইলো এ নির্মাণে। বিশেষ এ গ্রামে রহস্যজনকভাবে একজন খুন হলেন। যে খুনের সাথে হয়তো যুক্ত আছে কিছু চরিত্র, ক্ষমতার নানা চলক। খানিকটা রহস্যের চাদর। বাকিটা সাসপেন্স। এসব নিয়েই গল্প। এসবের সাথে যুক্ত হলো দারুণ কিছু গান৷ ছিমছাম সিনেম্যাটোগ্রাফী। 

দেশীয় সিনেমার ট্রেলারের যে প্রধানতম সমস্যা, অর্থাৎ, ট্রেলারেই গল্পের পুরোটা বলে দেয়া, সেটা এই সিনেমার ক্ষেত্রে হয়নি দেখে ভালো লেগেছে। 'রাত জাগা ফুল' এর প্রমোশনের শুরু থেকেই যে একটা 'ঢাক ঢাক গুড়গুড়' বিষয় ছিলো, এই স্ট্রাটেজি বজায় রেখেছে তারা ট্রেলারেও, যেটা বেশ ইতিবাচক। পাশাপাশি এডিটিং এর মাত্রাজ্ঞান এবং সিনেম্যাটোগ্রাফীর চমৎকারিত্বেও ছিলো মুন্সিয়ানা। যে গানগুলোর টুকরো অংশ শুনলাম ট্রেলারে, প্রতিটিই শ্রুতিমধুর। বেশ যত্ন নিয়েই বানানো হয়েছে বলে মনে হলো। যদিও ট্রেলার দেখেই কারো অভিনয় বিচার করা যায়না মোটেও, তবে যারা যারা আছেন এই নির্মাণে- মীর সাব্বির, ফজলুর রহমান বাবু, আবুল হায়াত, জয়রাজ...কেউই ফেলে দেয়ার মত অভিনেতা না৷ সেখানেই তাই বেশ বড়সড় এক প্রত্যাশা তৈরী হয়েছে।

দারুণ সিনেম্যাটোগ্রাফীর আভাস ছিলো ট্রেলারে! 

এমন এক সময় এখন, ওটিটির দাপটে মানুষ ক্রমশই টিপিক্যাল গল্পের নির্মাণকে একবাক্যে বাতিল করে দিচ্ছে। এখন তাই টিকতে হলে, লম্বা রেসের ঘোড়া হতেই হবে। টিরিয়ন ল্যানিস্টার যেমন 'গেম অব থ্রোন্স' এর শেষ পর্বে বলেছিলেন- প্রধানত এবং শুধুমাত্র গল্পই আমাদের একত্রিত করে। কথা সেটাই। 'রাত জাগা ফুল' কতটা নিজে জাগতে পারবে এবং জাগাতে পারবে দর্শককে, সেটা নির্ভর করবে, গল্প কতটুকু খোলতাই হবে, তার উপরে। মীর সাব্বির কতটুকু কী গল্প সাজালেন, কতটুকু কী বৈচিত্র‍্য আনলেন নির্মাণে, সেটাই দিনশেষে গড়ে দেবে তফাত৷ ট্রেলারে প্রত্যাশা বেড়েছে। এখন অধীর আগ্রহে মূল নির্মাণের অপেক্ষা। সময়ই বলবে বাকিটা৷ 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা