"একজন অভিনেতা কখনোই নিজের কাজে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পান না। অভিনয়ের ব্যাপারে আমি ভীষণ লোভী বলা যায়। একটা কাজ শেষে সবসময়ই আমার মনে হয় আরো ভালো করা যেতো! আরো আরো পারফেক্ট হওয়া চাই..."

বিশাল ফ্যানবেজ নেই তার, নাটকে নেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। তার মধ্যে আছে মেধা, আছে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা। অথচ এই অভিনেতাকে নিয়ে যতটা এক্সপেরিমেন্ট হবার কথা ছিল, তার সিকিভাগও হয় না বলতে গেলে। তবুও দক্ষতা বা মেধা চেপে রাখা যায়নি, যায়না। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের দেশের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় এবং দক্ষ অভিনেতা রওনক হাসান। 

এটা ভিন্ন বিষয় যে, মেধাবী এই অভিনেতাকে নিয়ে যতটা কাজ বা এক্সপেরিমেন্ট হওয়া উচিত ছিলো বা হওয়া উচিত- সেটা হচ্ছেনা ভিউয়ার বা ফ্যান ক্লাব ইস্যুর কারণে। তবে নিজের মেধা এবং শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতা দিয়েই অল্প কাজের মধ্য দিয়ে বরাবরই দর্শকদের কাছাকাছি থাকেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ের ‘যে শহরে ভালোবাসা নেই’ ‘লেখকের মৃত্যু’ ‘আড়াই মন স্বপ্ন’ এর মতো নান্দনিক কাজ নিয়ে আবারও আলোচনায় রওনক হাসান। এছাড়া গত ঈদে রওনক হাসানের পরিচালনায় ‘মা’ নাটকটিও নান্দনিক একটি কাজ হিসেবেও ব্যাপকভাবে প্রশংসা পায়। তবে গতবছরের অঅন্যতম নান্দনিক এবং প্রশংসনীয় ‘হ্যামলেটের ফিরে আসা’ নাটকের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সুযোগ পেলে এখনো জ্বলে উঠার সামর্থ্য রাখেন তিনি। এত শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতা সচরাচর দেখার সৌভাগ্য হয়না আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে। 

স্বীকৃতি হিসেবে চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড- ২০২০ এ সেরা অভিনেতা  ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তিনি। এবার তিনি হাজির হচ্ছেন নন্দিত নির্মাতা তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমা নিয়ে। খুব ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় কাটালেও আগামী ১৯শে মার্চ মুক্তি প্রতীক্ষিত এই সিনেমা নিয়ে সিনেগল্প টিম কথা বলেছিল রওনক হাসানের সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার অংশ বিশেষ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

প্রশ্ন- ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমায় আপনার চরিত্রটির নাম আসিফ এবং একজন আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করছেন আপনি। অভিনেতা রওনক হাসান এই সিনেমা এবং চরিত্রটি নিয়ে কি পুরোপুরি সন্তুষ্ট?

রওনক হাসান- আপনারা জানেন, যে এই সিনেমায় আমি একজন আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। যার নাম আসিফ। গল্পের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পর্দায় এই চরিত্রের আগমন ঘটে। তারপর অনেক কিছুই বদলে যায়, বাকিটা আমি আর বলতে চাই না এখনই। সিনেমা মুক্তির পর দর্শক সিনেমাটি দেখেই বাকিটা জানুক এটাই চাওয়া। 

আর অভিনেতা কখনোই নিজের কাজে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পায় না। অভিনয়ের বিষয়ে আমি ভীষণ লোভী বলা যায়। একটা কাজ শেষে সবসময়ই আমার মনে হয় আরো ভালো করা যেতো! আরো আরো পারফেক্ট চাই। সুতরাং তৃপ্ত কিনা সেটা বলা মুশকিল। তবে পরিচালক খুশি, সম্পাদক সহ সহশিল্পী ও সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলেই ভালো বলেছেন তাই কিছুটা পরিতৃপ্ত তো বটেই, তবে দর্শকদের কাছে ভালো লাগলেই আমি খুশি, কারন তাদের মন্তব্য বা মতামত আমাদের কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

স্ফুলিঙ্গ সিনেমার একটি দৃশ্যে রওনক হাসান

প্রশ্ন- নির্মাতা তৌকির আহমেদের সাথে আগেও কাজ করেছেন। তার সাথে আপনার বোঝাপড়া এবং একজন পরিচালক হিসেবে তার কি কি বিষয় আপনার ভালো লেগেছে?? 

রওনক হাসান- সত্যি কথা বলতে আমি তৌকির ভাই এর গুণমুগ্ধ। বলতে দ্বিধা নাই আমি হা করে অপেক্ষায় থাকি উনার সাথে কাজ করবার জন্য এবং তার সঙ্গ পাবার জন্য। তাঁর মতো স্মার্ট,  সুশিক্ষিত, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং একই সাথে একজন আমুদে রসিক মানুষ আমি আর দেখিনি। তাঁর সাথে আড্ডা দিলেও অনেক কিছু শেখা যায়। কাজের ক্ষেত্রে তিনি ভীষণ গোছানো এবং তিনি জানেন তিনি আসলে কি চান। নিজের সাধ্য এবং সামর্থ্যর বাইরে যিনি আকাশকুসুম সম্ভাবনার পেছনে তিনি ছোটেননা। তিনি তার লক্ষ্য জানেন এবং সেই অনুযায়ীই কাজ করেন। তাই যেকোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীই খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তার সাথে কাজ করে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। 

প্রশ্ন- ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমার সহশিল্পী পরীমনি, মম, শ্যামল মাওলা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

রওনক হাসান- যদিও পরীমনির সাথে আমার প্রথম কাজ এটা তবুও এটুকু বলতে পারি তিনি অসাধারণ সুন্দরী এবং এই সময়ের অন্যতম সম্ভাবনাময়ী একজন অভিনেত্রী। তাকে দেখলেই আমার মনে হয় মেয়েটি এতো সুন্দর কেন! সিনেমায় পরীমনি দিবা করেছে নাকি দিবাই পরিমনি- সত্যি বলতে আমি বুঝিনি। এতো সহজাত অভিনয় করেছে সে, সিনেমা দেখার সময় সেটি দর্শকেরাই বুঝতে পারবে। 

অন্যদিকে মম আমার দীর্ঘদিনের ভীষণ প্রিয় সহকর্মী এবং খুব ভালো বন্ধু। তার সাথে কাজ করতে সবসময়ই ভালো লাগে। দেশের অন্যতম দক্ষ একজন অভিনেত্রী সে এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমাতে ওর দুর্দান্ত অভিনয় দেখতে পাবে দর্শক। আর শ্যামল এই সময়ের  সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অভিনেতা। ফোকাসটা ঠিক রেখে কাজ করে গেলে সে অনেক অনেক দূর যাবে এটা নিশ্চিত। সামনে সোনালী সময় তার জন্য যদি সে বেছে বেছে কাজ করে। 

প্রশ্ন- ‘স্ফুলিঙ্গ’ দুটো আলাদা সময়কে তুলে ধরেছে। এই সময়ের দর্শকদের কাছে ‘স্ফুলিঙ্গ’ কতটা সফলতা বা জনপ্রিয়তা পাবে বলে মনে করেন? 

রওনক হাসান- একটা সিনেমার মূল স্তম্ভ কিন্তু একজন পরিচালক। আমাদের সিনেমার প্রধান ব্যক্তি তৌকির ভাই। তিনি এমন একজন নির্মাতা যিনি অনেক কঠিন একটি গল্প ভীষণ সহজ করে বলতে পারেন। সেই দিক থেকে ‘স্ফুলিঙ্গ’ সফল ও জনপ্রিয় হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। কারন এই সময়ে সিনেমাপ্রেমীরা এই গল্পের সাথে রিলেট করতে পারবেন, এটা কিন্তু একটা সিনেমার জন্য অনেক বড় বিষয়। অবশ্য এখন তো একটি ভালো বা মানসম্মত চলচ্চিত্র এবং সেটির ভবিষ্যৎ অনেকটাই প্রচার-প্রচারণা, সিনেমা হল সহ আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তবে আমি আশাবাদী দর্শকরা হতাশ হবেন না। 

স্ফুলিঙ্গ মুক্তি পাবে আগামী ১৯শে মার্চ, এর আগে ১৭ই মার্চ আয়োজিত হবে বিশেষ প্রদর্শনীর। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা