লিস্টের অনেক সিনেমা অনেকে ইতিমধ্যে দেখে ফেলছেন, কিছু হয়ত বাদ থাকতে পারে। মোটামুটি বেশ কয়েকটা ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। এই তালিকার অনেক সিনেমা অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে, সমস্যা নেই তাতে। ভালোবাসাটা বজায় থাকুক, সেটা বেশি দরকার...

এই লিস্টের অনেক সিনেমা অনেকে ইতিমধ্যে দেখে ফেলছেন, কিছু হয়ত বাদ থাকতে পারে। মোটামুটি বেশ কয়েকটা ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। এই লিস্টের অনেক সিনেমা অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে, সমস্যা নেই তাতে। ভালোবাসাটা বজায় থাকুক, সেটা বেশি দরকার। 

১. দ্য বিগ সিক

রমকম জনরার অন্যতম সেরা সিনেমা। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন কমেডিয়ান আর একজন আমেরিকান নারী যখন একজন আরেকজনের প্রেমে পড়ে যায়, তখন নিজেদের আলাদা সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য তাদের দুইজনকে কীসের মাঝ দিয়ে যেতে হয়- তা নিয়েই সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে। বেশিরভাগ ব্যাপারই খুব সারকাস্টিক উপায়ে দেখানো হয়েছে। সিনেমার কাহিনী সিনেমার মূল চরিত্র কুমেইল নানজিয়ানির রিয়েল লাইফের উপরে বেজ করে লেখা। নারী চরিত্রে জোই কাজান আর তার দুইজন অভিভাবক অসামান্য অভিনয় করেছেন। 

২. ৯৬

খুবই পছন্দের একটি তামিল রোমান্টিক সিনেমা। ২২ বছর পর একটি হাইস্কুল রিউইউনিয়ন পার্টিতে একসময় হৃদয়ের বন্ধন ছিল- এমন দুইজন মানুষের হুট করে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। এরপরের তারা দুইজন একটা রাত কীভাবে কাটান, কীভাবে স্মৃতি রোমন্থন করেন, কীভাবে নিজেদের আবেগকে সামলান- তাই নিয়েই সিনেমার কাহিনী। এক অর্থে এই সিনেমাকে ইন্ডিয়ার before sunrise বলা যায়, যদিও দুইটা সিনেমার ট্রিটমেন্ট সম্পুর্ণ আলাদা। বিজয় সেথুপাতি আর তৃষা দুইজনেই যার যার চরিতে অনবদ্য। আলাদা করে বলতে হয় গোভিন্দ ভাসান্থার মিউজিকের কথা। 

সিনেমার নাম ৯৬

৩. ইন দ্য মুড ফর লাভ

ওয়াং কার ওয়াই এর বিখ্যাত সৃষ্টি। সর্বকালের অন্যতম সেরা রোমান্টিক সিনেমার একটি ধরা হয় এই সিনেমাটিকে। এই সিনেমা ফেস্টিভ্যালে দেখার পর আরেক বিখ্যাত ডিরেক্টর আলেহেন্দ্রো ইনারিতু প্রায় ১০ মিনিটের মত এতটাই মোহাবিষ্ট ছিলেন যে সাগরের তীর ঘেঁষে হাঁটার সময় তার মাথায় এই সিনেমার আবেশ ছাড়া অন্য কোন কিছুই ছিল না। একটি সিনেমা সব ডিপার্টমেন্টে পারফেক্ট হলে তখনি ইন দ্য মুড ফর লাভের মত সিনেমা তৈরি হয়। 

৪. দ্য বিফোর ট্রিলজি

Before sunrise, Before sunset, Before midnight – এই তিন সিনেমা নিয়ে বিফোর ট্রিলোজি। যেহেতু আজ ভালোবাসার দিন আর ভালোবাসার এই সময়টায় এই ট্রিলজির চেয়ে চমৎকার সিনেমা আর হয় না, তবে তিন নম্বর সিনেমাটা আপাতত না দেখলেই ভাল হবে। দেখলেও এক সপ্তাহ পরে দেখা উচিত কারণ সেটা প্রথম দুটোর চেয়ে একদম আলাদা। দুইজন মানুষের কথোপকথন কতটা সুন্দর, ডিপ, দার্শনিক হতে পারে- তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে বিফোর ট্রিলজি। 

৫. অ্যানি হল

উডি এলেনের ম্যানহাটন সিনেমার চেয়ে এনি হল আমার কাছে বেশি পছন্দের। উডি এলেনের সিনেমা যেমন হয়, তেমনই এই সিনেমা। সবচেয়ে কম রান টাইমে অস্কার পাওয়া সিনেমার মাঝে এটি দ্বিতীয়। মাত্র ৯৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই সিনেমাটি সেই বছরের অস্কার জিতে নেয়। একটুর জন্য ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া ৯১ মিনিটের অস্কারজেতা সিনেমা Marty এর রেকর্ড ভাংতে পারেনি। 

৬. বীর-জারা

রোমান্টিক সিনেমার লিস্টে শাহ্রুখ খানের একটা সিনেমা না থাকলে চলে? তার এতসব রোমান্টিক সিনেমার ভিড়ে ভিরজারাকেই বেছে নিলাম। স্যাক্রিফাইস জিনিসটা আসলেই কী- সেটার উত্তর ভিরজারা দেখলে টের পাওয়া যায়। নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য ২২ বছর কোন অপরাধ ছাড়া জেলে কাটিয়ে দেয়া – এমন প্রেমিক পুরুষ এই যুগে সম্ভবত আর দেখা যাবে না। 

বীর জারা সিনেমায় শাহরুখ খান ও প্রীতি জিনতা

৭. দ্য লাভার্স অন দ্য ব্রিজ

আমার দেখা অন্যতম ইউনিক একটা সিনেমা। ফ্রেঞ্চ সিনেমা। সংলাপ খুবই কম এক অর্থে। ভিজুয়াল স্টোরিটেলিং বেশি। দুইজন মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই দেখে তারা একটা ব্রিজে আশ্রয় নেয় আর এরপরে তাদের চোখ দিয়ে আমরা দুনিয়া দেখি। খুবই অন্যরকম একটা সিনেমা আর এটি দেখার পর এই পরিচালকের অন্যান্য সিনেমার সম্পর্কে জানার জন্য আপনি একবার হলেও গুগলের দ্বারস্থ হবেন। 

৮. অনলি লাভার্স লেফট অ্যালাইভ

দুইজন ভ্যাম্পায়ার আধুনিক একটা সমাজে কীভাবে এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসের মুখোমুখি হচ্ছেন, কীভাবে নিজেদের পায়ের নিচে এক টুকরো মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন- তাই নিয়ে এই সিনেমার কাহিনী। প্রধান চরিত্রে দুইজন অভিনেতা, অভিনেত্রীর কাজ মুগ্ধ করার মত। এত স্টাইলিশ আর এত কুল ভ্যাম্পায়ার আপনি এর আগে কোথাও দেখেন নাই- সিনেমার দেখার পর এটাই মনে হবে। ভ্যাম্পায়ারদের ভালোবাসা এত ইউনিক হতে পারে, এই সিনেমা দেখার আগে চিন্তা করিনি। 

৯. কেয়ার/অফ কাঞ্চারাপালেম

চারটি প্রেমের গল্প নিয়ে অসাধারণ এক তেলুগু সিনেমা। সিনেমাতে প্রায় ৮০ জনের মত মানুষ অভিনয় করেছেন আর তাদের বেশিরভাগই এর আগে জীবনে অভিনয় করেন নি- অথচ দর্শক হিসেবে দেখার সময় তা আপনার একবারও মাথায় আসবে না। সিনেমার প্রোডিউসার একজন নারী আর তিনিও এই সিনেমার অন্যতম প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চারটি গল্প শেষে এসে যেভাবে মিলে, সেটা দেখার পর একই সাথে আপনার মুখে হাসি আর চোখে হালকা জল থাকবে। 

১০. বারান

ইরানের বিখ্যাত ডিরেক্টর মাজিদ মাজিদির অন্যতম সেরা সিনেমা। তার পরিচালিত পঞ্চম সিনেমা এটি। ১৭ বছরের শিশুশ্রমিক লতিফ একদিন জানতে পারে, যেখানে সে কাজ করে সেখানে প্রায় তারই কাছাকাছি বয়সের রহমত নামের আরেকটি ছেলে কাজ নিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, রহমত তার চেয়েও ভাল কাজ করে যা ভবিষ্যতে লতিফের পেটে লাথি মারার শামিল। একদিন হুট করে লতিফ আবিষ্কার করে, রহমত আসলে ছেলে না, একজন মেয়ে। এরপরেই শুরু হয় এক অদ্ভুত প্রেমের গল্প। পুরো সিনেমাতে মেয়ে চরিত্রে অভিনয়কারী মানুষটি একটিও সংলাপ উচ্চারণ না ক্রএ যে অভিনয় দেখিয়েছে, সেটা মাজিদ মাজিদির সিনেমার বলেই হয়ত সম্ভব। 

সবাইকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা