তিন মিনিট ষোলো সেকেন্ডের এই ট্রেলারে কী নেই? দারুণ এক গল্প, জমকালো সিনেম্যাটিক ব্রিলিয়ান্স, দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, দারুণ অ্যাকশন সিকোয়েন্স, অনসম্বল কাস্টের দোর্দণ্ডপ্রতাপময় উপস্থিতি... সবই সরবে উপস্থিত এখানে। সাড়ে তিনশো কোটির 'ট্রিপল আর' যে সবকিছু চুরমার করার জন্যেই হাজির হয়েছে, তা আগে থেকেই জানা ছিলো। এবং তিন মিনিটের এ ট্রেলার যেন সেই চুরমারের প্রাথমিক মঞ্চ হিসেবেই হলো হাজির!
এস এস রাজামৌলির সিনেমা মানেই যে অন্যরকম এক সিনেম্যাটিক এক্সপেরিয়েন্স, তা জনতা-জনার্দন সবারই জানা। 'বাহুবলি'ই বলি কিংবা 'মাগাধিরা'... সিনেমার গল্পে চমক তো থাকেই, নির্মাণও এতটাই অনবদ্য হয়, অবাস্তব জিনিসপত্রকেও বাস্তব বলে ভ্রম হয়। স্টানিং সব ভিজ্যুয়াল অ্যাসথেটিকস নিয়ে নিয়মিত খেলাধুলা করেন বলেই রাজামৌলির সিনেমাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় বারবার। এবং ঠিক সে কারণেই হয়তো 'ট্রিপল আর' নিয়ে সবার প্রত্যাশার পারদ দ্যুলোক-ভূলোক ছেদ করে অন্তরীক্ষের ওপারে স্থির হয়েছিলো। এমনিতেও মহামারীর থাবায় প্রেক্ষাগৃহের পলেস্তারা খসে খসে মেঝেতে জমে সয়লাব। এরকম এক সময়ে খানিকটা চমক না এলে ঠিক খোলতাই হতো না মোটেও। চমকের সে দায়িত্বই যেন চলে আসে রাজামৌলির কাঁধে। পাশাপাশি 'ট্রিপল আর' নিয়েও প্রত্যাশা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। সদ্য মুক্তি পাওয়া এ সিনেমার ট্রেলার সেই প্রত্যাশার কতটুকু কী পূরণ হলো, সে প্রসঙ্গে আসবো। কিন্তু শুরু করি ভিন্ন আরেক প্রসঙ্গ টেনে।
সাউথের মধ্যে রাজামৌলিই বোধহয় একমাত্র পরিচালক, যিনি খুব প্রফেশনালি সিনেমার শুরু থেকে শেষটা সামলান। খুব হিসেবনিকেশ করে শুটিং, শুটিং শেষে প্রমোশন, মার্কেটিং...এসব বিষয় তিনি যতটা পরিকল্পনা নিয়ে করেন, তেমনটা আর কারো ক্ষেত্রে সেরকম একটা চোখ পড়েনি। 'ট্রিপল আর' এর কথাই ধরা যাক। সিনেমার ট্রেলার মুক্তির আগে বেশ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে টিজার, গান, টুকরো টুকরো গ্লিম্পস শেয়ার করা হলো। প্রতিটি কন্টেন্ট ছাড়ার পরে রাজামৌলি কিছুটা করে সময় দিলেন। যাতে এসব নিয়ে শোরগোল হয়। কড়চা হয়। কথাবার্তা ঠিক যখনই একটু স্তিমিত হচ্ছে, তিনি আবার আরেকটা কিছু আনলেন। আলোচনার টেবিল চাঙ্গা করলেন। নির্মাণ যতই দারুণ হোক, পরিচালক যতই তুখোড় হন, মার্কেটিং ভালো না হলে যে দর্শকের পালস ধরে রাখা যায় না, সেটা রাজামৌলির চেয়ে আর কেউ ভালো জানেন কী? বোধহয় না।
পালস ধরে রাখার এই কাজটি তিনি 'ট্রিপল আর' এর ট্রেলারেও করলেন। সকালেই ভারতের বিশেষ কিছু সিনেমাহলে এই সিনেমার ট্রেলার রিলিজ করা হয়েছিলো৷ অনলাইনে ট্রেলার আসার কথা ছিলো বিকেলে। কিন্তু সিনেমাহলে ট্রেলার মুক্তির পর এতটাই হাইপ তৈরী হয়, সিনেমাহল থেকে রেকর্ডেড ভিডিও হয়ে অনলাইনে এসে মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। অগত্যা, সময়ের আগেই অনলাইনে আসে রাজামৌলির 'ট্রিপল আর' এর ট্রেলার। এবং ট্রেলার দেখে এটা বোধহয় দ্ব্যর্থকভাবে বলাই যায়, অন্তরীক্ষ-চুম্বী প্রত্যাশাকে একবিন্দুও অশ্রদ্ধা না করেই বরং মূল নির্মাণ নিয়ে কয়েকগুণ প্রত্যাশা বাড়িয়েছে এই ট্রেলার!
আলুরি সীতারাম রাজু এবং কোমারাম ভীম...এই দুইজন মানুষ তেলেগুতে সর্বজনশ্রদ্ধেয়। তেলেগু স্বাধীনতাযুদ্ধের বিশেষ এই দুইজন নির্ভীক যোদ্ধাকে সামনে রেখে ১৯২০ এর ভারতের প্রেক্ষাপটে শুরু হয় গল্প। গল্পের শুরুতেই যেমন আমরা দেখি, ব্রিটিশ এক অফিসার তুলে নিয়ে গিয়েছেন 'গণ্ড' গোত্রের এক মেয়েকে। জানা যায়, এই 'গণ্ড' গোত্রের রক্ষাকর্তা কোমারাম ভীম। যিনি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবের সম্মুখসারির নেতাও। 'বিপ্লবী ভীম' চরিত্রে এন.টি রামা রাও জুনিয়র এর এন্ট্রিটাও হয় দুর্দান্ত। হিংস্র বাঘের উদ্যত গর্জনের মুখোমুখি হয়ে চোখে চোখ রেখে পালটা হুঙ্কার... রাজামৌলির সিনেম্যাটিক অ্যাসথেটিজম এর তখন থেকেই শুরু। কিছুক্ষণ পরে পর্দায় আবির্ভূত হন আলুরি সীতারাম রাজু। যিনি ব্রিটিশরাজের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ব্রিটিশবিরোধী যেকোনো আন্দোলনক দমন করার জন্যে বিশেষভাবে রাখা হয়েছে যাকে।
এদিকে ভীম ব্রিটিশরাজকে আক্রমণ করার জন্যে প্রস্তুত, ওদিকে রাজু, ভীমের এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে পালটা আক্রমণ করতে প্রস্তুত। দুইজন মুখোমুখি। দ্বৈরথের সমূহ সম্ভাবনা। এরইমধ্যে জানা যায়, ভীম এবং রাজু দুইজন ভালো বন্ধুও৷ দুজনের বন্ধুত্বের টুকরো টুকরো স্মৃতি চলে আসে সামনে। এককালের প্রগাঢ় বন্ধুত্বে ফাটল হিসেবে আসা 'ব্রিটিশ প্রশাসন' তাদেরকে দাঁড় করায় মুখোমুখি। গল্পে যুক্ত হয় আরো কিছু চরিত্র। 'সীতা' চরিত্রে আলিয়া ভাট এবং বিশেষ আরেক চরিত্রে অজয় দেবগন আসেন সম্মুখে৷ 'স্কট' চরিত্রে রে স্টিভেনসনের এন্ট্রিও হয় খোলতাই। ক্রমশ এই ঐতিহাসিক আখ্যানে যুক্ত হয় অ্যাকশন, সাসপেন্স, ড্রামা।
তিন মিনিট ষোলো সেকেন্ডের এই ট্রেলারে কী নেই? দারুণ এক গল্প, জমকালো সিনেম্যাটিক ব্রিলিয়ান্স, দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, দারুণ অ্যাকশন সিকোয়েন্স, অনসম্বল কাস্টের দোর্দণ্ডপ্রতাপময় উপস্থিতি... সবই সরবে উপস্থিত এখানে। সাড়ে তিনশো কোটির 'ট্রিপল আর' যে সবকিছু চুরমার করার জন্যেই হাজির হয়েছে, তা আগে থেকেই জানা ছিলো। এবং তিন মিনিটের এ ট্রেলার যেন সেই চুরমারের প্রাথমিক মঞ্চ হিসেবেই হলো হাজির! এবং এই ট্রেলার এটাই বোঝালো, মাতামাতি সবেমাত্র শুরু। এখন এই মাতামাতি কোথায় গিয়ে শেষ হবে, সেটাই হবে প্রধানতম আগ্রহের বিষয়। পাশাপাশি রাজামৌলি তাঁর বিগত সব নির্মাণের চমৎকারিত্বে কর্মাশিয়াল সিনেমাকে যে উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন, 'ট্রিপল আর' সে উচ্চতাকে ছুঁতে পারবে নাকি টপকে যাবে অবলীলায়..সেটা নিয়েও হবে বিস্তর জলঘোলা। রাজামৌলি, রাম চরণ এবং রামা রাও জুনিয়র...এই তিন 'আর' মিলে পর্দায় আর কী কী করবেন, সেটাই এখন বড়সড় প্রশ্ন।