দারুণ অভিনয় করেন, গানের প্রতিভাও ভালো, দুটো বই লিখেছেন; এসবের পাশাপাশি ঈশিতা একজন শিক্ষকও। মাঝের অনেকটা সময় অভিনয়ে নিয়মিত ছিলেন না তিনি, তবুও আজও কমেনি তার জনপ্রিয়তা...

১৯৮৮ সালে জনপ্রিয় প্রতিভা অন্বেষণ মূলক অনুষ্ঠান 'নতুন কুড়ি'তে শিশুশিল্পী হিসেব 'ফেলানী' চরিত্রে তার অসাধারন অভিনয় দেখে কান্না ধরে রাখতে পারেননি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শিশুশিল্পী হিসেবে জয় করেন 'নতুন কুড়ি' তে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। সাধারন মানুষের কাছেও জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তারপরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাবার। বলা হচ্ছে ঈশিতার কথা, পুরো নাম রুমানা রশীদ ঈশিতা। 

ছোট্ট বেলার দারুন জনপ্রিয় এই শিশুশিল্পী পরিণত বয়সে এসেও তিনি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা এবং খ্যাতি লাভ করেছেন। সব শ্রেনীর মানুষের কাছেই মিষ্টি মেয়ে হিসেবে নিজেকে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ঈশিতা। ইমদাদুল হক মিলনের রচনায় ও ফখরুল আবেদীনের পরিচালনায় 'দু'জনে' নাটক ছিল তার প্রথম অভিনীত নাটক। তারপরে একে একে আপনাঘর, চক্রবলয়, দেখা, সাদাপাতায় কালো দাগ, দুজনে, তিথি, থাকা না থাকার মাঝখানে, কাগজের গল্প, আমাদের গল্প, পাতা ঝরার দিন সহ অসংখ্যা জনপ্রিয় নাটকে কাজ করেছেন ঈশিতা। 

মাঝের অনেকটা সময় অভিনয়ে নিয়মিত ছিলেন না তিনি, তবুও আজও তার জনপ্রিয়তা অসামান্য। অভিনয়ের পাশাপাশি মডেল, গায়িকা, নৃত্যশিল্পী এবং লেখিকা হিসেবেও নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মডেল হিসেবেও অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন ঈশিতা। বিশ্ববিখ্যাত বিউটি সোপ 'লাক্স' এর মডেল হয়েছেন তিনি। ৭টি গানের অ্যালবাম রিলিজের পাশাপাশি দুটি বই লিখেছেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। 

তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখন মিডিয়াতে কাজ করেন খুবই বেছে বেছে। শিক্ষকতা এবং সংসার সামলে যদি কোনো গল্প মন ছুয়ে যায় তবেই দেখা মিলে এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর। তার ভক্তদের জন্য তার নতুন কোন কাজ যেনো তীব্র গরমে এক পশলা বৃষ্টি। কারন পর্দায় ঈশিতা মানেই ভিন্নকিছু, ঈশিতা মানেই চমৎকার গল্প আর দক্ষ অভিনয়ে ডুব দেয়ার সুযোগ। এবার ঈদে দুটি টেলিফিল্মে দেখা যাবে এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে। একটি টেলিফিল্মের নাম ‘কেন’। অন্যটি ‘ইতি মা’। ঈদ উপলক্ষে প্রচারের অপেক্ষায় থাকা টেলিফিল্ম দুটির শ্যুটিং অবশ্য সম্পন্ন হয়েছে করোনা সংক্রমণের আগে।

রুমানা রশীদ ঈশিতা

২০১৮ সালে রেদোয়ান রনি'র পরিচালনায় 'পাতা ঝরার দিন' নাটকের মধ্য দিয়ে প্রায় চার বছরের বিরতি দিয়ে ফিরেছিলেন ঈশিতা। এই নাটকে অসাধারন অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নতুন করে আবারো আলোচনায় আসেন ঈশিতা। বলা যায় অভিনেত্রী হিসেবে যেন পূর্ণজন্ম হলো তার এই নাটকটির মধ্য দিয়ে। সব শ্রেনীর দর্শকদের প্রশংসা আর শুভেচ্ছার পাশাপাশি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর সমালোচক পুরস্কারও লাভ করেন তিনি এই নাটকে অসাধারণ অভিনয় উপহার দিয়ে। এরপর ২০১৯ সালে সচেতনতামূলক নাটক ‘আগুনের নোনাজল’-এ অভিনয় করেছিলেন তিনি। ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে নির্মিত এই নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। 

করোনার মাঝেও গতবছর ঈদে দুটি টেলিফিল্মে দেখা গেছে এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে। একটি টেলিফিল্মের নাম ‘কেন’। অন্যটি ‘ইতি মা’। দুটি টেলিফিল্ম সেবারের ঈদ আয়োজনের সেরা নির্মানের লিষ্টে এবং বরাবরের মতো আবারো প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ‘ইতি মা’ টেলিফিল্মে মধ্যবিত্ত পরিবারের এক বড় মেয়ের চরিত্রে তার অসাধারন অভিনয় মন ছুয়েছে সবার। এই দুটি কাজ করেই ঈদের সেরা অভিনেত্রীদের লিষ্টে সবার উপরে তিনি। অবশ্য ঈদ উপলক্ষে প্রচারিত এই টেলিফিল্ম দুটির শ্যুটিং অবশ্য সম্পন্ন হয়েছে করোনা সংক্রমণের আগে।

একই ধারাবাহিকতায় এবছর কোরবানির ঈদে মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিকশন ‘নট আউট’ এ তিনি মূল ভূমিকায় মুগ্ধ করেছেন। মা, ভাই এবং ছোট মেয়েকে নিয়ে আর জীবন যুদ্ধের গল্প ছুয়ে যায়নি এমন দর্শকের দেখা মেলা মুশকিল। ওয়াহিদা মল্লিক জলির মতো দক্ষ এবং খায়রুল বাসারের মতো নবীন মেধাবী অভিনয় শিল্পীদের ছাপিয়ে গিয়ে নিজের চরিত্রে মিশে যাওয়া এবং সেটা সুনিপুণ ভাবে উপাস্থাপন করা চাট্টিখানি কথা নয়। ঈশিতা এই কাজটিই করলেন খুব সহজে আর সাবলীলভাবে।

করোনা পরিস্থিতির কারনে ইদানিং তেমন কোনো কাজ করছেন না ঈশিতা। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, যে নাটকগুলো গতবছর ঈদ বা বিশেষ দিনে রিলিজ পেয়েছে সেসব নাটকগুলোর শুটিং শেষ করেছেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে। তখন কোনো দুর্যোগ ছিল না। এই বছরের কাজটিও সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করা হয়েছে। ঈশিতা বলেছেন- ‘একজন অভিনয় শিল্পী হিসাবে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তার কখনোই কমেনি। অভিনয়ের প্রতি ভেতর থেকে এক ধরনের টান অনুভব করি। তবে গল্প ও চরিত্র নিয়ে আমি সিরিয়াস। এ ব্যাপারে আমি বেশ খুঁতখুঁতে। ভালো গল্প ও চরিত্র দেখে লোভ সামলাতে পারি না। তেমনি গল্প ও চরিত্র ভালো না লাগলে কাজে আগ্রহ পাই না।’

ছেলের সঙ্গে ঈশিতা

আমাদের প্রার্থনাও এটাই যে, সংখ্যায় কম হলেও ঈশিতা এবং ঈশিতার মতো গুনী অভিনেত্রীদের যেনো মানে কোনো কম্প্রোমাইজ না করতে হয়। কারন আমরা পরিবার বা কাছের বন্ধু তথা এই সময়ের অনেক দর্শক যারা অভিনেত্রী ঈশিতাকে সেভাবে জানেনা তাদেরকেও বলতে পারি, পর্দায় একজন ঈশিতা হাজির হওয়া মানেই ভিন্ন কিছু। গতানুগতিকের বাইরে এসেই অভিনয় দক্ষতার যে প্রদর্শনী দেখার সৌভাগ্য মিলে কয়েকজন প্রকৃত শিল্পীর মাধ্যমে তাদের মাঝে অন্যতম নাম ঈশিতা।

অভিনয়ের পাশাপাশি সংগীতেও বেশ সমাদৃত ঈশিতা। তবে অভিনয়-গান কোনোটিই নিয়মিত নন তিনি। সংসার এবং সন্তানদের নিয়েই তার বর্তমান জীবন। সর্বশেষ ‘আমার অভিমান’ নামে একটি গানের কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। মিডিয়ায় কাজের পাশাপাশি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করছেন জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। এ জন্য নিজেকে নিয়মিত পড়াশোনার মধ্যে রাখছেন তিনি। পাশাপাশি বাসায় বসে গল্প, উপন্যাস পড়া এ ক্লাসিক্যাল সিনেমাও দেখা হচ্ছে তার। আর গানের চর্চা তো নিয়মিত করছেনই। নিজের ছেলেকেও এ চর্চা করাচ্ছেন বলে জানান ঈশিতা।  

লকডাউনে বাসায় পরিবারের সাথেই সময় কাটিয়েছেন তিনি। জীবনের অনেক নিয়ম বা বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে এই সময়টায়। এমনকি জীবনকেও নতুন করে বোঝার বা জানার সুযোগ মিলেছে। ঈশিতাও এই লিস্টের বাইরের কেউ নন। কিছু পরিবর্তন এসেছে তার জীবনেও। করোনা পরিস্থিতিতে বাসায় থেকেই মাঝে মাঝে কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন, কোন গল্পের বই পড়ছেন সেটি যেমন ভক্তদের সাথে শেয়ার করেছেন তেমনি জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য বিভিন্ন বার্তা নিয়ে হাজির ও হয়েছেন তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

নাটকে এখন নিয়মিত না হলেও আগামীতে তার ভক্তদের আকাঙ্ক্ষা এবং নিজের অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা চিন্তা করে মাঝেমাঝেই ভিন্নধর্মী কাজ নিয়ে হাজির হবেন টেলিভিশনের পর্দায় এটাই কামনা। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো এই গুনী অভিনেত্রীর জন্য। সামনে মানসম্মত কাজ দিয়ে নিজেকেই নিজে ছাড়িয়ে যাবেন ভক্ত হিসেবে এটাই প্রত্যাশা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা