সালেহ আহমেদ: প্রচারের আলোর বাইরে থাকা অসাধারণ এক অভিনেতা
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

বহুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন, কারো সাথেই সেভাবে যোগাযোগ ছিল না। অভিনয়ের কৃতিত্বস্বরূপ কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মানই পাননি, অথচ প্রাপ্য ছিলেন...
'ইয়াহিয়া খানের ছবি টাঙ্গাই থুইছি, প্রতিদিন একবার করে থু মারি। থু মাইরা কাঁচটারে সাফ করি'!
হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা 'আগুনের পরশমণি' সিনেমায় আবুল হায়াতের সঙ্গে সেই বৃদ্ধ দোকানদারের কথা নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে, যিনি স্বল্প অভিব্যক্তিতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন উনার দেশপ্রেম। কিংবা বাংলা নাটকের ইতিহাসে সেই যুগান্তকারী ধারাবাহিক নাটক 'কোথাও কেউ নেই' নাটকের সেই দারোয়ান, যার মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছিলেন বাকের ভাই। তার মিথ্যা খুনের দায়ে ফাঁসি হয়েছিল বাকের ভাইয়ের। মুদিওয়ালা, দারোয়ান থেকে স্কুল শিক্ষক, পুলিশ অফিসার সহ নানা চরিত্রে অভিনয় করে যিনি নিজেকে প্রতিষ্টা করেছিলেন, তিনি আমাদের সবার প্রিয় অভিনেতা 'সালেহ আহমেদ'।
'তুমি কি প্রাইভেটে গান করো?' - উড়ে যায় বকপক্ষীর ধারাবাহিক নাটকে শাওন কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। শ্রাবণ মেঘের দিন সিনেমায় ছিলেন শাওনের বাবার চরিত্র, কন্যাবৎসল বাবা ছিলেন। মৃত্যুপথযাত্রী শাওন কে যখন নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন পাড়ে বসে 'মা কুসুম' বলে যেভাবে আর্তনাদ করেছিলেন, তা সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছিলেন। হাবলঙ্গের বাজারে নাটকে পাগলাটে এজাজুল ইসলামের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তার মুখে 'বাবা আব্দুল মজিদ' সংলাপ টি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
ছাত্রবস্থা থেকে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেও ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবী। অবসর গ্রহণের পর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের পর অভিনয়ে নিয়মিত হন। 'অয়োময়'-তে স্বল্পব্যপ্তির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তবে আলোচনায় আসেন কোথাও কেউ নেই ও আগুণের পরশমণিতে অভিনয়ের পর থেকে। হুমায়ূন আহমেদের সাথেই বেশি কাজ করেছেন, সবুজ ছায়া, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, বাদল দিনের কদম ফুল, পিশাচ মকবুল, জইতরী, বনুর গল্প সহ আরো অনেক নাটকে।

হুমায়ূন আহমেদের বাইরে সালাউদ্দিন লাভলুর ও অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে বউ, বংশে রক্ষে অন্যতম। রেদোয়ান রনির 'বাইসাইকেল' ও বিশেষ দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন। এছাড়া অভিনয় করেছেন তৌকীর আহমেদের জয়যাত্রা, রুপকথার গল্প সিনেমায়।
নাটক ও সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করা এই গুণী অভিনেতা গত বছর আজকের এই দিনে চলে গেছেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। বহুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন, কারো সাথেই সেভাবে যোগাযোগ ছিল না। বছর চারেক আগে চ্যানেল আই উনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ করলে সবার দৃষ্টিগোচর হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুদানও পেয়েছিলেন। অভিনয়ের কৃতিত্ব স্বরুপ কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মানই পাননি, অথচ প্রাপ্য ছিলেন।
মানুষ সালেহ আহমেদ চলে গেছেন, তবে নিজের শিল্পকর্ম দিয়ে তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন, তার আত্মার শান্তি কামনা করি। আজ উনার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।
ওপারে ভালো থাকবেন সালেহ আহমেদ!