
শাহরুখ খানের 'মান্নাত' এ সালমান খানের আচমকা আসাকে অনেকে দেখতে পারেন পাবলিসিটি স্টান্ট হিসেবে, আবার অনেকে একে দেখতে পারেন বন্ধুত্বের স্বরুপ হিসেবেও। যে যা হিসেবেই দেখুক না কেন, সত্যি এটাই, পাশে এসে সাহস যোগানোর এই বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে মানবিকতারই এক সুন্দর দৃষ্টান্ত...
সুপারস্টার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ানকে মাদক গ্রহণের অপরাধে গ্রেফতার করেছে নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো, নেটদুনিয়ার কল্যানে প্রায় সকলেই অবগত বিষয়টি নিয়ে। সন্তান গ্রেফতারের এই সংবাদে স্বভাবতই মুষড়ে পড়েছেন বলিউড বাদশাহ। এবং তার এই দুঃসময়ে তাকে সমর্থন করার জন্যে বলিউডের অনেক শিল্পীই অফলাইনে, অনলাইনে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। যা নিঃসন্দেহে ভীষণ ইতিবাচক এক বিষয়। সংবাদমাধ্যমে, অন্তর্জালে সারাদিন এই ইতিবাচক সংবাদগুলোই দেখছিলাম। তবুও এরমধ্যে নড়েচড়ে বসলাম এক বিশেষ সংবাদে। যখন দেখলাম গভীর রাতে বলিউডের আরেক সুপারস্টার সালমান খান এসেছেন শাহরুখ খানের আবাসস্থল 'মান্নাত' এ। বিপদে বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোর জন্যে।
সারাদিন 'মান্নাত' এ অনেকেই এসেছেন, গিয়েছেন। তবু আলাদা করে সালমান খানের এ আগমন ভালো লাগার পেছনে একগুচ্ছ কারণ আছে। প্রথমত, এই 'মান্নাত' এ বহুবার বহু পার্টির বহু আয়োজনে সালমান খানকে নেমন্তন্ন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো অনুষ্ঠানেই সালমান খান আসেননি। সবিনয়ে প্রত্যেক আমন্ত্রণকে প্রত্যাখান করেছেন। কিন্তু যখনই শাহরুখ খানের কঠিন এক বিপর্যয়, ঠিক তখনই 'বিগ বস' এর বিজি শিডিউল থেকে সময় বের করে তিনি চলে এসেছেন সহযোদ্ধা, প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা বন্ধুকে খানিকটা হলেও সমর্থন দেয়ার জন্যে। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সুরকার ও গায়ক জয় সরকারের এক গানের কিছু লাইন ছিলো এরকম-
সুখের দিনে নাই বা পেলে পাশে
খবর দিও হঠাৎ কান্না পেলে।
সালমান খানের এ উপস্থিতি ক্ষণেক্ষণে গানের এই বিশেষ লাইনদুটিকেই মনে করিয়েছে!

দ্বিতীয়ত, সালমান-শাহরুখ দ্বৈরথ। বলিউডের খানত্রয়ী'র মধ্যে সিনেমা-বক্সঅফিস-ফ্যানবেইজ নিয়ে সবসময়ে এক অলিখিত দ্বন্দ্ব থাকেই। খানদের ভক্তদের মধ্যে প্রকাশ্য রেষারেষি থাকলেও স্বয়ং খানরা সাধারণত সরাসরি বচসায় যান না। তবে প্রত্যক্ষ সমর না হলেও ঠাণ্ডা এক লড়াই থাকেই। এবং এ লড়াইয়ে আমির খান একটু কম সামিল হলেও, বাদবাকি দুইজন অর্থাৎ সালমান ও শাহরুখ বরাবরই সরব। এবং এই সরব সমরের পেছনে রয়েছে কিছু ঘটনাও।
২০০২ সালের দিকে ঐশ্বরিয়া বচ্চন'কে কেন্দ্র করে ঝগড়ার সূত্রপাত হয় দুই খানের মধ্যে। 'চলতে চলতে' সিনেমার শুটিং চলছে তখন। লিড রোলে শাহরুখ এবং ঐশ্বরিয়া। কিন্তু সিনেমার শুটিং চলাকালীন প্রায় প্রতিদিনই সালমান খান গিয়ে উপস্থিত হতেন শুটিংস্পটে। মদ্যপ অবস্থায় বিপত্তি ঘটাতেন। শুটিং এর কাজ পণ্ড হতো। স্বভাবতই শাহরুখ খান বিরক্ত হতেন। এবং তখন থেকেই শাহরুখ-সালমানের সংঘর্ষ শুরু। প্রসঙ্গত বলে রাখি, সিনেমার সেটে সালমানের এ উপদ্রবে বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে ঐশ্বরিয়াকে এই সিনেমা থেকে বাদ দেয়া হয়। এবং তার বদলে নায়িকা হিসেবে নেয়া হয় রানী মুখার্জিকে।
শাহরুখ-সালমানের মধ্যে এরপর থেকে কথা বলা এবং মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিলো বহুদিন। ২০০৮ সালের দিকে ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনের পার্টিতে এই দুই খানের মধ্যে আবার দেখা হয়। স্বাভাবিক কথাবার্তা থেকে বাকবিতণ্ডা, চড়াগলা, সেখান থেকে হাতাহাতি। মারামারি। ফলশ্রুতিতে, দুজনের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি। এই ঘটনার পরে বহুদিন ধরে দুজন দুজনের ছায়াও স্পর্শ করেন না৷ তবে আচমকাই আবার তাদের মধ্যে তৈরী হয় সখ্যতা৷ বাবা সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতে দুইজনের দেখা হয়, হৃদ্যতাপূর্ণ কথাবার্তা হয়। এরপর তো একজনের সিনেমার প্রমোশনেও দেখা গিয়েছে আরেকজনকে। শুধু তাই না, শাহরুখের "জিরো" সিনেমায় যেমন গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স হিসেবে সালমান এসেছেন। সালমানের 'টিউবলাইট'এও দেখা গিয়েছে শাহরুখকে। ক্রমশই দুইজনের মধ্যে বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হয়েছে।

তাই শাহরুখ খানের এরকম এক বিপর্যয়ে সালমান খানের এই যে উপস্থিতি, এটা নিঃসন্দেহে আলাদাভাবে আলোচনার যোগ্য এক বিষয়। সালমান খানের এই কাজকে অনেকে দেখতে পারেন পাবলিসিটি স্টান্ট হিসেবে, অনেকে দেখতে পারেন বন্ধুত্বের স্বরুপ হিসেবে। তবে সত্যিটা এটাই, এই যে পাশে এসে দাঁড়ানো, প্রকৃতপক্ষে এটি মানবিকতারই এক সুন্দর বার্তা। সালমান খান সরাসরি 'মান্নাত' এ না এলেও খুব একটা ক্ষতি হতো না। শাহরুখ খান নিজেই সামলে নিতে পারতেন সব। হয়তো এখনও পারবেন। কিন্তু এই যে একজন প্রধানতম সহযোদ্ধা শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে ছুটে এলেন, যাপিত সব দ্বৈরথ ভুলে পাশে দাঁড়ালেন, কাঁধে হাত রাখলেন...দিনশেষে এগুলোই আপ্ত পার্থক্য। তফাত। শেষে এই সংবাদগুলোই মন ভালো করে দেয়। পাশাপাশি মানবিকতার বার্তায় পরিপূর্ণ করে হৃদয়।