রাজলক্ষ্মী চন্দ্রণ ওরফে 'রাজি'ই কি সামান্থার ক্যারিয়ার বেস্ট পারফরম্যান্স?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' এর দ্বিতীয় সিজন শুরু করেছিলাম মনোজ বাজপেয়ীর উপরে বাজপাখির মতন দৃষ্টি রেখেই। কিন্তু সিজন শেষ করে এটাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, মনোজের মতো, অথবা তার চেয়েও একটু বেশি অনবদ্য অভিনয় যদি কেউ করে থাকেন, তিনি সামান্থা আক্কিনেনি...
'দ্য ফ্যামিলি ম্যান সিজন টু' শুরু করার আগে সিরিজের ক্রিয়েটর রাজ এবং ডিকে'কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো- এবারের সিজনে তুরুপের তাস কে? এই প্রশ্ন শুনে দুইজন তখন মুচকি মুচকি হাসছিলেন। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, দ্য মাইটি 'মনোজ বাজপেয়ী' যেখানে আছেন, সেখানে তুরুপের তাস কে হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও বাতুলতা। তাছাড়া বিভিন্ন ইন্টারভিউয়ে রাজ এবং ডিকে প্রায়শই একটা কথা বলতেন-
মনোজ হচ্ছে শচীন টেন্ডুলকারের মতন। আমরা জানি, তিনি রান করবেনই৷ তাই চিন্তা হয়না৷
তাই 'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' এর দ্বিতীয় সিজনও শুরু করেছিলাম মনোজ বাজপেয়ীর উপরে বাজপাখির মতন দৃষ্টি রেখেই। কিন্তু সিজন শেষ করে এটাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, মনোজের মতন অথবা তার থেকে একটু বেশি অনবদ্য অভিনয় যদি কেউ করে থাকেন, তিনি সামান্থা আক্কিনেনি৷

এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজন নিয়ে আমার বিস্তর অভিযোগ আছে। প্রথম সিজন যে ক্লিফহ্যাঙ্গারে শেষ করা হয়েছে, দ্বিতীয় সিজনে সেটাকে অনেকটাই খেলো করে দেখানো হয়েছে। পলিটিকাল বিষয়গুলো কাটছাঁট করার কারণে সিজনের জৌলুশ কমে গিয়েছে অনেকাংশেই। বিভিন্ন ক্রাইসিস দেখাতে গিয়ে স্ক্রিপ্টও ঝুলে গিয়েছে নানা জায়গায়। তবুও এত সব অভিযোগ স্রেফ উড়ে গিয়েছে সামান্থা'র অভিনয়ের কাছে এসে। এরকম র, ওয়াইল্ড, নাম্ব সোলজারের ভূমিকায় সামান্থা অভিনয় করবেন, আশা করিনি৷ অবশ্য ক্যারিয়ারের মেডেন ডিজিটাল প্রজেক্টে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্যে কম কসরতও করতে হয়নি তাকে। দরজা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকা, কথাবার্তা কমিয়ে দেয়া, তামিল টাইগারদের বিষয়ে প্রচুর ডকুমেন্ট্রি দেখা, পড়াশোনা করা... সবগুলো হোমওয়ার্কই তিনি করেছেন মন দিয়ে। এরপর এসেছেন অভিনয়ে৷ বলাই বাহুল্য, দুর্দান্ত অভিনয়ের বিনিময়ে গোটা উপমহাদেশের প্রশংসাবাক্যেই এখন ভাসছেন তিনি।
অভিনয় তো ভালো লেগেছেই। সামান্থার সম্প্রতি করা ইনস্টাগ্রাম পোস্টও ভালো লেগেছে। তামিল রেবেল 'রাজি' চরিত্রটিকে তিনি উৎসর্গ করেছেন সেসব মৃত মানুষদের উদ্দেশ্যে যারা মারা গিয়েছেন বহুকালব্যাপী চলে আসা অসম যুদ্ধে৷
এই 'অসম যুদ্ধ' মূলত এলাম যুদ্ধ। যে যুদ্ধে শ্রীলঙ্কান আর্মি এবং এলটিটিই (লঙ্কান টাইগার্স অব তামিল এলাম) মুখোমুখি হচ্ছে ১৯৮৩ সাল থেকে৷ কখনোসখনো ইস্তফা দিয়ে এ যুদ্ধ এখন পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে চারবার। এবং এই এলাম যুদ্ধ নিয়ে যদি কিছু ডকুমেন্ট্রি আপনি দেখেন ইউটিউবে, শিউরে উঠবেন নিশ্চিতভাবেই৷ লঙ্কান টাইগার্সদের যেভাবে নিষ্পেষিত করা হয়েছে, সেটা ন্যাক্কারজনক তো বটেই, তীব্র অমানবিকও৷

সেরকমই এক 'এলাম সোলজার' এর চরিত্রে অভিনয় করতে যে পরিমাণ দম, আবেগ এবং নিষ্ঠা থাকা দরকার ছিলো, সেটার পুরোটাই যে নিয়ে এসেছেন সামান্থা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকা উচিত না কারোরই। এই লেখা পড়ার পরে কেউ যদি তামিল টাইগার্সদের ইতিহাস পড়ে এরপর 'রাজি' চরিত্রটিকে আবার দেখেন, আপনার কাছে মোটেও অস্বাভাবিক মনে হবে না চরিত্রটিকে। বরং খুবই প্রাসঙ্গিক লাগবে এই কাটখোট্টা অবয়ব।
সামান্থার দেয়া ইন্সটাগ্রামের বার্তাটির শেষ অংশ যদি খেয়াল করি-
I want Raji’s story to be a stark, much-needed reminder for us, more than ever before, to come together as humans to fight hate, oppression, and greed. If we fail to do so, countless more will be denied their identity, liberty, and their right to self-determination.
সিনেমা-সিরিজের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে এই যে সমাজ-সচেতনতা ও ইতিহাস-মুখিতার চেষ্টা করা হচ্ছে ইদানিং, এই বিষয়টি আজকালের সময়ে খুব প্রাসঙ্গিক। হলফ করে বলাই যায়, 'রাজি' চরিত্রটি দেখার পরে অনেকেই আগ্রহী হয়ে জেনেছেন তামিল টাইগারদের নিয়ে। এটাই এই নির্মাণের সার্থকতা। 'আমরা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী নই' বলা ইতিহাসবিমুখ যে প্রজন্ম গড়ে উঠছে, তাদেরকে আলোকিত করতে হলেও এরকম কাজ, এরকম 'রাজি' দরকার আরো।

নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে 'ঘাম-রক্ত-অশ্রু'র প্রচণ্ড বাস্তব চরিত্রে এরকম অতিমানবীয় অভিনয়ের জন্যে কৃতজ্ঞতা রইলো সামান্থা আক্কিনেনির প্রতি। সে সাথে ধন্যবাদ রইলো 'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' সিরিজের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার জন্যেও। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জিওপলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট নিয়ে যেভাবে ক্রমশই সামনে আসছে তারা, তা অনবদ্য ও ভূয়সী প্রশংসার তীব্র দাবিদার।